অ্যাবটাবাদ আর বালাকোট। আট বছর বাদে পাকিস্তানের দু’টি শহর মিলে গেল এক সূত্রে।
২০১১ সালে এমনই এক ভোররাতে অ্যাবটাবাদে জঙ্গি ওসামা বিন লাদেনকে মেরে ফেলতে আক্রমণ শানিয়েছিল মার্কিন সেনা। আজ অ্যাবটাবাদ থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে বালাকোটে সেই ভোর রাতেই জঙ্গিদের মারতে ভারতীয় বায়ুসেনার অভিযান হল। ধ্বংস করা হল ভারতের অন্যতম মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি মাসুদ আজহারের হাতে গড়া প্রশিক্ষণ শিবির। সেনা কর্তাদের একাংশের দাবি, মারা গিয়েছে শ’তিনেক জঙ্গি। যদিও বিদেশসচিব বিজয় গোখলে সরাসরি এমন কথা বলেননি। বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, এ দিন রাতে সর্বদল বৈঠকে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি জঙ্গি শিবির ধ্বংস করার বিষয়টিতেই জোর দেন। কত জন জঙ্গি এবং কারা নিহত হয়েছে, তা নিয়ে নির্দিষ্ট তথ্য দেননি।
দু’দশকের উপর ভারতের মাথাব্যথার কারণ ছিল বালাকোটের জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরটি। নয়ের দশকে শিবিরটি তৈরি করেছিল হিজবুল মুজাহিদিন। কন্দহর কাণ্ডের পর মুক্তি পেয়ে মাসুদ আজহার শিবিরের দায়িত্ব নেয়। সূত্র বলছে, ২০০১ সালের সংসদ হামলা থেকে পঠানকোট-উরি তথা হালের পুলওয়ামা— জইশের অধিকাংশ হামলার ছক হয়েছিল বালাকোটের শিবিরে বসেই।
খাইবার পাখতুনখোওয়া এলাকায় বালাকোট। ছবির মতো সুন্দর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে কুনহার নদী। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, জনপদ থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে জাবা বলে একটি জায়গায় জঙ্গলে ঘেরা পাহড়ের মাথায় ছিল জঙ্গি শিবিরটি। গোয়েন্দাদের কাছে খবর, পাকিস্তানে জঙ্গি প্রশিক্ষণের অন্যতম বড় ওই শিবিরে একসঙ্গে ছয়-সাতশো জঙ্গি থাকত পারত। বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার। গোলা-বারুদ থেকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সবই অবশ্য বায়ুসেনার অভিযানের নষ্ট হয়েছে হয়েছে বলে দাবি নয়াদিল্লির।
পুলওয়ামা কাণ্ডের পরে ভারতের প্রত্যাঘাতের আশঙ্কায় নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে জঙ্গিদের সরাতে শুরু করে জইশ। কয়েক দিনে কয়েকশো জঙ্গি বালাকোটের শিবিরে আশ্রয় নেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার অপেক্ষায় ছিল জঙ্গিরা। পরে এদেরই ফের সীমান্তে পাঠানো হত।’’ তাই এক ধাক্কায় জঙ্গিদের নিশানা করল ভারত। সূত্রের খবর, প্রশিক্ষক ও জইশের মাথারা বালাকোটের শিবিরে ছিল। হাজির ছিল মাসুদ আজহারের শ্যালক ইউসুফ আজহার, মাসুদের দাদা ইব্রাহিম আজহার, মুফতি আজহার খান কাশ্মীরিরা। নয়াদিল্লির দাবি, বায়ুসেনার অভিযানে বালাকোটের শিবিরটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। তবে পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মহম্মদ কুরেশি বলেন, ‘‘যেখানে ভারত বোমা ফেলেছে, সেখানে জইশের শিবির ছিল না। এ হল ভোটের আগে সরকারের প্রচার।’’
আরও পড়ুন: মোদীর মুখে ‘ভোটের দম’
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, মালভূমির মতো পাহড়ের চূড়ায় কয়েক একর জমিতে বানানো হয়েছিল প্রশিক্ষণ শিবির। প্রশিক্ষকদের অধিকাংশ প্রাক্তন সেনা অফিসার। অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহারে পারদর্শী করে তোলার পাশাপাশি শেখানো হত বিস্ফোরকের ব্যবহার। শুরু থেকেই প্রশিক্ষণ চলত যাতে জঙ্গিদের মনে শত্রু দেশের প্রতি ঘৃণা বাড়তে থাকে। শিবিরের সিড়িগুলিতে আঁকা ছিল আমেরিকা, ব্রিটেন ও ইজরায়েলের পতাকা। শত্রু কারা তা মনে গেঁথে দিতেই ওই ব্যবস্থা। জম্মু-কাশ্মীরের পাহাড়ে তীব্র শীত উপেক্ষা করে লড়াই করা কিংবা চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিশানায় আঘাত করার কৌশল শেখানো হত। জঙ্গিদের চাঙ্গা রাখতে নিয়মিত শিবিরে আসত মাসুদ আজহার।
বালাকোটের এই প্রশিক্ষণ শিবিরের উপর ভারতের পাশাপাশি নজর ছিল আমেরিকারও। ২০০৪ সালে আমেরিকায় গ্রেফতার হয়েছিল হাফিজ কে রহমান নামে এক জঙ্গি। সেখানকার তদন্তকারীরা জানতে পারেন, হাফিজ প্রশিক্ষণ পেয়েছে বালাকোটের ক্যাম্পে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy