Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Oil Import

রুশ তেল নিয়ে জয়শঙ্করের কড়া জবাব ইইউ-কে

রুশ অশোধিত তেল থেকে তৈরি ডিজ়েল-সহ পরিশোধিত জ্বালানি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিক্রি করছে ভারত। এ কারণে ভারতের বিরুদ্ধে ইইউ- এর কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন বোরেল।

An image of Narendra Modi

রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল আমদানি নিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বারবার প্রশ্নের সামনে পড়তে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে। ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৩ ০৭:০৬
Share: Save:

যুদ্ধের বাজারে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল আমদানি।

বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বারবার প্রশ্নের সামনে পড়তে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের চলতি ব্রাসেলস সফরে বিষয়টি ফের সামনে এল। কালই রুশ অপরিশোধিত তেল থেকে ভারতীয় পরিশোধিত তেলজাত পণ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর বিদেশনীতি বিষয়ক কমিটির প্রধান জোসেফ বোরেল। এর পরেই তার কড়া জবাব দিয়ে বিদেশমন্ত্রী তাঁকে কার্যত ইউরোপীয় কাউন্সিলের নিয়মকানুনের পাঠ পড়িয়েছেন।

রুশ অশোধিত তেল থেকে তৈরি ডিজ়েল-সহ পরিশোধিত জ্বালানি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিক্রি করছে ভারত। এ কারণে নিষেধাজ্ঞা মেনে, ভারতের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন বোরেল। তাঁর মতে, ভারত রাশিয়ার বিরুদ্ধে তেল আমদানির নিষেধাজ্ঞাকে প্রকারান্তরে অগ্রাহ্য করছে।

তাঁকে কড়া জবাব দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর। ইইউ-এর শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিককেই ইউরোপীয় কাউন্সিলের নিয়মকানুনের (নিয়ম ৮৩৩/২০১৪) উপর নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী। বলেছেন, “ইউরোপীয় কাউন্সিলের বিধানগুলি দেখুন। সেখানে স্পষ্ট বলা আছে, রুশ অপরিশোধিত তেল তৃতীয় কোনও দেশে উল্লেখযোগ্য ভাবে পরিবর্তিত হলে তাকে আর রুশ তেল হিসেবে বিবেচনা করা হবে না।” কূটনৈতিক শিবিরের মতে, রাজনৈতিক ভাবে বিতর্ক তৈরি হলেও আমদানি-রফতানির জন্য বিদেশি মুদ্রার আয়-ব্যয়ের ঘাটতি বা ‘ব্যালান্স অব পেমেন্ট’ ভারত নিয়ন্ত্রণ রাখতে পেরেছে রাশিয়া থেকে এই তেল আমদানির জন্যই। কারণ, কম বিদেশি মুদ্রা খরচে রাশিয়া থেকে তেল কিনে তাকে শোধন করে, একটা বড় অংশ বিদেশে রফতানি করে বিদেশি মুদ্রা আয়ও হয়েছে।

তিন দেশ সফরের শেষ পর্যায়ে, গত সোমবার ব্রাসেলসে পৌঁছেছেন জয়শঙ্কর। গত রাতে বেলজিয়ামের রাজধানীতে এক বাণিজ্য-প্রযুক্তি আলোচনায় যোগ দেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ভারতীয় প্রতিনিধি হিসেবে বৈঠকে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল এবং কেন্দ্রীয় উদ্যোগ, দক্ষতা উন্নয়ন, ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জোসেফ বোরেলও। এই বৈঠকের আগেই এক সাক্ষাৎকারে বোরেল বলেছিলেন, “ভারত রুশ তেল কেনে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তারা রুশ তেল থেকে তৈরি ডিজ়েলের মতো পরিশোধিত জ্বালানি পণ্য ইউরোপে বিক্রি করবে, এটা ঠিক নয়। এর বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্যবস্থানেওয়া উচিত।”

বৈঠক পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনেই এর জবাব দেন জয়শঙ্কর। সেই সময়ে অবশ্য বোরেল ছিলেন না। তাঁর জায়গায় সাংবাদিক সম্মেলনে অংশ নেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিযোগিতা সংক্রান্ত কমিটির কার্যনির্বাহী সহ-সভাপতি মার্গ্রেথ ভেস্টেগার। জয়শঙ্করের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি শুধু বলেছেন, “নিষেধাজ্ঞার আইনগত ভিত্তি সম্পর্কে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। তবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারত বন্ধু। বন্ধু হিসেবে এই নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। পরস্পরকে দোষারোপ করা ঠিক নয়।”

এর আগে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি করা নিয়েও আপত্তি তুলেছিল ইইউ। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কমানোর জন্য নয়াদিল্লিকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা ধারাবাহিক ভাবে চলছে। তখনও রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির পক্ষে কঠোর যুক্তি দিয়েছিলেন জয়শঙ্কর। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, ইউরোপ এক বিকেলে যে পরিমাণ তেল রাশিয়া থেকে আমদানি করে, ভারত তা করে এক মাসে। ভারতের তুলনায় ইউরোপের দেশগুলির রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ অনেক বেশি, সে সময়ে তথ্য পেশ করে দেখিয়েছিলেন জয়শঙ্কর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Oil Import India-Russia S jaishankar EU
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE