Advertisement
E-Paper

ব্রিটেনে ভিসার কড়াকড়ি, নাজেহাল ভারতীয়রা

অবশেষে ভিসা দেওয়া হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার আগে উস্তাদ আমজাদ আলি খানের ভিসার আবেদন যে ভাবে খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল, তাতে বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছেন ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত। ভারতে ব্রিটেনের হাই কমিশনার ডমিনিক অ্যাসকুইথ এই ঘটনায় যথেষ্ট দুঃখিতও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৬ ০৩:২১

অবশেষে ভিসা দেওয়া হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার আগে উস্তাদ আমজাদ আলি খানের ভিসার আবেদন যে ভাবে খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল, তাতে বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছেন ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত। ভারতে ব্রিটেনের হাই কমিশনার ডমিনিক অ্যাসকুইথ এই ঘটনায় যথেষ্ট দুঃখিতও।

সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠক করেন ব্রিটেনের হাই কমিশনার। সরকারি ভাবে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ বলা হলেও সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে তিনি আমজাদের বিষয় নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন। প্রথমে ভিসা নামঞ্জুর হলেও পরে যে আমজাদকে ভিসা দেওয়া হয়েছে এবং তিনি ১৭ সেপ্টেম্বর রয়্যাল ফেস্টিভ্যাল হলে অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছেন, তা-ও জানান ডমিনিক।

আমজাদ আলি খানের ভিসা নামঞ্জুর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ‘ব্রেক্সিট’ পরবর্তী নতুন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র জমানায় যে ভাবে ভিসা নিয়ে কড়াকড়ি শুরু হয়েছে, তাতে ভারতের অনেকেই সমস্যার মুখে পড়েছেন। ছাত্রছাত্রী, পেশাদার, এমনকী ব্রিটিশ সংস্থার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েও কেউ ব্রিটেনে যেতে চাইলে তাঁকে জটিলতার মুখে পড়তে হচ্ছে।

ব্রিটেনের ভিসার কড়াকড়ি নিয়ে উদ্বিগ্ন মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের বক্তব্য, ভিসার নিয়ম বদল নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক স্তরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। সংসদের অধিবেশনেও নির্মলা এ কথা জানান। বাণিজ্য মন্ত্রকের বক্তব্য, ভারত-ব্রিটেন বাণিজ্যের পরিমাণ ১৪০০ কোটি ডলার। ভিসার কড়াকড়ির ফলে সেই বাণিজ্য ধাক্কা খাবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিদায়ের পরে ব্রিটেনে এখন অর্থনৈতিক রক্ষণশীলতার হাওয়া বইছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে শরণার্থীর পাশাপাশি পূর্ব ইউরোপ ও উন্নয়নশীল দেশগুলি থেকে অভিবাসনে বাধ দিতে চাইছেন। তাঁর লক্ষ্য হল, অন্য দেশ থেকে আসা পেশাদাররা যাতে ব্রিটেনের মানুষের চাকরিতে ভাগ বসাতে না পারেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে ছাত্রছাত্রীরা চাকরির জন্য ব্রিটেনে বেশ কিছু দিন থেকে যাবেন, এই প্রবণতা কমাতেও কড়া ব্যবস্থা নিতে চাইছেন নতুন প্রধানমন্ত্রী। টেরেসা ঘোষণা করেছেন, ব্রিটেনে যত জন চাকরি করতে আসবেন আর ব্রিটেন থেকে যত জন বাইরে চাকরি করতে যাবেন, তার ফারাক তিনি এক লক্ষের নীচে নামিয়ে আনবেন। সেই কারণেই ব্রিটেনে স্বল্পমেয়াদি কাজের ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কড়াকড়ি শুরু হয়েছে। এই কড়াক়ড়ির ফলে ব্রিটিশ অর্থনীতির আখেরে লাভ হবে না ক্ষতি, সে প্রশ্ন অবশ্য উঠছেই। শিক্ষিত ও দক্ষ অভিবাসীরা সে দেশের অনেক ধরনের কাজেই বড় ভূমিকা পালন করেন। তাঁদের সুযোগ না দিলে ভাল কর্মীর অভাব হতে পারে, খরচও বেড়ে যেতে পারে।

তা ছাড়া, কড়াকড়ি করতে গিয়ে মুড়িমিছরির দর এক হয়ে যাচ্ছে। আমজাদের ওয়ার্ক ভিসার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়া তারই নজির। এই ঘটনায় খোদ যুবরাজ চার্লস ক্ষুব্ধ হন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি কিথ ভাজ এর প্রতিবাদ করে সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে জবাবদিহি চান। এতে ভারত-ব্রিটেন সম্পর্কে ধাক্কা লাগবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন কিথ। প্রতিবাদের মুখে এক সপ্তাহের মধ্যেই সিদ্ধান্ত বদলে সরোদিয়াকে ভিসা দেয় ব্রিটিশ সরকার।

কিন্তু বাকিদের হেনস্থা বন্ধ হয়নি। কলকাতার প্রকাশক এষা চট্টোপাধ্যায় যেমন। ব্রিটিশ কাউন্সিলের আমন্ত্রণেই এডিনবরা লিটারেচার ফেস্টিভ্যালে নবীন প্রকাশকদের প্রতিনিধি হিসেবে যেতে গিয়ে তাঁকে ভিসার কড়াকড়িতে পড়তে হয়। শেষ দিনে ভিসা পান তিনি। কলকাতার একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্ণধারের ছেলে ব্রিটেনে পড়াশোনা করতে গিয়েও সমস্যার মুখে পড়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ফি জমা করে দিয়েছেন। অথচ ভিসা পাননি।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, টেরেসা মে মনে করছেন, ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি অভিবাসনের সহজ পথ হয়ে গিয়েছে। তাই কড়া নিয়ম করে, পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর ছাত্রছাত্রীদের কিছু দিন ব্রিটেনে থেকে কাজ করার সুযোগ কমিয়ে দিতে চান তিনি। স্বরাষ্ট্র দফতরের দায়িত্বে থাকার সময়ও একই রকম কড়া মনোভাব নিয়ে চলতেন তিনি। এখন তিনি চান, ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাদের বিজ্ঞাপনে নিজেদের শিক্ষাক্রমগুলিকে ব্রিটেনে চাকরির সুযোগ হিসেবে দেখানো বন্ধ করুক।

United kingdom Visa Migrants Indian
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy