Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Duronto express

দুরন্ত-দুর্ভোগের পর চলন্ত ট্রেনে ফাঁকা অভিযোগ ফর্মে যাত্রীদের সই চাইল রেলরক্ষী বাহিনী! রেল কর্তৃপক্ষ নীরব

সোমবার রাতে ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন পুণে থেকে হাওড়ামুখী দুরন্ত এক্সপ্রেসের যাত্রীরা। হাজারখানেক অযাচিত ‘অতিথি’ গায়ের জোরে উঠে পড়েছিলেন বাতানুকূল ট্রেনের সংরক্ষিত কামরায়।

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:৩৩
Share: Save:

রাত কেটেছে আতঙ্কে কাঁটা হয়ে। তার পর অপেক্ষায় কেটে গিয়েছে সকাল-দুপুর-বিকেল। ১২২২১ পুণে-হাওড়া দুরন্ত এক্সপ্রেসের যাত্রীরা আশা করেছিলেন কেউ অন্তত আসবেন তাঁদের দুর্দশার খবর নিতে। যে রেলের নিরাপত্তায় ভরসা করে পরিবার নিয়ে সফরে বেরিয়েছিলেন, সেই ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ অন্তত এমন ঘটনার দায় এড়াতে পারবেন না। ধারণাটা শেষমেশ বদলাল। বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামতেই দুরন্তের যাত্রীদের কাছে প্রতিনিধি পাঠাল রেল। তবে দুর্দশার খবর নিতে নয়। ‘সাদা কাগজে’ সই নিতে!

সোমবার রাতে ট্রেনের ভিতরে ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন পুণে থেকে হাওড়ামুখী দুরন্ত এক্সপ্রেসের যাত্রীরা। গোটা দেশ যখন দুর্গাপুজোর শেষ দিনের আনন্দে মেতে রয়েছে তখন কলকাতামুখী দুরন্তের যাত্রীরা নাস্তানাবুদ হচ্ছিলেন হাজারখানেক অযাচিত ‘অতিথি’র অত্যাচারে। যাঁরা একরকম গায়ের জোরেই উঠে পড়েছিলেন বাতানুকূল প্রিমিয়াম ট্রেনের সংরক্ষিত কামরায়। তারপর শুরু হয়েছিল তাণ্ডব।

লাঠিসোঁটা হাতে ট্রেনের ভিতর ভাঙচুর করছিলেন মানুষগুলো। তার সঙ্গে চলছিল যাত্রীদের উপর নির্যাতন। অভিযোগ, টিকিট কেটে সংরক্ষণ করা আসন থেকে যাত্রীদের উৎখাত করার পাশাপাশি তাঁদের থেকে খাবার, পানীয় জল, এমনকি গায়ে দেওয়ার কম্বল-চাদরও ছিনিয়ে নিয়েছিলেন তাঁরা। হুমকি দেওয়া হয়েছিল, বেশি প্রতিবাদ করলে ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়ার। এমনকি, জবরদখলকারীদের একাংশ কারও কারও হাতব্যাগ এবং মোবাইল, ছিনিয়ে নেয় বলেও অভিযোগ । রাত ১১টা থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত টানা পাঁচ ঘণ্টা চলে এই অত্যাচার। আর এই সময়ে বহুবার রেলের সাহায্য চেয়েও পাওয়া যায়নি। যাত্রীরা অসহায় হয়ে বার বের চেন টেনেছেন ট্রেনের। আরপিএফ এসে অযাচিতদের নামানোর বদলে ট্রেন চালু করার পরামর্শ দিয়েছে। হেল্পলাইনে ফোন করলে জানানো হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে কিছু করা সম্ভব নয়। পরবর্তী স্টেশনে যা হওয়ার হবে। কিন্তু দুরন্তর পরবর্তী স্টেশনই যে পাঁচ ঘণ্টা পর! তার মধ্যে কারও কিছু হয়ে গেলে?

যাত্রীদের এই প্রশ্ন এবং উদ্বেগের জবাব মেলেনি রেলের তরফে। রেলের কন্ট্রোল রুম, আরপিএফের হেল্পলাইন নম্বর থেকে শুরু করে ভারতীয় রেলওয়ের তথাকথিত ‘সদা সাহায্যে প্রস্তুত’ এক্স(সাবেক টুইটার) হ্যান্ডল, দুর্দশার কথা জানানোর জন্য কোনও দরজাতেই কড়া নাড়তে ছাড়েননি যাত্রীরা। যদিও নিট ফল হাতে আসেনি। শেষে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার পর যখন যাত্রীরা হতাশ এবং বিধ্বস্ত তখন ভারতীয় রেলের দুই মহিলা প্রতিনিধি একটি প্রস্তাব নিয়ে উপস্থিত হন দুরন্তের যাত্রীদের কাছে।

ঘড়িতে তখন সন্ধ্যা ৭টা। পুণে-হাওড়া দুরন্ত এক্সপ্রেস এসে সবে থেমেছে টাটানগর স্টেশনে। ১০ মিনিট এখানেই থামার কথা। এই সময়েই বি-৪ কামরায় এসে ওঠেন আরপিএফের দুই মহিলা কনস্টেবল। ততক্ষণে দুরন্তের যাত্রীদের অসহায় পরিস্থিতির খবর প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার অনলাইন। যাত্রীরা এমনকি, ট্রেনের টিকিট পরীক্ষকও জানিয়েছেন তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। দুরন্তয় সফররত কলকাতার বাসিন্দা রেশমি চৌধুরী এবং কাঞ্চন দাসের সঙ্গে কথা বলেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তাঁদের কথা অনুযায়ী, ‘‘দুই মহিলা কনস্টেবল এসে আমাদের কাছে ঘটনাটির কথা জানতে চায়। অভিযোগ শোনে। তার পর একটি ফাঁকা অভিযোগের ফর্মের কাগজ বাড়িয়ে দেয় আমাদের দিকে। বলে তাতে সই করে দিতে।’’ ফাঁকা অভিযোগের ফর্মে কেন সই করতে হবে? জানতে চেয়েছিলেন যাত্রীরা। রেশমি জানিয়েছেন, জবাবে দুই কনস্টেবল তাঁদের জানান, তাঁরা যে অভিযোগের কথা বলেছেন, তাই লেখা হবে ওই ফর্মে। তাঁরা যেন সইটা করে দেন। স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রস্তাবে রাজি হননি দুরন্তর ভুক্তভোগী যাত্রীরা। তাঁদের সারারাতের হেনস্তার বিহিত হোক চেয়েই তাঁরা ওই রেলের প্রতিনিধিদের ফিরিয়ে দেন। বদলে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন দুরন্ত এক্সপ্রেসে কর্তব্যরত টিকিট পরীক্ষকের কাছে।

মঙ্গলবার রাত ১২টায় ট্রেন পৌঁছয় হাওড়া স্টেশনে। যাত্রীরা অবাক হয়ে দেখেন সেখানেও তাঁদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আসেননি রেলের কোনও প্রতিনিধি। বুধবার সকালে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হয় যাত্রীদের সঙ্গে। তাঁরা তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা জানান। পরে রেলের ওই টিকিট পরীক্ষক এস কে উপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি কোনও ফাঁকা ফর্মে সই করতে বলার বিষয়ে জানেন না। তবে তাঁর কাছে যে অভিযোগটি দায়ের করা হয়েছিল, সেটি তিনি যথাস্থানে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আশা করছেন দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে। কারণ হাওড়ায় দক্ষিণ পূর্ব রেলের সিআইটি আইসি পি কে চৌধুরী তাঁকে তেমনই আশ্বাস দিয়েছেন। যদিও এই রেলের কর্তার সঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করতে চাওয়া হলে দুরন্তর টিকিট পরীক্ষক পরে জানান, ‘‘স্যরের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। হয়তো উনি ব্যস্ত আছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Duronto express Indian Railway
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE