তাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তবিরোধ নিয়ে এ বার মুখ খুলল ভারত। দুই দেশকে একে অপরের প্রতি সংযম প্রদর্শন এবং শত্রুতা কমানোর আহ্বান জানিয়েছে নয়াদিল্লি। শুধু তা-ই নয়, যুদ্ধের ফলে দুই দেশের সীমান্তে অবস্থিত প্রেয়া বিহার মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া নিয়েও উদ্বেগপ্রকাশ করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
শুক্রবার ভারতের বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতি জারি করে তাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাত নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ইউনেস্কো স্বীকৃত প্রেয়া বিহার মন্দির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বার্তা বহন করে। এই মন্দির সংরক্ষণে ভারত নিবিড় ভাবে যুক্ত। আমরা আশা করি সংরক্ষিত স্থানগুলি সুরক্ষিত করতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
তাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া যুদ্ধ প্রসঙ্গে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল শান্তি বজায় রাখার বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘উত্তেজনারোধের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণে আমরা আবার আবেদন জানাচ্ছি। আলোচনার মাধ্যমে শান্তির পথে ফিরে আসার আহ্বান জানাই।’’
বিতর্কিত ‘পান্না ত্রিভুজ’-এর দখলদারি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে টানাপড়েন চলছে ব্যাঙ্কক-নম পেনের মধ্যে। তাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এবং আর এক পড়শি দেশ লাওসের সীমান্তবর্তী ওই ভূখণ্ডের দখল নিয়ে ১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক আদালত (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস বা আইসিজে) যে রায় দিয়েছিল, তা অনেকটা কম্বোডিয়ার পক্ষেই গিয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরের মে মাসের শেষ পর্বে কম্বোডিয়া সেনা সেখানে শিবির ও পরিখা নির্মাণের তৎপরতা শুরু করার পরে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়। জুলাইয়ের গোড়ায় সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়া— দুই দেশের সেনাবাহিনী। তাতে দু’তরফেরই বেশ কয়েক জন সেনা ও অসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছিলেন। আতঙ্কে ঘরছাড়া হয়েছিলেন সীমান্তবর্তী এলাকার কয়েক হাজার নাগরিক।
আরও পড়ুন:
শুধু তা-ই নয়, দুই দেশের সীমান্তবিরোধের কেন্দ্রে রয়েছে প্রেয়া বিহার মন্দির। ১১ শতকে তৈরি হওয়া এই মন্দির এখন ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসাবে পরিচিত। কিন্তু মন্দিরের এই এলাকা কার দখলে থাকবে, তা নিয়েও তাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার মধ্যে বিরোধ রয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে এই অংশের দখল কম্বোডিয়ার উপর বর্তানো মেনে নেয়নি তাইল্যান্ড। বার বার তাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সীমান্ত এলাকা।
গত ২৬ অক্টোবর মালয়েশিয়া আসিয়ান সম্মেলনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে তাইল্যাল্ড এবং কম্বোডিয়ার মধ্যে স্থায়ী সংঘর্ষবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বকে পাশে বসিয়ে শান্তিচুক্তিতে সই করিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে সোমবার থেকে নতুন করে সংঘাত শুরু হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। গত ১০ নভেম্বর পড়শি দেশ কম্বোডিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি মুলতুবি রাখার কথা ঘোষণা করেছিল তাইল্যান্ড। সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই অনেকের মৃত্যু হয়েছে। সাম্প্রতিক কয়েকটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, তাইল্যান্ডের সেনাবাহিনীর কামান এবং বিমান হামলায় প্রেয়া বিহার মন্দিরের অনেকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মন্দিরের বেশ কয়েকটি প্রবেশদ্বার, মূর্তি এবং ভবনে আঘাত হেনেছে। তার পরেই শান্তিস্থাপনের আহ্বান জানাল ভারত।