আরও পড়ুন: এ কী বলছে সরকার! ঘোড়াও হেসে ফেলবে যে
বুধবার বিমানমন্ত্রী অশোক গজপতি রাজুকে চিঠি লিখে যাত্রী-নিগ্রহের ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন ইন্ডিগোর প্রেসিডেন্ট আদিত্য ঘোষ। সে দিন কী ঘটেছিল, তা-ও বিস্তারিত জানানো হয়েছে তাঁকে। বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ডিজিসিএ’-র থেকেও ঘটনার রিপোর্ট চেয়েছেন রাজু। বিমান প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিন্হা বলেছেন, ‘‘নিন্দনীয়, স্তম্ভিত করার মতো ঘটনা। যাত্রীদের নিরাপত্তার এই অবস্থা দেখে হতাশ লাগছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে, সবার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’
মঙ্গলবার রাতেই সমস্ত কর্মীকে ই-মেল করে নিজেদের কর্তব্য মনে করিয়ে দিয়েছেন আদিত্য। তবে একই সঙ্গে পাল্টা প্রচারেরও আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে ইন্ডিগো। এক যুবতীর ফেসবুক পোস্ট তুলে ধরে বিমানসংস্থাটি বোঝাতে চেয়েছে, দিল্লির বাসিন্দা কাটিয়ালের ব্যবহারই আসলে খুব খারাপ। ইন্ডিগোর দাবি, গত ১৫ অক্টোবর দিল্লিতে ওই ঘটনার সময়ে ভিডিওটি তুলেছিলেন মন্টু কালরা নামে তাদেরই এক কর্মী। তদন্ত-কমিটির হাতে ওই ভিডিও তুলে দেওয়ার পরে তা মুছে ফেলার কথা ছিল মন্টুর। কিন্তু তিনি ‘বদলা নিতে’ এত দিন পরে সেটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন।
আদিত্যর কথায়, ‘‘তদন্ত চলাকালীনই মন্টুকে আমরা বরখাস্ত করি। কারণ, মন্টু পণ্য বিভাগের কর্মী। ঘটনা যেখানে ঘটেছে, মন্টুর সেখানে থাকারই কথা নয়। উল্টে তিনিই প্ররোচিত করেছেন। মোবাইল থেকে ভিডিও তুলেছেন।’’ ইন্ডিগো প্রেসিডেন্টের বক্তব্য, ঘটনার রাতেই তিনি বিষয়টি জানতে পারেন এবং ভিডিওটি দেখেন। তার পরে নিজে ওই যাত্রীকে ফোন করে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি তদন্তের আশ্বাসও দেন। ঘটনাস্থলে থাকা বাকি দুই কর্মীকেও সাসপেন্ড করা হয়।
আদিত্যর বক্তব্য, বিমান থেকে নেমে কাটিয়াল বাসের দিকে না গিয়ে অন্য দিকে যাচ্ছিলেন। তখন কর্মীরা চিৎকার করে তাঁকে আটকান। কারণ, বিমানের ইঞ্জিনের প্রচণ্ড শব্দ হচ্ছিল। কাটিয়াল ভাবেন, তাঁকে অপমান করা হচ্ছে। তিনি গালাগালি দেন। বাসের কাছে ফিরে আসেন। আদিত্যর কথায়, ‘‘ওই সময়ে তাঁকে বাসে তুলে দিলেই কোনও ঝামেলা হতো না। কিন্তু মন্টু সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও ঘটনাস্থলে পৌঁছে পিছন থেকে ইন্ধন দিতে শুরু করেন। ওই যাত্রীকে বাসে উঠতে না দেওয়ার জন্য নির্দেশও দেন।’’
ইন্ডিগো কর্মীদের একাংশই যদিও বলছেন, এ সব ক্ষেত্রে কোনও দায়-এড়ানো যুক্তি দেওয়া অনুচিত। এক সিনিয়র অফিসারের কথায়, ‘‘কোনও যাত্রী গালাগালি দিতেই পারেন। কত ধরনের যাত্রী আমাদের সামলাতে হয়, কারও ধারণা নেই। মদ খেয়ে মহিলা কর্মীকে গালাগালি করেছেন যাত্রী— এমন উদাহরণও রয়েছে। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে শান্ত থাকার প্রশিক্ষণই আমাদের দেওয়া হয়।’’ ওই অফিসার জানান, কাটিয়ালের মতো ঘটনা ঘটলে প্রথমে সিনিয়রেরা মীমাংসার চেষ্টা করেন। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, যাত্রীকে সত্যিই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তখন বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ রয়েছে। প্রয়োজনে পুলিশেরও সাহায্যও নেওয়া যায়। কিন্তু মারপিটে জড়ানোটা একেবারেই কাম্য নয়। আদিত্যর কথায়, ‘‘ভদ্র ব্যবহার, ভাল পরিষেবার জন্যই দেশের সবচেয়ে বেশি মানুষ আমাদের বিমান চড়েন। এই ধরনের ঘটনা আমাদের সংস্কৃতির পরিপন্থী।’’