E-Paper

সিবিআই বয়ান নিয়েছে, বিধির ফের উল্টো কথা

স্পেনে চাকরি করেন বিধি। শিনা হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিতে সেখান থেকেই মুম্বইয়ে এসেছিলেন। আর সেই সাক্ষ্যগ্রহণ পর্বে একের পর এক বিস্ফোরক দাবি করেছেন তিনি।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:৪০

—প্রতীকী চিত্র।

শিনা বরা হত্যা মামলায় তাঁর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার পরে বিধি মুখোপাধ্যায় ধন্যবাদ দিলেন আদালতকে। তার পর জানতে চাইলেন, তিনি বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে পারেন কি না। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষের আগে ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি পাননি বিধি। কিন্তু গত কাল সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারকের অনুমতি পেয়ে আদালত কক্ষের বাইরে গিয়ে ইন্দ্রাণীকে জড়িয়ে ধরলেন তাঁর ছোট মেয়ে। বিধির বাবা, ইন্দ্রাণীর প্রাক্তন স্বামী সঞ্জীব খন্না তখন আদালত কক্ষের ভিতরে ছিলেন। মেয়ের ডাকে বাইরে এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন সঞ্জীবও। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ইন্দ্রাণী বিধিকে বলেন, ‘‘যদি হোটেলে থাকতে ইচ্ছে না করে, বাড়ি আসতে পারো।’’ আঠাশ বছরের বিধিকে দেখে মনে হয়েছিল, কথাটা ভাল লেগেছে তাঁর। মায়ের সঙ্গেই আদালত চত্বর ছেড়ে চলে যান তিনি।

স্পেনে চাকরি করেন বিধি। শিনা হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিতে সেখান থেকেই মুম্বইয়ে এসেছিলেন। আর সেই সাক্ষ্যগ্রহণ পর্বে একের পর এক বিস্ফোরক দাবি করেছেন তিনি। কখনও বলেছেন, শিনা যে দিন খুন হন বলে অভিযোগ, সেই ২০১২ সালের ২৪ এপ্রিলের দু’দিন পরেও ফোনে তিনি শিনার গলা পেয়েছেন। কখনও পিটার মুখোপাধ্যায়ের দুই ছেলে ইন্দ্রাণীর টাকা-গয়না হাতিয়ে নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। কখনও বলেছেন, কোনও তদন্তকারী সংস্থাকেই তিনি বয়ান দেননি। চার্জশিটে তাঁর বয়ান বলে যে কথাগুলি সিবিআই জুড়ে দিয়েছে, তা ‘ভুয়ো এবং সাজানো’। যদিও এই সর্বশেষ অবস্থানটি থেকে গত কাল একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে বিধি গত কাল আদালতে হলফনামা দিয়ে বলেছেন, ২০১৫ সালে শিনাকে খুনের অভিযোগে ইন্দ্রাণী গ্রেফতার হওয়ার পরে সিবিআই তাঁর বয়ান নিয়েছিল বটে!

বিধির দাবি, যদিও তিনি ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে স্পেন থেকে মুম্বইয়ে এসে থাকেন। কোনও কারণে যদি কোর্টে হাজির হতে না পারেন, এই ভেবে ২০২২ সালে হলফনামা তৈরি করে রেখেছিলেন। সেটিতে তিনি বলেছেন, ‘২০১৫ সালে আমার মায়ের গ্রেফতারির পরে সিবিআই আমার বয়ান নিয়েছিল। আমি তখন মুম্বইয়ের ওরলিতে ‘মার্লো’ নামে একটি বাড়িতে আমার (সৎ) বাবা পিটার মুখোপাধ্যায়, মুখোপাধ্যায় পরিবার এবং (পিটারের ছেলে) রাহুলের সঙ্গে থাকতাম। আমার তখন সবে ১৮ বছর বয়স। মায়ের গ্রেফতারিতে ভয় পেয়ে সম্পূর্ণ বিভ্রান্ত হয়ে যাই।’

শিনা যে তাঁর বড় মেয়ে, সেই পরিচয় গোপন করতে ইন্দ্রাণী তাঁকে নিজের বোন সাজিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন বলে এর আগে অভিযোগ উঠেছিল। হলফনামায় বিধির যদিও দাবি, ইন্দ্রাণী নিজেকে এবং পিটারকে ‘দিদি-জামাইবাবু’ বলে ডাকার জন্য শিনাকে কখনও জোর করেননি। শিনাকে ‘দিদি’ ডাকার জন্য চাপ দেননি বিধিকেও। পিটারের আগের পক্ষের দুই ছেলে রাহুল-রবিনকে বিধির দাদাই ভাবতেন তিনি। কিন্তু রাহুল ইন্দ্রাণীকে ভুল বুঝতেন বলে বিধির দাবি। তাঁর বক্তব্য, রাহুল কোনও দিনই তাঁকে বা শিনাকে বোন হিসেবে দেখেননি। ইন্দ্রাণী-পিটারের বিয়েতেও আপত্তি ছিল রাহুলের।

রাহুলের সঙ্গে শিনার প্রেমের সম্পর্ক চাননি বলেই সঞ্জীব ও নিজের গাড়িচালকের সাহায্যে ইন্দ্রাণী শিনাকে খুন করেন বলে অভিযোগ। কিন্তু হলফনামায় বিধি বলেছেন, ২০০৯ থেকে শিনাকেও পরিবারের থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন রাহুল। অথচ নিজে গোপনে শিনার উপরে নজর রাখতেন। নিজে বেকার হওয়া সত্ত্বেও ইন্দ্রাণীর সুপারিশে শিনা চাকরি পাওয়ায় রাহুল প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিলেন বলেও বিধির অভিযোগ। সরকার পক্ষের দাবি, শিনা আমেরিকায় গিয়েছেন এবং সেখানে এক হিরে ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেছেন বলে বিধিকে বুঝিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী। বিধি হলফনামায় লিখেছেন, এমন কোনও কথাই মা তাঁকে বলেননি। পিটারের আইনজীবী মঞ্জুলা রাওয়ের সওয়ালের মুখে বিধি জানান, ইন্দ্রাণীর গ্রেফতারের পরে ‘ডেভিল’স ডটার’ বইটি লেখার জন্য চার বছর পরে তাঁর খারাপ লেগেছিল। প্রকাশনা সংস্থা বন্ধ হওয়ায় বই তুলে নেওয়ারও উপায় ছিল না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sheena Bora Murder Case Indrani Mukerjea CBI

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy