Advertisement
E-Paper

মুম্বইয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় পাঁচ জনের মৃত্যুতে ‘দায়ী ৩০ সেন্টিমিটারের ব্যাগ’! দাবি রেলের তদন্ত রিপোর্টে

কামরার মধ্যে ভর্তি লোক। ভেতরে ঢোকার অবকাশ পাননি। প্রতি দিন এমন চেনা ছবি সব লোকাল ট্রেনেই দেখা যায়। তবে সেই চেনা ছবিই যে করুণ পরিণতির কারণ হবে তা বুঝতে পারেননি গত জুন মাসের মুম্বইয়ের একটি লোকাল ট্রেনের যাত্রীরা।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৫ ১১:২৩
Internal probe blames big backpack of passenger for local train accident in Mumbai, what are the rules

ভিড় ট্রেনে ঝুলছেন যাত্রীরা। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

দাদা, আপনার ব্যাগটা একটু সরাবেন, তা হলে ভাল করে দাঁড়াতে পারি!

ব্যাগটা সামনে নিন, গুঁতো দিচ্ছেন কেন?

ভিড় লোকাল ট্রেনে এমন নানা বাক্যবাণ ভেসে আসে মাঝেমধ্যেই। নিত্যযাত্রীরা এই সব শব্দ শুনে অভ্যস্ত। মুম্বই, চেন্নাই, দিল্লি হোক বা কলকাতা— লোকাল ট্রেনের অভিজ্ঞতা প্রায় সকলেরই কমবেশি সমান! কিন্তু যাত্রীদের ব্যাগের জন্যই ট্রেন দুর্ঘটনা এবং তাতে পাঁচ জনের মৃত্যু— বিষয়টি কার্যত নজিরবিহীন। তবে এমনটাই ঘটেছে গত জুন মাসে মুম্বইয়ের ট্রেন দুর্ঘটনা। তদন্তে দাবি, এক জন যাত্রীর ‘৩০ সেন্টিমিটার পুরু ব্যাগ’ পাশের লাইনে বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রেনের ফুটবোর্ডে আঘাত করে। ফলে হঠাৎ ঝাঁকুনি আর ওই কামরায় থাকা কয়েক জন যাত্রী পড়ে যান!

মুম্বইয়ের ট্রেন দুর্ঘটনার তদন্তে উঠে আসছে ‘ব্যাগ’ তত্ত্বই। ব্যস্ত সময়ে ট্রেনের বাইরে যাত্রীরা ঝুলছেন, এমন ছবি প্রায়শই দেখা যায়। কামরার মধ্যে ভর্তি লোক, ভেতরে ঢোকার অবকাশ পাননি— প্রতি দিন এমন চেনা ছবি লোকাল ট্রেনে দেখাই যায়। তবে সেই চেনা ছবিই যে করুণ পরিণতির কারণ হবে তা বুঝতে পারেননি গত জুন মাসের মুম্বইয়ের ওই লোকাল ট্রেনের যাত্রীরা। দিবা-মুম্ব্রা স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে যান ৮ থেকে ১২ জন। সকলকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি পাঁচ জনকে।

সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেন, ট্রেনে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। অনেকে ভিতরে পুরোপুরি ঢুকতে না-পেরে দরজায় ঝুলছিলেন। ট্রেনের দু’দিকের দরজাতেই অনেকে দাঁড়িয়েছিলেন। ট্রেন স্টেশন ছেড়ে কিছুটা এগোতেই তাঁরা হাত ফস্কে ছিটকে পড়ে যান। ঘটনার তদন্ত শুরু করে সেন্ট্রাল রেল। প্রায় চার মাস পরে সেই ঘটনার তদন্তে জানা যায়, ওই ট্রেনের ফুটবোর্ড থেকে ঝুলতে থাকা একটি ব্যাগই দুর্ঘটনার কারণ!

মুম্বই হোক বা কলকাতা, সেখানকার প্রায় সব শাখাতেই ১২ কোচের লোকাল ট্রেন চলে। প্রতিটি কোচে ১০০ জন যাত্রী ধারণক্ষমতা। অর্থাৎ, প্রতি ট্রেনে ১২০০ জন যাত্রী উঠতে পারেন। কিন্তু এতো গেল খাতায়-কলমের হিসাব। বাস্তবের ছবি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ব্যস্ত সময়ে প্রায়শই দেখা যায় একটি লোকাল ট্রেনে তার ধারণ ক্ষমতার তিন-চারগুণ যাত্রী সফর করেন। রেলের মান নির্ধারণকারী সংস্থা, ‘রিসার্চ ডিজাইনস অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অর্গানাইজেশন’ (আরডিএসও)-এর ঠিক করে দেওয়া মানদণ্ড অনুযায়ী, ট্রেনের প্রতি বর্গমিটারে আট জন যাত্রী থাকতে পারেন। তবে ব্যস্ত সময়ে আদৌ লোকাল ট্রেনের ছবি তা হয় না। প্রাথমিক ধারণা, প্রতি বর্গমিটারে ১৫-১৬ জন যাত্রী থাকেন।

তবে শুধু কি যাত্রী? তাঁদের সঙ্গে থাকা ব্যাগও ট্রেনের ভিতর অনেকটা জায়গাই দখল করে নেয়। প্রতিটি লোকালের প্রত্যেক কামরাতেই লাগেজ রাখার নির্দিষ্ট জায়গা থাকে। কিন্তু ব্যস্ত সময়ে ওই লাগেজ রাখার জায়গা নিমেষে ভরে যায়। কামরার ২০ শতাংশ যাত্রীর ব্যাগও ওই জায়গায় ধরে না! বাকি যাত্রীদের ব্যাগ থাকে হয় তাঁর হাতে, নয়তো পিঠে, নয় বুকের সামনে ঝোলানো। কোনও কোনও যাত্রী আবার একসঙ্গে মিলে কয়েকটি ব্যাগ একটি হুকের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেন ট্রেনের জানলার রডের সঙ্গে।

লোকাল ট্রেনের প্রায় প্রতিটি যাত্রীর সঙ্গেই একটা করে ব্যাগ থাকে। ল্যাপটপ, টিফিন বক্স, জলের বোতল বা অফিসের গুরুত্বপুর্ণ জিনিসপত্রে ভরে থাকে ব্যাগ। যাত্রীদের কাছে ব্যাগ তাই ‘অমূল্য’ সম্পদ। নিত্যযাত্রীদের অনেকাংশের দাবি, ‘‘ব্যাগ বহনকারী পাঁচজন ব্যক্তি লোকাল ট্রেনের কামরায় ১০ জনের জন্য নির্ধারিত জায়গা দখল করতে পারেন।’’ কিন্তু যাত্রী মানেই সঙ্গে ব্যাগ থাকবে, আর ব্যাগ থাকবে মানেই ট্রেনের কামরায় জায়গা সঙ্কোচন। ফলে অনেক যাত্রীই ভিড়ের কারণে ট্রেনের কামরার ভিতরে ঢুকতে না-পেরে বাইরে ঝোলেন। আর এই অভ্যাস যে বিপদ ডেকে আনতে পারে, তার উদাহরণ মুম্বইয়ের ট্রেন দুর্ঘটনা!

শুধু মুম্বই নয়, গত জুনের মতো দুর্ঘটনা এ রাজ্যেও ঘটতে পারে। ব্যস্ত সময়ে ব্যারাকপুর-দমদম যাত্রা করা যাত্রী সৌমেন হালদারের কথায়, ‘‘মুম্বইয়ের কথা কী বলছেন! আমাদের এখানেও যে কোনও সময় এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সব ট্রেনে বাঁদুড়ঝোলা ভিড়। ঠেলেঠুলে ট্রেনে উঠতে পারলেও কামরার মধ্যে ঢুকতে হিমশিম খেতে হয়। আমরা বুঝি, নিত্য লোকাল ট্রেনের যন্ত্রণা।’’ শুধু সৌমেন কেন, প্রায় সব নিত্যযাত্রীদের অভিজ্ঞতাই কমবেশি একই।

রেলের দাবি, চলন্ত ট্রেন থেকে ঝোলা দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রতিটি কামরার দরজার উপরেই সেই সতর্কবার্তা লেখা থাকে। নিয়ম অনুযায়ী, ট্রেনের অংশের বাইরে কোনও যাত্রীর দেহ হোক বা ব্যাগ— কোনও কিছুই ঝোলানো যায় না। প্রতি যাত্রীর সঙ্গে কতটা লাগেজ থাকবে, তাও নিয়মের জালে বাধা থাকে। কিন্তু ব্যস্ত সময়ে, ভিড় ট্রেনে কি সেই নিয়ম মানা হয়? যাত্রীদের কথায়, ‘‘খাতায়-কলমে অনেক নিয়মই লেখা থাকে। তবে তা মানেন ক'জন?’’ সত্যি কি ইচ্ছাকৃত মানা হয় না? যাত্রীদের দাবি, ‘‘ক’জন চান, ইচ্ছাকৃত নিজের প্রাণ দিতে? বাধ্য হয়ে ঝুলে ঝুলে যাত্রা করতে হয়।’’

Local Train Accident Indian Railway
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy