Advertisement
E-Paper

দু’বাটি ম্যাগির জন্য কেন এতটা ঝুঁকি নেবেন!

অন্বেষা দত্ত

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৫২
যাত্রা শুরুর আগে। ছবিটি টুইটারে পোস্ট করেন তেজস্বীই (বঁা দিকে)।

যাত্রা শুরুর আগে। ছবিটি টুইটারে পোস্ট করেন তেজস্বীই (বঁা দিকে)।

পুলিশ বলছে, ট্রাফিক আইন মানুন। পুলিশই বলছে, ট্রাফিক আইন ভাঙুন! পুণের রাস্তায় প্রতিযোগিতা। ফারাক শুধু দু’বাটি ম্যাগির!

চন্দ্রবিন্দুর চ, বেড়ালের শ আর রুমালের মা-এর মতো শুনতে ঠেকলেও ব্যাপারটা ঘটেছে তেমনই। সৌজন্যে পুণের দাপুটে তরুণী ডিসি ট্রাফিক তেজস্বী সতপুতে। এখনও পুরো এক মাস হয়নি এই পদে, তার আগেই তিনি শোরগোল ফেলে দিয়েছেন পুণের রাস্তায়। যানজট প্রতিরোধ, দুর্ঘটনার হার কমাতে অনেক শহরেই এখন নানা কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। তেজস্বী একটি অভিনব উপায় বাতলেছেন।

এ মাসের গোড়ায় এক দিন ব্যস্ত ট্রাফিকের মধ্যে পরীক্ষাটা করে দেখেন তেজস্বী। এক বন্ধুর মুখে শুনে আইডিয়াটা মনে ধরে। পুণের কাটরাজ থেকে শিবাজীনগরের মধ্যে ১১ কিলোমিটার রাস্তায় একই ধরনের ক্ষমতার দু’টি মোটরবাইকের দুই আরোহীকে ওই পথ পেরোতে বলা হয়। এক জনকে তেজস্বীরা বলেন, যে ভাবে হোক, দ্রুত পৌঁছে যান শিবাজীনগর। আর অন্য জনকে বলা হয়, ট্রাফিক আইন মেনে তবেই গন্তব্যে পৌঁছন। যাত্রা শেষে দেখা যায়, দুই আরোহীর মধ্যে পৌঁছনোর সময়ের ফারাক মাত্র চার মিনিট! যিনি ট্রাফিক আইন মেনেছেন, তাঁর লেগেছে ২৮ মিনিট। আর যিনি পড়িমড়ি করে ছুটেছেন, তাঁর লেগেছে ২৪ মিনিট! এর পরেই ডিসি ট্রাফিক তেজস্বীর টুইট, ‘চার মিনিটের জন্য এত বড় ঝুঁকি নেওয়া কি সাজে?’ মুহূর্তে সেটি লাইক আর রিটুইট হতে থাকে। ‘দু’মিনিটের দু’বাটি ম্যাগির জন্য এত ঝুঁকি’— আমদাবাদ পুলিশ সেটি রিটুইট করে এই মন্তব্য লিখে।

চার মিনিটের গল্প কাজে দিয়েছে কতটা? লোকজন কি এখন নিয়মমতে চলছে? তেজস্বী ফোনে বলেন, “ওটা সমীক্ষার পরেই বোঝা যাবে। সাড়া তো পড়েছে! নইলে ২১ হাজারেরও বেশি লোক লাইক করে? ১০ হাজারেরও বেশি লোক রিটুইট করে? ৮০০-র উপরে মানুষ কমেন্ট করে?” এই অভিযানের কথা শুনে কলকাতার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বলেন, ‘‘দারুণ প্রচেষ্টা।’’ পশ্চিমবঙ্গে পথ নিরাপত্তায় এমন কিছু ভাবা যেতেই পারে বলে তাঁর মত।

চার বছরের কন্যার মা তেজস্বী আগে পুণে রুরাল-এ অতিরিক্ত এসপি ছিলেন। ট্রাফিকে এই প্রথম। বছর তিরিশের তরুণী বলছেন, “নতুন জায়গা। অনেক কিছু মাথায় রাখতে হয়। একটু সময় লাগে। কিন্তু ভালই লাগছে।” ব্যবসায়ী বাবা আর শিক্ষিকা মায়ের কন্যা স্নাতক স্তর পর্যন্ত নাকি জানতেনই না, আইএএস আর আইপিএস হওয়ার মধ্যে তফাৎ কোথায়। বন্ধুরা পরীক্ষা দিচ্ছে দেখে তিনিও বসে যান।

মহারাষ্ট্র ক্যাডারের ২০১২ সালের এই আইপিএস এখন বলেন, “কিছু নম্বর কম পেয়ে আইপিএসে এসে ভালই হয়েছে। ফিল্ডে কাজ খুব ভাল লাগে। ইউনিফর্ম গায়ে চাপলেই সব অন্য রকম।” ছোট্ট মেয়ে ইরা-কে রেখে কাজে অসুবিধা হয় না? তেজস্বীর ঝটিতি জবাব, “স্বামী কিশোর পাশে আছেন। উনি কনসালট্যান্ট। অনেক সাহায্য করেন। বাপের বাড়ি-শ্বশুরবাড়ির সবাইও সব সময় পাশে থেকেছে।” তেজস্বীর ট্রেনিং শেষ করে মা হওয়া, দায়িত্ব নেওয়া— সব প্রায় পিঠোপিঠি। মাতৃত্বকালীন ছুটি কাটিয়ে এক বছরের মেয়েকে রেখে চাকরিতে ছুট। তাই আশপাশের সবাইকে কৃতিত্ব দিতে এতটুকু কৃপণ নন তিনি।

মেয়ে কি বড় হয়ে মায়ের মতোই উর্দি চাপাবে গায়ে? কী চান? “ও আগে ভাল ভাবে বড় হোক। ওর যা ইচ্ছে, সেটাই হবে। কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না,” সন্ধের অবসরে মেয়ের সঙ্গে খেলতে খেলতে বলে দেন মা।

police IPS Tejaswi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy