Advertisement
E-Paper

শনিবার পদ খোয়াবেন কি ‘আম্মা’, যজ্ঞের ধুম

শনিবারের বারবেলায় কী হয়, কী হয়! দেবীপক্ষের শুরুতেও গুমোট পরিবেশ চেন্নাইয়ে! সারদা-কাণ্ডের রাহুগ্রাস যেমন পশ্চিমবঙ্গে শাসক তৃণমূলের ঘুম কেড়ে নিয়েছে, তেমনই উৎকণ্ঠায় ডুবে এখন তামিল রাজনীতি।

শঙ্খদীপ দাস

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৪
তখন একসঙ্গে। শশীকলা ও জয়ললিতা।—ফাইল চিত্র।

তখন একসঙ্গে। শশীকলা ও জয়ললিতা।—ফাইল চিত্র।

শনিবারের বারবেলায় কী হয়, কী হয়! দেবীপক্ষের শুরুতেও গুমোট পরিবেশ চেন্নাইয়ে! সারদা-কাণ্ডের রাহুগ্রাস যেমন পশ্চিমবঙ্গে শাসক তৃণমূলের ঘুম কেড়ে নিয়েছে, তেমনই উৎকণ্ঠায় ডুবে এখন তামিল রাজনীতি।

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার বিরুদ্ধে হিসেব-বহির্ভূত সম্পত্তির মামলা ঝুলছে দীর্ঘদিন ধরে। পাক্কা ১৮ বছর। একই মামলায় অভিযুক্ত তাঁর বান্ধবী শশীকলাও। মূল অভিযোগ, সোনাদানা, মণিমাণিক্য, শাড়ি, জুতো, স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে তাঁদের সম্পত্তির সঙ্গে আয়ের কোনও সঙ্গতি নেই। শনিবার সেই মামলারই চূড়ান্ত রায় দিতে চলেছে বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালত। ওই রায়ে জয়ললিতার শাস্তি হলে সে দিনই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে এক সময়ে তামিল চলচ্চিত্রের এই জনপ্রিয় অভিনেত্রীকে। তাতে নতুন অস্থিরতা ঘনাতে পারে তামিল রাজনীতিতে।

গত বছর সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে জানিয়ে দিয়েছে, ফৌজদারি মামলায় আইনসভার কোনও সদস্যের শাস্তি ঘোষণা হলে তখনই তাঁকে ইস্তফা দিতে হবে। এর পরই পশুখাদ্য মামলায় সাজা হওয়ায় লোকসভার পদ ছাড়তে হয় লালুপ্রসাদকে। একই আশঙ্কার মেঘ এখন জয়ললিতা শিবিরে। যদিও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন অন্নাদ্রমুকের কোনও নেতা। নেত্রীর অনুমতি ছাড়া প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করার ‘দুঃসাহস’ এডিএমকে-তে কারও নেই। বরং নেত্রীকে খুশি রাখতে তাঁরা ‘আম্মার’ ছবি পকেটে নিয়ে ঘোরেন। আকাশে নেত্রীর কপ্টার দেখলেও নীচ থেকে প্রণাম ঠোকেন। তবে মামলার রায়কে কেন্দ্র করে দলের উৎকণ্ঠা নিয়ে অনেক বার প্রশ্নের পরে অন্নাদ্রমুকের এক সাংসদ আজ এটুকুই বললেন যে, “সম্পত্তি মামলায় তিনি রেহাই পাবেন বলেই আম্মা আশাবাদী। আমরাও তেমনই আশা করছি। কিন্তু তাঁর সাজা হলেও কোনও রাজনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা নেই। প্রয়োজনে তাঁর আস্থাভাজন কোনও নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়ে জেলে বসেই সরকার চালাবেন নেত্রী। দল ও সরকার উভয়েরই রাশ তাঁর হাতেই থাকবে।”

তবে মুখে এ কথা বললেও দলের অস্থিরতা চেপে রাখা যাচ্ছে না। আম্মার মঙ্গলকামনায় তামিলনাড়ু জুড়ে হোমযজ্ঞের হিড়িক পড়ে গিয়েছে। রাজ্যের মন্দিরে-মন্দিরে চলছে ‘শত্রু-সংহার যজ্ঞ’ চলছে। পরশু ৫১ জন পুরোহিতকে দিয়ে বিশেষ যজ্ঞের আয়োজন করেছেন দলের নেতারা।

রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন তামিল চলচ্চিত্রের প্রবাদপ্রতিম নায়ক এম জি রামচন্দ্রনের হাত ধরে। ১৯৯১ সালে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হন জয়া। কিন্তু পাঁচ বছর বাদে তাঁকে সরিয়ে ডিএমকে নেতা এম করুণানিধি ক্ষমতায় ফিরতেই জয়ললিতার বিরুদ্ধে হিসেব বহির্ভূত সম্পত্তির মামলা দায়ের হয়। মজার বিষয় হল, প্রথম বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েই জয়ললিতা ঘোষণা করেছিলেন, তিনি পারিশ্রমিক হিসেবে মাত্র ১ টাকা নেবেন। কিন্তু ’৯৬ সালে আদালতে অভিযোগ ওঠে যে, ঘোষিত আয়ের অতিরিক্ত ৬৬ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে তাঁর। জয়ললিতার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ২৮ কেজি সোনা, ৮৮০ কেজি রুপো, সাড়ে দশ হাজার শাড়ি, ৭৫০ জোড়া জুতো, ৯১টি দামি ঘড়ি ও আরও অনেক মূল্যবান জিনিস আটক করে আয়কর দফতর। রাজ্যের বিরোধী পক্ষের অভিযোগ, এর পর থেকে নানা রকম ওজর-অজুহাত দেখিয়ে মামলাটি নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে।

অভিযোগ প্রমাণে আয়কর দফতর তথা সরকার পক্ষ মোট ২৫৯ জন সাক্ষ্যকে হাজির করিয়েছেন এ পর্যন্ত। এর পাল্টা জয়ললিতার তরফে পেশ করা হয়েছে ৯৯ জন সাক্ষীকে। মামলায় অভিযুক্ত কিছু বেসরকারি সংস্থা বারবার মামলার দিন পিছনোর আর্জি জানিয়েও শ্লথ করেছেন মামলা। পরে এ ধরনের পাঁচটি সংস্থার বিরুদ্ধে জরিমানা ধার্য করে আদালত। ২০০৩ সালে এক ডিএমকে নেতার আর্জিতে নিরপেক্ষ বিচারের স্বার্থে মামলাটি চেন্নাই থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিবেশী রাজ্যের বেঙ্গালুরুতে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, শনিবার বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালতে জয়ললিতার নিরাপত্তার বিশেষ ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে কর্নাটক সরকারের কাছে। এ ব্যাপারে আদালত শুধু নয়, কেন্দ্রের কাছেও অনুরোধ জানিয়েছিলেন জয়ললিতা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কার্যত তামিলনাড়ুর গোটা মন্ত্রিসভাই সে দিন বেঙ্গালুরুতে হাজির থাকবেন। থাকবেন দলের শীর্ষ সারির সব নেতাও।

সন্দেহ নেই নিম্ন আদালতে শাস্তি ঘোষিত হলে, জয়ললিতা অবশ্যই উচ্চ আদালতে যাবেন। কিন্তু ডিএমকে শিবির এখন চূড়ান্ত কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষায়। এত দিন টুজি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি-সহ বিভিন্ন দুর্নীতি মামলায় কালিমালিপ্ত হয়েছে করুণানিধির দল ও পরিবার। ঘরোয়া মহলে কালাইনার-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, তামিল রাজনীতিতে সমতা ফিরবে জয়ললিতা দোষী সাব্যস্ত হলে। ডিএমকে নেতা ইলানগোভানের কথায়, “শাস্তি হলে জয়ললিতা অবশ্যই উচ্চ আদালতে যাবেন, জামিনও পাবেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে রায়টা ডিএমকে-র কাছে বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার হবে।”

শনিবারের বারবেলাই শুভযোগ হয়ে উঠতে পারে দেশের প্রধান দুই জাতীয় দলের কাছেও। দুই দ্রাবিড় দলের দাপটে কংগ্রেস অনেক দিন হল জমি হারিয়েছে তামিলনাড়ুতে। তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় রয়েছেন রাহুল গাঁধী। অন্য দিকে, লোকসভা ভোটে তামিলনাড়ুতে সাড়া পেয়ে বিজেপি-ও এখন রাজ্য রাজনীতিতে অন্নাদ্রমুককে ছেড়ে কথা বলছে না। ‘আম্মা’ বিপাকে পড়লে তার সুযোগ নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন অমিত শাহরাও।

তাই আশায় হোক বা আশঙ্কায়, সব পক্ষই আপাতত শনিবারের অপেক্ষায়। কী হয়! কী হয়!

jayalalitha amma property case sashikala Jayalalithaa latest news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy