সফুরা জারগর।—ফাইল চিত্র।
দিল্লি হিংসায় উস্কানি দেওয়ায় অভিযুক্ত দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার পড়ুয়া সফুরা জারগারের জামিনের আর্জি ফের একবার খারিজ হয়ে গেল আদালতে। ফেব্রুয়ারি মাসে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী আন্দোলনে শামিল ছিলেন সফুরা। উস্কানিমূলক মন্তব্য করে দিল্লি হিংসায় মদত দেওয়ার অভিযোগে গত ১০ এপ্রিল গর্ভবতী অবস্থায় তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সেই থেকে দিল্লির তিহাড় জেলে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন ২১ সপ্তাহের গর্ভবতী সফুরা। স্বাস্থ্যজনিত কারণ দেখিয়ে সম্প্রতি পটিয়ালা হাউস কোর্টে জামিনের আর্জি জানান তিনি। কিন্তু অতিরিক্ত দায়রা বিচারক ধর্মেন্দ্র রাণা তাঁর আর্জি খারিজ করে দেন। আদালত জানায়, প্রত্যক্ষ ভাবে হিংসায় যোগ না দিলেও, উস্কানিমূলক মন্তব্য ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেন না সফুরা।
বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ)-এ সফুরাকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশের বিশেষ সেল। বলা হয়, ২৩ ফেব্রুয়ারি সিএএ বিক্ষোভে উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছিলেন তিনি। তা থেকেই উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে হিংসা দেখা দেয়। বরাবর সেই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন সফুরা ও তাঁর আইনজীবী রীতেশ ধর দুবে ও ত্রিদীপ পাইস। কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বিরোধিতা করায় তাঁকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে বলে দাবি করেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে ১৫ দিন সময় দিল সুপ্রিম কোর্ট
২৩ মে সফুরা চাঁদবাগে জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়েছিলেন, গতকাল সেই অভিযোগও অস্বীকার করেন সফুরার আইনজীবীরা। তাঁরা জানান, ওই দিন সফুরা চাঁদবাগে গিয়েছিলেন বটে। কিন্তু তখনও হিংসা শুরু হয়নি। সেখানে কোনও ভাষণ দেননি তিনি। বরং ওই দিন কৃষ্ণনগররে খুরেজিতে ভাষণ দেন সফুরা। কিন্তু সেখানে কোনও উস্কানিমূলক মন্তব্য করেননি তিনি।
কিন্তু তাঁদের যুক্তিকে আমল দেননি বিচারক ধর্মেন্দ্র রাণা। তদন্তকারীদের পেশ কার কিছু হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনের রেকর্ড ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান তুলে ধরে তিনি জানান, ‘‘আর যাই হোক না কেন, এটা প্রমাণিত যে চাক্কা জ্যাম করে রাস্তা অবরোধ করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। আর ৩৩৯ ধারা অনুযায়ী, এক জন ব্যক্তিও যদি অন্যায় ভাবে এ কাজ ঘটিয়ে থাকেন, তা অপরাধ। অপরাধ করার উদ্দেশ্য নিয়ে যদি পাঁচ জন অথবা তাঁর বেশি মানুষ একত্রিত হন, ১৪১ অনুচ্ছেদের ৩ নং উপধারা অনুযায়ী সেটাও অপরাধ।’’
কিন্তু সফুরার উপর ঘটনাস্থলে উপস্থিতি সকলের কাজের দায় চাপানো হবে কেন, পাল্টা প্রশ্ন তোলেন তাঁর আইনজীবীরা। জবাবে বিচারক ধর্মেন্দ্র রাণা বলেন, ‘‘আমার মতে তদন্তে যদি ষড়যন্ত্রের কথা উঠে আসে, সে ক্ষেত্রে যড়যন্ত্রকারীদের একজনও যদি কোনও মন্তব্য করেন, তা সেখানে উপস্থিত সকলের বলে ধরে নেওয়া যায়। ’’
আরও পড়ুন: করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, তাই এক বছর কোনও নতুন প্রকল্প নয়, জানাল অর্থমন্ত্রক
বিচারক ধর্মেন্দ্র রাণা আরও বলেন, ‘‘জ্বলন্ত কয়লা নিয়ে খেললে, হাওয়া লেগে আগুন ছড়াবেই। তার জন্য হওয়াকে দোষ দেওয়া যায় না। ষড়যন্ত্রকারীদের উস্কানিমূলক মন্তব্যের দায় অভিযুক্তের উপরও প্রযোজ্য।’’ এর পরই সফুরার জামিনের আর্জি খারিজ করেন বিচারক রাণা। তবে জেলের মধ্যে যাতে তাঁর খেয়াল রাখা হয়, তা নিশ্চিত করতে নির্দেশও দেন।
কিন্তু আদালতের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে বিশিষ্ট মহলে। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় খোলাখুলি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকেই, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর, আলি ফজল, চিত্র পরিচালক হংসল মেহতা। টুইটারে স্বরা লেখেন, ‘‘লজ্জাজনক ঘটনা। এ ভাবে পড়ুয়াদের তাড়া করে বেড়ানো বন্ধ হোক।’’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে টুইটারে আলি ফজল লেখেন, ‘‘স্যর এক জন গর্ভবতী মহিলা জেলে পড়ে রয়েছেন। ওঁর মধ্যে একটা প্রাণ বড় হচ্ছে। আপনার কাছে অনুরোধ, এই দুঃসময়ে ওঁর থাকার একটা ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক। ওঁকে আইসোলেশনে রেখা যায় না কি? এতে অন্তত দেশের মায়েরা নিরাপত্তা বোধ করবেন।’’ হংসল মেহতা লেখেন, ‘‘সফুরা জেলে কেন?’’
তবে আদালতের সিদ্ধআন্তে তিনি একটুও অবাক হননি বলে জানিয়েছেন সফুরার বোন সমীয়া। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘আজকাল কোনও কিছুতেই আর অবাক হই না। ফের চেষ্টা করব। গত কয়েক বছর ধরে যা চলছে, তাতে ভারতীয় মুসলিম হিসাবে এ সব অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তবে আশা করি, দেরিতে হলেও সুবিচার পাব।’’
এর আগেও, দু’বার জামিনের আর্জি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সফুরা। তাঁর উপর ইউএপিএ কার্যকর হওয়ার আগে গত ১৮ এপ্রিল প্রথম বার আদালতে আর্জি জানান তাঁর আইনজীবী। ২১ এপ্রিল সেটি খারিজ করে দেয় আদালত। ২ মে দ্বিতীয় বার আর্জি জানালে, তা-ও খারিজ হয়ে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy