E-Paper

সন্ত্রাসে মদত, ৩ সরকারি কর্মী বরখাস্ত জম্মু-কাশ্মীরে

ভারতীয় সংবিধানের ৩১১(২)(সি) নম্বর ধারা অনুযায়ী, কোনও সরকারি কর্মচারীর থেকে রাষ্ট্রের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকলে বিনা কোনও তদন্ত বা বিনা অনুসন্ধানেই তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যায়।

সাবির ইবন ইউসুফ

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:৩২

— প্রতীকী চিত্র।

সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে জম্মু-কাশ্মীর সরকারের তিন কর্মীকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উপরাজ্যপাল মনোজ সিন্হা‌। এঁদের মধ্যে এক জন পুলিশের কনস্টেবল, এক জন শিক্ষক এবং তৃতীয় জন বন দফতরের কর্মী। পাকিস্তানি ‘হ্যান্ডলার’দের নির্দেশে সন্ত্রাসে মদত, জম্মু-কাশ্মীরের শান্তি নষ্টের চেষ্টা, উপত্যকায় হিংসা ছড়ানো, অস্ত্রের জোগাড় এবং সরবরাহের মতো অজস্র অভিযোগ আনা হয়েছে এই তিন জনের বিরুদ্ধে। এর আগে একই ধরনের অভিযোগে অন্তত ৭০ জন কর্মীকে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছেন উপরাজ্যপাল সিন্হা‌। তাঁর এই সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত নিয়েও বিতর্কের ঝড় উঠেছে উপত্যকায়। জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি দীর্ঘদিন ধরেই উপরাজ্যপালের এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে আসছেন। এ বার জম্মু-কাশ্মীরের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাও দাবি করেছেন, ওই তিন অভিযুক্তকে আদালতের সামনে অন্তত এক বার নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের সুযোগ দেওয়া উচিত।

ভারতীয় সংবিধানের ৩১১(২)(সি) নম্বর ধারা অনুযায়ী, কোনও সরকারি কর্মচারীর থেকে রাষ্ট্রের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকলে বিনা কোনও তদন্ত বা বিনা অনুসন্ধানেই তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যায়। জম্মু-কাশ্মীরের এই সব সরকারি কর্মীর ক্ষেত্রে সংবিধানের এই ধারাই প্রয়োগ করেছেন উপরাজ্যপাল। যে তিন জন কর্মীকে তিনি সদ্য বরখাস্ত করেছেন, তাঁরা হলেন ফিরদৌস আহমেদ ভাট, মহম্মদ আশরফ ভাট এবং নিসার আহমেদ খান।

ফিরদৌস পুলিশের কনস্টেবল ছিলেন। ২০২৪ সালে অনন্তনাগে পর্যটকদের উপরে হামলার ঘটনায় ফিরদৌস জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ। পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে লস্কর জঙ্গিদের পাঠানো অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার হয়েছিল ফিরদৌসের কাছ থেকে। তদন্তে জানা যায়, দেশের গোপন তথ্য শত্রুপক্ষের কাছে ফাঁস করে দেওয়া, বিভিন্ন পুলিশ অফিসার ও কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা চালানো, সরকারি কর্মীদের ব্ল্যাকমেল করা, স্থানীয় যুবকদের সন্ত্রাসে যোগ দিতে উস্কানি দেওয়ার মতো নানা কাজে যুক্ত ছিলেন তিনি। আর এক অভিযুক্ত নিসার আহমেদ খান বন দফতরে কাজ করতেন। তিনি হিজ়বুল মুজাহিদিনের মতো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ। ২০০০ সালে একটি সন্ত্রাসবাদী হামলায় যুক্ত থাকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, কিন্তু ২০০৬ সালে তিনি ছাড়া পেয়ে যান। ২০১৬-’১৭ সাল জুড়ে উপত্যকায় নানা হিংসাত্মক কার্যকলাপে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে নিসারের বিরুদ্ধে। তৃতীয় অভিযুক্ত হলেন শিক্ষক মহম্মদ আশরফ ভাট। লস্কর ই-তইবার হয়ে অস্ত্র পাচার, লোকজনকে হুমকি চিঠি দেওয়া, ছাত্রদের জঙ্গি দলে যোগ দেওয়ায় উস্কানি দেওয়ার মতো অভিযোগে ২০২২ সালে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

তবে এ ভাবে এই সব সরকারি কর্মীকে বরখাস্ত করা নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ উপত্যকার রাজনীতিকরা। মুখ্যমন্ত্রী ওমর বলছেন, ওই তিন কর্মীর বিরুদ্ধে যথাযথ প্রমাণ থাকলে এবং ওই তিন জনকে নিজেদের বাঁচানোর অন্তত একটা সুযোগ দেওয়া হলে উপরাজ্যপালের এই সিদ্ধান্ত তিনি মানতে রাজি আছেন। তবে পিডিপি নেত্রী মেহবুবার বক্তব্য, জম্মু-কাশ্মীরে এখন একটি নির্বাচিত সরকার থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্র নিজের ইচ্ছে মতো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনের উপরে। উপত্যকার বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা মিরওয়াইজ় উমর ফারুকও উপরাজ্যপালের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সমাজমাধ্যমে সরব। এক্স হ্যান্ডলে তিনি অভিযোগ করেছেন, এ ভাবে একের পর এক কর্মীকে বরখাস্ত করে কেন্দ্র আসলে স্থানীয় লোকজনদের সরকারি পদ থেকে সরাতে চাইছে। সমাজমাধ্যমে নাম না করে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার কথাও বলেছেন তিনি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jammu and Kashmir Suspension Order

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy