তিনি ছিলেন সংসারের একমাত্র রোজগেরে। রোজ সকালে নিজের টাট্টু ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। বৈসরন উপত্যকা চষে বেড়াতেন। ঘুরতে আসা পর্যটকদের ঘোড়ায় চাপিয়ে দেখাতেন উপত্যকার সৌন্দর্য। কিন্তু ২২ এপ্রিল জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ হারান পহেলগাঁওয়ের বাসিন্দা সইদ আদিল হুসেন শাহ। এ বার তাঁর ভাই সৈয়দ নাজতক হুসেন শাহকে চাকরির প্রস্তাব দিল জম্মু ও কাশ্মীরের ওয়াকফ বোর্ড।
পহেলগাঁও কাণ্ডের পর থেকে আলোচনায় থাকা নামগুলোর মধ্যে অন্যতম হল আদিল! তাঁর কাজ ছিল পহেলগাঁওয়ে বেড়াতে আসা পর্যটকদের টাট্টু ঘোড়ায় চড়ানো। কিন্তু হামলার মুহূর্তে জঙ্গিদের বন্দুকের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। ভয় না পেয়ে জঙ্গিদের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছিলেন বন্দুকও! তবে আদিলের সেই প্রতিরোধ মেনে নিতে পারেনি জঙ্গিরা। তাদের গুলিতেই প্রাণ হারান আদিল। ঘটনার পর ১০ দিন কেটে গিয়েছে। তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়াল স্থানীয় ওয়াকফ বোর্ড।
আদিলের সাহসিকতার গল্প এখন ঘুরছে বিভিন্ন জায়গায়। পুত্রের এই কীর্তিতে খুশি তাঁর বাবা সৈয়দ হায়দার শাহ। পুত্রের মৃত্যুতে যেমন কষ্ট পাচ্ছেন, তেমন গর্বিতও! সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলের এই আত্মত্যাগে আমি সত্যিই গর্বিত। হয়তো এই দিনটার জন্য, এই গর্ব অনুভব করব বলেই বেঁচে রয়েছি। নয়তো ছেলের লাশ দেখার পরেই আমার মরে যাওয়ার কথা ছিল।’’
আরও পড়ুন:
পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গিহানায় যে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে আদিলই একমাত্র কাশ্মীরি। বৈসরন উপত্যকায় টাট্টুতে চাপিয়ে পর্যটকদের নিয়ে যেতেন আদিল। ঘরে ফিরতেন সন্ধ্যার পরে। সে দিন অবশ্য আর ফেরা হয়নি। দুপুরে জঙ্গি হামলার কথা জানতে পেরে পরিবারের লোকেরা আদিলকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু ফোন বেজে গিয়েছিল। রাতে পুত্রের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন আদিলের বাবা-ভাইয়েরা। তাঁদের আরও জানানো হয়, পর্যটকদের বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গিয়েছে আদিলের! তাঁর মৃত্যুতে পরিবারে যাতে বিপর্যয় নেমে না আসে, সেই কারণে এগিয়ে এল ওয়াকফ বোর্ড। তবে তাদের প্রস্তাবে আদিলের পরিবার রাজি কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আদিলের ভাইকে কী চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা-ও জানা যায়নি।