Advertisement
E-Paper

মোদীর বারাণসীতেই অস্থি ভাসবে শৈলেশের

জেট এয়ারওয়েজের কর্মী সংগঠনের দাবি, সংস্থার পরিষেবা সাময়িক ভাবে স্থগিতের পরে এই প্রথম কোনও কর্মী আত্মঘাতী হলেন।

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:১০
অসমাপ্ত: নির্মীয়মাণ বাড়ির দাওয়ায় শৈলেশের পরিজন-প্রতিবেশীরা। —নিজস্ব চিত্র।

অসমাপ্ত: নির্মীয়মাণ বাড়ির দাওয়ায় শৈলেশের পরিজন-প্রতিবেশীরা। —নিজস্ব চিত্র।

অনেক সাধ করে নিজের গ্রামে বাড়ি তৈরি করছিলেন শৈলেশ সিংহ। আত্মীয় আর প্রতিবেশীদের বলে গিয়েছিলেন, এ বার ফিরে বাড়ির কাজ শেষ করবেন। থাকবেনও ছুটি নিয়ে। কিন্তু থাকা তো দূর, বাড়ির কাজ শেষ করাই হল না মহারাষ্ট্রে বাড়ির ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হওয়া জেট এয়ারওয়েজের সিনিয়র টেকনিশিয়ান শৈলেশের।

জেট এয়ারওয়েজের কর্মী সংগঠনের দাবি, সংস্থার পরিষেবা সাময়িক ভাবে স্থগিতের পরে এই প্রথম কোনও কর্মী আত্মঘাতী হলেন। এমনকি, ভারতেই কোনও উড়ান সংস্থা বন্ধের পরে তার কোনও কর্মীর আত্মহত্যার ঘটনা এই প্রথম। ২০১২ সালের অক্টোবরে দিল্লিতে বন্ধ হয়ে যাওয়া কিংফিশারের এক অফিসারের স্ত্রী আত্মঘাতী হয়েছিলেন। সুইসাইড নোটে জানিয়েছিলেন, ছ’মাস ধরে স্বামী বেতন না পাওয়ায় চূড়ান্ত আর্থিক অনটনে ভুগছিলেন তাঁরা। তাই আত্মহত্যা। শৈলেশও তিন মাস ধরে বেতন পাচ্ছিলেন না। তবে আত্মঘাতী ওই জেট কর্মীর কোনও সুইসাইড নোট পুলিশ পায়নি।

উত্তরপ্রদেশের আজমগড় শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে শৈলেশের গ্রাম কড়ৌধ। ওই গ্রাম মুবারকপুর বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে। লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে যখন শৈলেশের বাড়ির কাছে পৌঁছনো গেল, তখন পুড়িয়ে দেওয়া রোদ আর গরম হাওয়ার জেরে লোকজনের দেখা নেই। গ্রামের রাস্তাঘাট খাঁ খাঁ করছে। ডাকাডাকি করে পাওয়া গেল প্রতিবেশী রামনাগিনা সিংহকে। তিনি চিনিয়ে দিলেন শৈলেশের বাড়ি। নির্মীয়মাণ বাড়ির ইটের খাঁচাটুকু দাঁড়িয়ে রয়েছে বড় নিমগাছের ছায়ায়। এখনও প্লাস্টার হয়নি। বসত বাড়ি তালাবন্ধ।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আগন্তুককে দেখে পাশের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে রাজেশ সিংহ জানালেন, তিনি শৈলেশের আত্মীয়। বললেন, ‘‘১৮-২০ বছর বা তারও বেশি জেটে কাজ করছিলেন শৈলেশ। গত প্রায় তিন বছর শরীরে বাসা বেঁধেছিল মারণ রোগ। সাত-আট মাস ধরে অবসাদে ভুগছিলেন। তার উপর জেটের ঝাঁপ বন্ধ হওয়া নাড়িয়ে দিয়েছিল তাঁকে। কী ভাবে সংসার চলবে, কোথা থেকে আসবে চিকিৎসার খরচ— এই সব চিন্তা ঘুম কেড়ে নিয়েছিল।’’ ইঙ্গিত, সম্ভবত সে কারণেই আত্মহত্যা।

রাজেশের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই আরও আরও কয়েক জন প্রতিবেশী এসে দাঁড়ালেন। জানালেন, সম্ভবত ক্যানসার হয়েছিল শৈলেশের। তারপর থেকে তাঁর মন ভেঙে গিয়েছিল। পঞ্চাশের দোরগোড়ায় পৌঁছে চাকরি খোয়ানোর ধাক্কা আর নিতে পারেননি। প্রতিবেশীরা জানালেন, পরিবারের সকলে এখন মুম্বইয়ে। দেহ সৎকারের কাজ সেরে সম্ভবত রওনা দিয়েছেন। মঙ্গলবার পৌঁছনোর কথা বারাণসীতে। অস্থি বিসর্জন করার কথা সেখানেই।

রামনাগিনার কথায়, ‘‘শৈলেশের দুই ছেলে, দুই মেয়ে। এর মধ্যে এক ছেলে ও এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ওই ছেলে সম্প্রতি জেট সংস্থার কাজে যোগ দেন। ফলে একই সঙ্গে পরিবারের দু’জনের চাকরি যাওয়া শৈলেশকে হয়তো আরও দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল।’’

ঘোমটায় মুখ ঢাকা দুই মহিলা নিজেদের পরিচয় দিলেন শৈলেশের চাচি বলে। বললেন, ‘‘খুব ভাল মানুষ ছিল। গ্রামে আসতে ভালবাসত। প্রতি ছ’মাস বা এক বছরে এক বার অন্তত আসতই। বাড়িও তৈরি করছিল সখ করে। কিন্তু থাকা আর হল না।’’ হাতে লাঠি, ছানি অপারেশনের পরে চোখ কালো চশমায় ঢাকা। কানে কম শোনেন। শৈলেশের প্রসঙ্গ জিজ্ঞাসা করতে সেই চাচাও বললেন, ‘‘যখন পরিবারের লোকজন ফিরে আসবে, তখন কী বলব জানি না। ছেলেমেয়েগুলো পড়াশোনা করছে। মুম্বইয়ে তো প্রচুর খরচ। সংসারটার কী হবে ঈশ্বরই জানেন।’’

শোকের আবহেও আতিথেয়তায় খামতি নেই। নিমতলায় চেয়ার পেতে দিলেন আত্মীয়-প্রতিবেশীরা। ঠান্ডা জলের গ্লাসে চুমুক দেওয়ার আগেই বাধা দিয়ে বললেন, ‘‘পহেলে থোড়া মিঠা তো খাইয়ে!’’ বাড়িতে মিষ্টি ছিল না। এল পেঠা। কিন্তু চারপাশের মুখগুলো দেখে চড়া মিষ্টির পেঠাও তখন তেতো।

(তথ্য সহায়তা: সুনন্দ ঘোষ)

Suicide Jet airways Shailesh Singh Varanasi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy