Advertisement
E-Paper

গাঁধী আশ্রমে চরকা কাটলেন চিনফিং

জন্মদিনে বাড়িতে অতিথি এসেছেন। নৈশভোজে সস্ত্রীক আমন্ত্রণ। তার আগে গৃহস্থ অতিথিকে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন বাড়ির কোথায়, কী ভাবে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। অতিথিও আপ্লুত হয়ে গৃহস্থের আদবকায়দা মেনে চলার চেষ্টা করছেন। হাসি মুখে ঘুরে দেখছেন সব কিছু। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন আমদাবাদের বিকেলবেলা এই সব বিরল মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে রইল। চিনের প্রেসিডেন্ট, সে দেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শি চিনফিং।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৬
সৌহার্দ্য। সাবরমতী নদীর পাড়ে দোলনায় চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার আমদাবাদে।  ছবি: পিটিআই

সৌহার্দ্য। সাবরমতী নদীর পাড়ে দোলনায় চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার আমদাবাদে। ছবি: পিটিআই

জন্মদিনে বাড়িতে অতিথি এসেছেন। নৈশভোজে সস্ত্রীক আমন্ত্রণ। তার আগে গৃহস্থ অতিথিকে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন বাড়ির কোথায়, কী ভাবে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। অতিথিও আপ্লুত হয়ে গৃহস্থের আদবকায়দা মেনে চলার চেষ্টা করছেন। হাসি মুখে ঘুরে দেখছেন সব কিছু।

বিশ্বকর্মা পুজোর দিন আমদাবাদের বিকেলবেলা এই সব বিরল মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে রইল। চিনের প্রেসিডেন্ট, সে দেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শি চিনফিং। পাশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। চিনফিংয়ের প্রথম ভারত সফর। নরেন্দ্র মোদীর বিদেশনীতির আরেকটি বড় পরীক্ষা। কিন্তু আমদাবাদের গাঁধী আশ্রমে চিনফিং যখন খালি পায়ে চরকা কাটতে বসে পড়লেন, তখন এশিয়ার দুই শক্তিশালী রাষ্ট্রের কূটনৈতিক লড়াইয়ের উত্তাপ সাবরমতী নদীর মৃদু হাওয়াতে যেন মিলিয়ে গেল।

দু’দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠক আনুষ্ঠানিক রীতিনীতি মেনেই হয়ে থাকে। তার মধ্যেও ব্যক্তিগত সম্পর্কের উত্তাপ কখনও-সখনও দেখা যায়। আজ চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে সেই ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরিরই চেষ্টা করলেন মোদী। একই সঙ্গে নিজের শহরে দাঁড়িয়ে নিজের রাজ্যের জন্য চিনা লগ্নির বন্দোবস্তও করে ফেললেন। আজই ছিল মোদীর ৬৪-তম জন্মদিন। প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পর এ বারই প্রথম আমদাবাদে এসেছেন তিনি। তাই নিয়ে গোটা আমদাবাদ-গাঁধীনগর জুড়েই ছিল প্রবল উন্মাদনা। তারই মধ্যে চিনের প্রেসিডেন্ট সরাসরি দিল্লিতে না গিয়ে প্রথমে আমদাবাদে এসেছেন। আমদাবাদে পা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চিনের সঙ্গে গুজরাতের তিনটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়ে গেল। যার মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ গুজরাতে চিনের শিল্প পার্ক গড়ার চুক্তি। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেন পটেল বললেন, “সত্যিই আজকে একটা ঐতিহাসিক দিন।”

স্বাগত। বুধবার আমদাবাদে চিনের ফার্স্ট লেডি পেং লিউয়ান
ও প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি:
পিটিআই

কতটা ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করতে পারলেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী?

যথেষ্ট গাঢ়, বলা যেতেই পারে। আমদাবাদের পাঁচ তারা হোটেলে চিনফিংকে স্বাগত জানানো থেকে শুরু। বিকেলে গাঁধী আশ্রম। তারপর সাবরমতী নদীর ধারে ‘ইভনিং ওয়াক’-এর পরে সেখানেই নৈশভোজ। আগাগোড়া নিজেদের মধ্যে কথা বলে গেলেন মোদী ও চিনফিং। কখনও দোভাষীর মাধ্যমে, কখনও নিজেরাই। ভাষার সমস্যা কোনও ভাবেই চিনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়াতে পারল না। আগাগোড়াই চিনফিংয়ের পাশে স্বচ্ছন্দ দেখাল নরেন্দ্র মোদীকে।

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, চিন ও ভারতের এই দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে যথেষ্ট মিল রয়েছে। নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যাঁর জন্ম ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার পরে। একই ভাবে চিনফিং চিনের প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি ১৯৪৯ সালের বিপ্লবের পরে জন্মেছেন। দু’জনেরই বয়স ষাটের ঘরে। ক্ষমতায় কারওরই বেশি দিন হয়নি। চিনফিং ক্ষমতায় এসেছেন এক বছর আগে। আর মোদীর সবে একশো দিন হল। দু’জনের এই মিলকে কাজে লাগিয়েই যেন যাবতীয় মতের অমিল ঢাকার চেষ্টা করলেন মোদী-চিনফিং।

আমদাবাদ-গাঁধীনগর মোদীর নিজের শহর। প্রথমে দিল্লিতে না গিয়ে আগে সেই শহরে এসেছেন চিনফিং। ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ নীতিটি মেনে মোদী আজ তাই যত্ন করে অতিথির আদর-আপ্যায়ন করলেন। প্রথমে গাঁধী আশ্রম। মোদী নিজেই ‘গাইড’ হয়ে চিনফিং-দম্পতিকে সব কিছু ঘুরিয়ে দেখালেন। আশ্রমের বাগানে গাঁধী মূর্তির সামনে হাত জোড় করে প্রণাম করলেন চিনফিং। সেখান থেকে সাবরমতীর ‘রিভারফ্রন্ট’। মোদীর উদ্যোগেই শহরের মধ্যে নদীর তীর সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। চিনফিং ও ফার্স্ট লেডি পেং লিউয়ানকে নিয়ে নদীর পাড়ে দোলনায় বসলেন মোদী। তার পর গুজরাতি গরবা নৃত্য। সন্ধ্যা নামতেই আলোর ফোয়ারায় সেজে উঠল সাজানো নদীর তীর। কখনও গুজরাতি কায়দায় ফুল দিয়ে সাজানো ছাতা মাথায় দিয়ে, কখনও গরবা নাচের সঙ্গে হাততালি দিয়ে তারিয়ে তারিয়ে বিকেলটা উপভোগ করলেন চিনফিং আর তাঁর স্ত্রী।

স্নেহচুম্বন। ৬৪তম জন্মদিনের সকালটা শুরু করলেন মায়ের পা ছুঁয়েই। গেরুয়া কুর্তা
গায়ে চাপিয়ে বুধবার সাত সকালে নিরাপত্তারক্ষী ছাড়াই গাঁধীনগরে মা হীরাবেনের কাছে
পৌঁছে যান নরেন্দ্র মোদী। মিনিট পনেরো কথা হয় মা-ছেলের। ছেলেকে মিষ্টিমুখ করিয়ে
জন্মদিনের উপহার হিসেবে পাঁচ হাজার টাকা দেন ৯৫ বছরের মা। জম্মু-কাশ্মীরে বন্যা দুর্গতদের
জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলেই সেই অর্থ জমা পড়বে বলে সরকারি সূত্রের খবর।
ছবি: পিটিআই

বৃহস্পতিবার থেকে দিল্লিতে কূটনৈতিক স্তরের বৈঠক। সীমান্ত বিবাদ থেকে শুরু করে স্পর্শকাতর বিষয় আলোচনায় আসবে। কিন্তু চিনফিংয়ের সম্মানে আয়োজিত মোদীর নৈশভোজে তার ছায়া পড়ল না।

সাবরমতীর তীরেই তাঁবু খাটিয়ে নৈশভোজ। দেড়শো নিরামিষ পদ। রাজ্যের মন্ত্রী নিতিন পটেল বললেন, “খামান ধোকলার মতো গুজরাতি পদও ছিল।” তাঁবুর অন্দরমহল সাজানো হয়েছিল কচ্ছের তোরণ, শঙ্খেদার কারুকাজ করা আসবাব দিয়ে। মোদীর দিন শেষ হল চিনের ‘ফার্স্ট লেডি’কে চুড়ি উপহার দিয়ে। বাকি পর্ব এ বার দিল্লির দরবারে।

modi xing phing gujarat spin charkha sabarmati ashram mahatma gandhi national news online national news tribute china president
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy