জনসভায় পদপিষ্ট হয়ে ৪১ জনের মৃত্যুর তিন দিন পরে ভিডিয়োমাধ্যমে দেখা দিয়ে শাসক দলের ঘাড়ে দায় চাপানোর পরে এ বারে রাজ্যব্যাপী পদযাত্রা ও সভা করার পরিকল্পনা বাতিল করলেন তামিলনাড়ুর জনপ্রিয় অভিনেতা জোসেফ বিজয়। তাঁর এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহলে। কারুরের সমাবেশে দুর্ঘটনার সময় এবং তার পরের তিন দিন ধরে পর্দার নায়কের ‘অন্তর্ধান’ যে তাঁর ভক্তরাও অনেকে মেনে নিতে পারেননি, তা গত কয়েক দিনে সমাজমাধ্যমে একাধিক পোস্ট এবং সভায় উপস্থিত বিজয়-ভক্তদের অনেকের মন্তব্যে স্পষ্ট। বিজয়ের রাজ্যব্যাপী সভা বাতিলের পরে তাই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি ৪১ জনের মৃত্যুর ঘটনায় রাজনৈতিক জমি কিছুটা নড়ে যাওয়াতেই পিছিয়ে গেলেন তামিল সিনেমার ‘থালাপতি’? কারুরের ঘটনার পর থেকে রাজ্যের কোনও দলই বিজয়ের পাশে দাঁড়ায়নি। ‘একা সব আসনে লড়ব’ বলা বিজয় কি কারুরের ঘটনায় সত্যিই একা হয়ে গেলেন, এই প্রশ্নই এ দিন ঘুরেফিরে এসেছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে।
এমনিতে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা তামিলনাড়ুতে নবগঠিত বিজয়ের দল তামিলাগা ভেটরি কাজ়াঘম (টিভিকে)-র প্রতি নরম মনোভাব দেখালেও রাজ্য নেতারা ততটা নরম হতে এখনই নারাজ। বিজয় তাঁর নতুন দল গড়ার পর থেকে প্রতিটি সভায় নিয়ম করে রাজ্যের শাসক ডিএমকে-কে যতটা আক্রমণ শানিয়েছেন, বিজেপিকে ততটা আক্রমণ করেননি। এই অবস্থায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অঙ্ক হল, বিজয়কে কোনও ভাবে বিরোধী জোটে টানতে পারলে আখেরে গেরুয়া শিবিরেরই লাভ। দক্ষিণের এই রাজ্যে তাদের করুণ দশা কাটবে বলে আশা দিল্লির বিজেপি নেতাদের। যে ভাবে অন্ধ্রপ্রদেশে পবন কল্যাণের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে সে রাজ্যে বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক বেড়েছে, তামিলভূমেও সেই অঙ্কই কষছেন তাঁরা।
কিন্তু রাজ্য বিজেপির আশঙ্কা অন্য জায়গায়। বিজয়ের বিপুল জনপ্রিয়তা বিরোধী ভোটে ভাগ বসালে আখেরে যে শাসক ডিএমকে জোটেরই সুবিধা, সেটা তাদের কাছে স্পষ্ট। কিন্তু দিল্লির নেতাদের ভয়ে আন্নামালাইরা বেশি সুর চড়াতে পারছেন না।
বিজেপির এমন দশা দেখে সুযোগ নিতে ছাড়ছে না অন্য দলগুলি। তাদের বক্তব্য, দুর্ঘটনার পরের দিন এক্স হ্যান্ডলে একটি শোকবার্তা এবং ক্ষতিপূরণের ঘোষণার পোস্ট করেই এত বড় ঘটনার দায় সেরেছেন বিজয়। তার পরে চার দিন ধরে নিজেকে আড়ালে রেখে তার পরে যে ভাবে ডিএমকে এবং মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিনকে আক্রমণ করেছেন, তা মোটেই ভাল ভাবে নেননি রাজ্যের মানুষ। বুধবার ভিসিকে নেতা থোল থিরুমাভালাভন সরাসরিই বলেছেন, ‘‘বিজয়ের আচরণ উস্কানিমূলক! ওঁর কাছে এটা মোটেই কাম্য নয়।’’ তার পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘বিজয় তো শোকপ্রকাশ করেননি, যা করেছেন তাতে মনে হয়নি উনি দুঃখ পেয়েছেন! উল্টে যা বলে বেড়াচ্ছেন, তা উস্কানিমূলক!’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)