Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পাটিল মৃত, কামাল কি ফিরবেন সাক্ষ্য দিতে

দুই প্রত্যক্ষদর্শী। একই জবানবন্দি। সলমন খানের বিরুদ্ধে ২০০২ সালে মুম্বইয়ে গাড়ি চাপা দিয়ে অনিচ্ছাকৃত হত্যার মামলার অন্য টানাপড়েনের মতোই চমকপ্রদ এই দু’জনের কাহিনি। সলমনের জামিনের আবেদনেও উঠে এসেছে কামাল খানের প্রসঙ্গ। দেশান্তরি কামালকে সাক্ষ্য দিতে মুম্বইয়ে আনার কথাও এখন ভাবা হচ্ছে। ২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মুম্বইয়ে বান্দ্রায় এক বেকারির দেওয়ালে ধাক্কা মারে সলমনের টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার। মারা যান এক জন। গাড়িতে তখন কত জন ছিলেন, কে গাড়ি চালাচ্ছিলেন তা নিয়ে ধন্দ তৈরি করা হয়েছে বিস্তর।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৫ ০৩:৪০
Share: Save:

দুই প্রত্যক্ষদর্শী। একই জবানবন্দি। সলমন খানের বিরুদ্ধে ২০০২ সালে মুম্বইয়ে গাড়ি চাপা দিয়ে অনিচ্ছাকৃত হত্যার মামলার অন্য টানাপড়েনের মতোই চমকপ্রদ এই দু’জনের কাহিনি। সলমনের জামিনের আবেদনেও উঠে এসেছে কামাল খানের

প্রসঙ্গ। দেশান্তরি কামালকে সাক্ষ্য দিতে মুম্বইয়ে আনার কথাও এখন ভাবা হচ্ছে।

২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মুম্বইয়ে বান্দ্রায় এক বেকারির দেওয়ালে ধাক্কা মারে সলমনের টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার। মারা যান এক জন। গাড়িতে তখন কত জন ছিলেন, কে গাড়ি চালাচ্ছিলেন তা নিয়ে ধন্দ তৈরি করা হয়েছে বিস্তর। কিন্তু সলমনের তৎকালীন দেহরক্ষী পুলিশ কনস্টেবল রবীন্দ্র পাটিল ও গায়ক-অভিনেতা কামাল খান যে গাড়ির পিছনের আসনে ছিলেন, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই কোনও পক্ষেরই।

ঘটনার পরে পুলিশ ডাকেন পাটিলই। সলমনের বিরুদ্ধে এফআইআরও করেন তিনি। পরে নিজের জবানবন্দিতে জানিয়েছিলেন, সলমন মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তিনি বারণ করা সত্ত্বেও খুব দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছিলেন সলমন।

পরে হঠাৎই উধাও হয়ে যান পাটিল। সলমন খান মামলায় বেশ কয়েক বার কোর্টে হাজিরা না দেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। পরে তাঁকে গ্রেফতার করে আর্থার রোড জেলে পাঠানো হয়। সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, সলমনই গাড়ি চালাচ্ছিলেন— পুলিশকে দেওয়া তাঁর এই বয়ান বদলানোর জন্য প্রবল চাপ দেওয়া হয়েছিল পাটিলকে। তিনি রাজি হননি।

জেল থেকে বেরোনোর পরে পাটিলের আশপাশে দেখা যায়নি তাঁর পরিবারের কাউকে। জেলে যাওয়ার আগে চাকরিও হারান তিনি। ফের বেশ কিছু দিন তাঁর খোঁজখবর পাওয়া যায় না। ২০০৭ সালের অগস্ট মাসে মহারাষ্ট্রের সেওরির রাস্তায় গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় পাওয়া যায় পাটিলকে। স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করার পরে জানা যায়, তাঁর জটিল ধরনের যক্ষ্মা হয়েছে। ওই বছর হাসপাতালেই মারা যান তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত বয়ান বদলাননি পাটিল। বরং তার জোরেই অবশেষে সলমনের শাস্তি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সলমনের গাড়িতে সে দিন ছিলেন কামাল খানও। ‘ওহ হো জানে জানা, ঢুঁড়ে তুঝে দিওয়ানা....’ গানটা মনে আছে অনেকের। সলমন খান-কাজলের ‘প্যার কিয়া তো ডরনা কেয়া’ ছবির সাফল্যের পিছনে এই গানের অবদান অনেকটাই। এই হিট গান দিয়েই বলিউডে কামাল খানের যাত্রা শুরু। ১৯৭২-এ লন্ডনে জন্ম কামালের। সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, সলমনের পরিবারের সঙ্গে দূর সম্পর্কের আত্মীয়তা আছে তাঁর।

১৯৯৯ সালে সব চেয়ে প্রতিশ্রুতিময় প্রতিভা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছিলেন কামাল। কাজ করেছেন এ আর রহমানের সঙ্গেও। তবে বলিউডে প্রথম সারিতে পৌঁছতে পারেননি কখনও। গায়ক হিসেবে অবশ্য নানা দেশে অনুষ্ঠান করেছেন। একই মঞ্চে গান গেয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান গ্রুপ ‘বনি এম’-এর সঙ্গেও। ২০০৫ সালে ‘জো বোলে সো নিহাল’ ছবিতে অভিনেতা হিসেবেও দেখা গিয়েছিল কামালকে।

পুলিশের রেকর্ড বলছে, সলমনের সঙ্গে দুর্ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন কামাল। ঘটনার পরে পুলিশ তাঁর জবানবন্দি নিয়েছিল। তাতে তিনি জানান— সলমনই চালকের আসনে ছিলেন। পিছনের আসনে ছিলেন তিনি আর পাটিল। সলমন মদ্যপ অবস্থায় ভয়ানক জোরে গাড়ি ছোটাচ্ছিলেন।

কিন্তু তার পর থেকেই আর কামালের কোনও খোঁজ মেলেনি। আদালতে সরকার পক্ষের সাক্ষী হিসেবে তাঁকে হাজিরও করা হয়নি। কেন হয়নি, সেটাই আজ সরকার পক্ষের কাছে জানতে চেয়েছে বম্বে হাইকোর্ট। বিষয়টি সরকার পক্ষকে বড় বিড়ম্বনায় ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

আজ সলমনের জামিনের আর্জির শুনানির সময়ে তাঁর কৌঁসুলি অমিত দেশাই জানান, কামাল খান গাড়িতে ছিলেন। কিন্তু তাঁর জবানবন্দি দায়রা আদালত বিবেচনা করেনি। সরকার পক্ষের কাছে কামাল খানকে হাজির না করার কারণ জানতে চায় বেঞ্চ। সরকারি কৌঁসুলি সন্দীপ শিন্দে জানান, কামাল ব্রিটিশ নাগরিক। তিনি সাক্ষ্য দিতে হাজির হননি। সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, কামাল এখন সুইৎজারল্যান্ডের জুরিখে থাকেন। সলমনের বিরুদ্ধে মামলায় আবেদনকারী ও আইনজীবী আভা সিংহ জানিয়েছেন, প্রয়োজনে কামাল খানকে দেশে ফেরাতে তাঁরা আর্জি জানাবেন।

কিন্তু সলমনকে জামিন দিতে কি বাড়তি তৎপরতা দেখানো হয়েছে?

কেউ কেউ বলছেন হয়েছে। এবং তা হয়েছে তিনি সলমন খান বলেই। সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙঘভির সাফ কথা— সলমনের প্রভাব প্রতিপত্তি তাঁর তড়িঘড়ি জামিন পেতে সহায়ক হয়েছে। এই তৎপরতা নজিরবিহীন বলেই তিনি মনে করেন। আর এক আইনজীবী বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সলমনকে জামিন দিতে যে তৎপরতা দেখানো হয়েছে, তা সকলের ক্ষেত্রেই হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না।’’ ভট্টাচার্যও মনে করেন, প্রভাব প্রতিপত্তির কারণেই সলমন জামিন পেয়েছেন।

আবার কে সি মিত্তল বা মজিদ মেমনের মতো আইনজীবীরা মনে করেন, টাকাকড়ি খরচ করে ভাল আইনজীবী রাখার সুবিধাটুকুই পেয়েছেন সলমন। তাঁর ব্যক্তিগত প্রতিপত্তি জামিনের কারণ হয়নি। তাঁদের যুক্তি, সলমনের আইনজীবীরা শাস্তির বিষয়টি আঁচ করে হাইকোর্টে আবেদন ও দ্রুত কাগজপত্র বার করার কাজটি আগেই শুরু করে রেখেছিলেন। সে কারণেই জেলে রাত কাটাতে হল না তাঁদের মক্কেলকে, যিনি সলমন না হয়ে যে কেউই হতে পারতেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE