২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জবাব। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ উপমহাদেশে সন্ত্রাস কমাতে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন গত কাল। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জম্মু-কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলার রাজবাগ থানায় হামলা চালাল জঙ্গিরা। পাক মদতপুষ্ট লস্কর-ই-তইবার সদস্যেরাই এই হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের।
আজ সকালে এই হামলা নিয়ে বিধানসভায় প্রশ্নের মুখে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সঈদ। পাকিস্তান, জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি তাঁর নরম মনোভাবই জঙ্গিদের সুবিধে করে দিচ্ছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস।
গত কাল জয়পুরে এক সন্ত্রাস-দমন সংক্রান্ত সম্মেলনে রাজনাথ জানান, পাকিস্তান সন্ত্রাসকে রাষ্ট্রীয় নীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা বন্ধ না করলে উপমহাদেশে শান্তি আসবে না। তার পরেই আজ হামলা চালাল আত্মঘাতী জঙ্গিরা।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই জঙ্গিরা পাহাড়পুর, ববিয়ান বা পনসর মনিয়ারি দিয়ে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়ে। এর আগে দয়লাচক ও সাম্বা সেনা ছাউনিতে হামলার সময়েও জঙ্গিরা ওই পথেই ভারতে এসেছিল। সূত্রের খবর, ভারতে ঢোকার পরে মোটরসাইকেল ও অটোয় জঙ্গিরা দয়ালচক পৌঁছয়। সেখান থেকে দু’টি লরি কব্জা করে তারা। চালকদের বাধ্য করা হয় রাজবাগ থানায় যেতে। তখন জঙ্গিরা ভারতীয় সেনার পোশাক পরে ছিল। থানার রক্ষী লরি থামালে জঙ্গিরা বলে তারা দু’জন অভিযুক্তকে ধরে এনেছে।
ওই কথা শোনার পরে রক্ষী থানার দরজা খুলতেই গুলি চালিয়ে তাঁকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তাদের গুলিতে নিহত হন এক স্থানীয় বাসিন্দাও। এর পরে থানা লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়ে জঙ্গিরা। তার পরে শুরু হয় এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ। আচমকা হামলায় কিছুটা বেকায়দায় পড়লেও জবাব দেয় নিরাপত্তাবাহিনী। আহত সিআরপি জওয়ান সুরেশ প্রভু জানিয়েছেন, লড়াইয়ের শুরুতেই এক জঙ্গি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়।
কিন্তু থানায় ঢুকে পড়া দ্বিতীয় জঙ্গিকে কব্জা করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে বাহিনীকে। রাজবাগে দ্রুত অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানো হয়। প্রায় দুপুর নাগাদ নিহত হয় দ্বিতীয় জঙ্গি। ততক্ষণে প্রাণ হারিয়েছেন দুই সিআরপি জওয়ান-সহ তিন নিরাপত্তাকর্মী। আহত ১১ জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের এক ডেপুটি সুপারও।
এখন জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার অধিবেশন চলছে। ফলে আজ ভোরে হওয়া জঙ্গি হামলা নিয়ে পিডিপি-বিজেপি সরকারকে চেপে ধরেন বিরোধীরা। প্রসঙ্গটি প্রথমে তোলেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের বিধায়ক দেবেন্দ্র রানা। রাজ্য কী ব্যবস্থা নিচ্ছে তা জানতে চান তিনি। রাজ্যের তরফে জবাব দেন উপ-মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা নির্মল সিংহ। তাঁর জবাবে খুশি হননি বিরোধীরা। মুফতি মহম্মদ সঈদের জঙ্গিদের প্রতি নরম মনোভাব নিয়ে ইতিমধ্যেই বিজেপি-পিডিপি জোটকে আক্রমণ করেছেন তাঁরা।
আজ লোকসভায় কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে সরাসরি জানতে চান, মুফতি সরকারের জঙ্গিদের মুক্তি দেওয়ার নীতিই সন্ত্রাস বাড়াচ্ছে কিনা। রাজনাথ সিংহকে উদ্দেশ করে খড়্গে বলেন, “হয় আপনাদের মুখ্যমন্ত্রী আপনাদেরই কথা শুনছেন না। অথবা আপনাদের কোনও পদক্ষেপ করার ক্ষমতা নেই।” রাজনাথ অবশ্য খড়্গের কথার জবাব না দিয়ে সংঘর্ষের তথ্য জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, “এই সভার উচিত রাজ্য পুলিশ ও সিআরপি-র জওয়ানদের বীরত্বের প্রশংসা করা।” তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আশঙ্কা, শীতের শেষে বরফ গলতেই আরও বহু জঙ্গি ভারতে ঢুকবে। তাই সতর্ক করা হয়েছে বিএসএফ-কে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy