Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
National News

১২ লাখের বিনিময়ে জঙ্গিদের দিল্লি পৌঁছতে যাচ্ছিলেন কাশ্মীরের ডিএসপি!

জঙ্গিদের দিল্লিতেই কেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা।

ধৃত জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিএসপি দেবেন্দ্র সিংহ। —ফাইল চিত্র

ধৃত জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিএসপি দেবেন্দ্র সিংহ। —ফাইল চিত্র

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২০ ১৬:৪৯
Share: Save:

রফা হয়েছিল ১২ লক্ষ টাকায়। তার বিনিময়ে জম্মু-কাশ্মীর থেকে তিন জঙ্গিকে পৌঁছে দিতে হবে দিল্লিতে। জঙ্গিদের সঙ্গে একই গাড়িতে গ্রেফতার জম্মু-কাশ্মীরের ডিএসপি দেবেন্দ্র সিংহ সম্পর্কে এমনই বিস্ফোরক তথ্য পেয়েছেন বলে দাবি তদন্তকারী পুলিশ অফিসার এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের। যদিও দেবেন্দ্রর সাফাই, ওই তিন জঙ্গির আত্মসমর্পণের বন্দোবস্ত করতেই তাদের সঙ্গে গাড়িতে যাচ্ছিলেন তিনি। এই দাবি একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।

ওই জঙ্গিদের দিল্লিতেই কেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা। সামনেই প্রজাতন্ত্র দিবস। ওই সময় কোনও জঙ্গি হামলার ছক ছিল কি না, ধৃতদের জেরা করে জানার চেষ্টা চলছে। পরিকল্পিত নাশকতার আগে, রেইকি করে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে জঙ্গি সংগঠনগুলো। সেই কাজেও দেবেন্দ্র জঙ্গিদের দিল্লি পৌঁছে দিতে যেতে পারেন বলে সন্দেহ রয়েছে তদন্তকারীদের।

গত শনিবার, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে দক্ষিণ কাশ্মীরের কুলগামের ওয়ান পো এলাকায় একটি গাড়ি আটকায় পুলিশ। ওই গাড়িতে তিন জঙ্গির সঙ্গে ছিলেন জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিএসপি দেবেন্দ্র সিংহ। সেটি দেবেন্দ্রর ব্যক্তিগত গাড়ি ছিল।

গাড়িতে ধৃত তিন জঙ্গির মধ্যে রয়েছে হিজবুল মুজাহিদিন কমান্ডার সৈয়দ নাভিদ মুস্তাক ওরফে বাবু এবং রফি রাঠের। ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের পর দক্ষিণ কাশ্মীরের আপেল বাগানে ট্রাকচালকদের খুনে মূল অভিযুক্ত এই নাভিদ মুস্তাক। এ ছাড়া ধরা পড়ে কাশ্মীরের বাসিন্দা ইরফান শফি মির। এই শফি মির পেশায় আইনজীবী ছিল। পরে জঙ্গি দলে যোগ দেয় বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন, শফি মির অন্তত পাঁচ বার পাকিস্তান ঘুরে এসেছে।

জঙ্গিদের সঙ্গে উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তা ধরা পড়ার পর থেকেই, তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে উপত্যকার পুলিশ মহল এমনকি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের মধ্যেও। আপাতত দেবেন্দ্র ও জঙ্গিদের জেরা করে আরও তথ্য জোগাড়ের চেষ্টা চালাচ্ছে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ এবং একাধিক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।

তদন্তকারী অফিসারদের সূত্রে খবর, জম্মু-কাশ্মীর হাইওয়ের উপর বানিহাল টানেল পার করিয়ে দেওয়ার জন্য ১২ লক্ষ টাকায় জঙ্গিদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল দেবেন্দ্রর। তিনি নিজে গাড়িতে থাকলে কেউ আটকাবে না, এই ভেবেই জঙ্গিদের সঙ্গে সওয়ার হয়েছিলেন। সেই ১২ লক্ষ টাকার মধ্যে কতটা অগ্রিম পেয়েছিলেন বা আদৌ কোনও টাকা নিয়েছিলেন কি না, তা জানতে দেবেন্দ্রর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যাচাই করার প্রক্রিয়া চলছে বলে তদন্তকারীদের সূত্রে খবর।

দেবেন্দ্রর অবশ্য দাবি, ওই জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতেই তিনি একই গাড়িতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্তকারী এক অফিসার বলেন, ‘‘পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থার কাউকেই নিজের পরিকল্পনার কথা জানাননি দেবেন্দ্র।’’ তদন্তকারীদের দাবি, ধৃত দুই হিজবুল জঙ্গিও জানিয়েছে, এই আত্মসমর্পণের বিষয়ে কিছুই জানত না তারা। যদিও শফি মির পুলিশি জেরায় ধৃত ডিএসপি-র মতোই দাবি করেছে, আত্মসমর্পণ করতেই তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

তদন্তে আরও উঠে এসেছে— এই প্রথম নয়, আগে আরও অন্তত পাঁচটি ক্ষেত্রে জঙ্গিদের সাহায্য করেছেন দেবেন্দ্র। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বানিহাল টানেল পার করে জঙ্গিদের জম্মুতে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন। শনিবার ধরা পড়া তিন জনকে নিজের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার আগে, নিজের বাড়িতেই তিনি তিন জনকে রেখেছিলেন বলেও জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।

তবে দেবেন্দ্র যাই দাবি করুন, তাঁকে আপাতত জঙ্গি হিসেবেই দেখছেন তদন্তকারীরা। সেই ভাবেই তদন্ত প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘উনি যা করেছেন, তা সম্পূর্ণ বেআইনি। সেই কারণেই তাঁকে জঙ্গি ধরে নিয়েই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jammu And Kashmir Davinder Singh Hizbul Mujahideen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE