Advertisement
E-Paper

বিচারপতি নিয়োগে দুর্নীতি, সরব কাটজু

ইউপিএ জমানায় বিচারপতি নিয়োগেও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে নতুন বিতর্ক তৈরি করলেন প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান মার্কন্ডেয় কাটজু। চরম অস্বস্তিতে পড়ে কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, ঘটনার এত বছর পরে কেন এ বিষয়ে মুখ খুললেন কাটজু। কাটজুর অতীত ভূমিকার কথা মাথায় রেখে সতর্ক বিজেপি অবশ্য এখনই এ নিয়ে সরব হচ্ছে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৭

ইউপিএ জমানায় বিচারপতি নিয়োগেও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে নতুন বিতর্ক তৈরি করলেন প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান মার্কন্ডেয় কাটজু। চরম অস্বস্তিতে পড়ে কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, ঘটনার এত বছর পরে কেন এ বিষয়ে মুখ খুললেন কাটজু। কাটজুর অতীত ভূমিকার কথা মাথায় রেখে সতর্ক বিজেপি অবশ্য এখনই এ নিয়ে সরব হচ্ছে না।

সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি কাটজুর অভিযোগ, মাদ্রাজ হাইকোর্টের এক অতিরিক্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তাঁর মেয়াদ বাড়িয়েছিল কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার। কারণ তা না করলে সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেবে বলে হুমকি দিয়েছিল দক্ষিণের এক শরিক দল। ফলে সরকার বাঁচাতে ওই বিচারপতির মেয়াদ একাধিক বার বাড়াতে বাধ্য হয় মনমোহন সিংহের সরকার। কাটজুর অভিযোগ, ওই বিচারপতি পরে দক্ষিণের ওই দলের এক নেতার জামিনও মঞ্জুর করেছিলেন।

কাটজু নাম না নিলেও দক্ষিণের দলটি যে করুণানিধির ডিএমকে, সেটা সকলের কাছেই স্পষ্ট। ডিএমকে কাটজুর অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও, জয়ললিতার এডিএমকে রাজ্য রাজনীতিতে তাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিশানা করার এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি। সংসদের উভয় কক্ষেই আজ তাদের সাংসদরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত ও আলোচনার দাবি তোলেন। রাজ্যসভায় তাঁদের হইচইয়ে দফায় দফায় মুলতুবি করতে হয় অধিবেশন।

কাটজুর অভিযোগে স্বাভাবিক ভাবেই চরম অস্বস্তিতে কংগ্রেস। দলের নেতা রশিদ আলভির প্রশ্ন, বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে কাটজুর এত বছর লাগল কেন? কাটজুর জবাব, “সময়টা বড় কথা নয়। তদন্ত করে দেখা হোক, আমার অভিযোগ সত্যি কি না।” একটি টিভি চ্যানেল আলভির প্রশ্নটাই তোলে তাঁর কাছে। ধৈর্য হারিয়ে কাটজু সাক্ষাৎকারের মাঝপথেই উঠে চলে যান।

কাটজুর অভিযোগটি কী?

সংবাদমাধ্যমের কাছে কাটজু দাবি করেছেন, প্রথম ইউপিএ সরকারের শেষ পর্বে মাদ্রাজ হাইকোর্টের ওই অতিরিক্ত বিচারপতির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের কাছে দরবার করেছিলেন তামিলনাড়ুর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় যাওয়ার জন্য দিল্লি বিমানবন্দরে পৌঁছলে সেখানেই ওই মন্ত্রী তাঁকে বলেন, মেয়াদ না বাড়ানো হলে তিনি নিউ ইয়র্ক থেকে ফিরে এসে দেখবেন তাঁর সরকার পড়ে গিয়েছে! কারণ তাঁদের দল সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেবে। কাটজুর কথায়, “তখন প্রধানমন্ত্রী দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যান। সে সময় এক বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বাস দেন, তিনি বিষয়টি সামলে নেবেন। এর পর ওই কংগ্রেস নেতা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আর সি লাহোটির সঙ্গে দেখা করে সরকারের সঙ্কটের কথা জানান। তখন লাহোটি ওই বিচারপতির কার্যকাল এক বছর বাড়ানোর নির্দেশ দেন। এর পর প্রধান বিচারপতি হন ওয়াই কে সাভারওয়াল। তিনিও এক-দু’বার ওই অতিরিক্ত বিচারপতির মেয়াদ বাড়িয়েছেন। এর পর কে জি বালকৃষ্ণন প্রধান বিচারপতি হলে তিনি ওই ব্যক্তিকে অন্য হাইকোর্টে পূর্ণ সময়ের বিচারপতি নিয়োগ করেন।

কাটজুর প্রশ্ন, ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার প্রমাণ রয়েছে এই মর্মে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি লাহোটিকে রিপোর্ট দিয়েছিল গোয়েন্দা দফতর। এমনকী প্রথমে ওই বিতর্কিত বিচারপতির নিয়োগে আপত্তি জানায় লাহোটি-সহ তিন সদস্যকে নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামও। তা সত্ত্বেও কেন ওই ব্যক্তির মেয়াদ বাড়ানো হল?

কাটজু যে সময়ের কথা বলছেন, তখন আইনমন্ত্রী ছিলেন হংসরাজ ভরদ্বাজ। তাঁর বক্তব্য, “দক্ষিণী দলটির ১৮ জন সাংসদ ওই বিচারপতির হয়ে সওয়াল করতে এসেছিলেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, তফসিলি জাতির প্রতিনিধি বলে ওই বিচারপতির সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে। আমি তাঁদের জানিয়ে দিই, ওই নিয়োগে সরকারের কোনও প্রত্যক্ষ ভূমিকা নেই। সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।”

নীরবতার কারণে বারবার বিজেপি ও অন্য বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়া মনমোহন এখন রাজ্যসভার সদস্য। সেখানে কাটজুর অভিযোগ নিয়ে দক্ষিণী সাংসদরা সরব হলেও মুখ খোলেননি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, প্রাক্তন আইনমন্ত্রীই তাঁর সরকারের বক্তব্য এবং অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন। কাটজু অভিযোগ এনেছেন সুপ্রিম কোর্টের তিন জন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে। তাঁদের অন্যতম লাহোটি বলেন, “আমি কী করেছি, আর কী করিনি, সব নথিভুক্ত রয়েছে। আমি জীবনে কোনও অন্যায় করিনি।” আর বালকৃষ্ণনের মন্তব্য, “ওই ব্যক্তির নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। এ বিষয়ে বিচারপতি পাসায়তের রায়ও রয়েছে।”

বিজেপি বিষয়টি নিয়ে সরকারি ভাবে মুখ না খুললেও জানিয়েছে, কাটজুর অভিযোগেই স্পষ্ট যে, বিচারপতি নিয়োগে অস্বচ্ছতা রয়েছে। এ কারণেই তারা বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে জুডিশিয়াল কমিশন গড়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। বিজেপির এখনই সরব না হওয়ার পিছনে একটি বড় কারণ হল ব্যক্তি কাটজুর ভূমিকা। অতীতে প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান হিসেবে বিজেপিকে বহু বার বিপাকে ফেলেছেন তিনি। ফলে এখন কংগ্রেসের দুর্নীতি নিয়ে সরব হলেও পরে যে তিনি অন্য কোনও বিষয়ে বিজেপিকে নিশানা করবেন না, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই বলেই মনে করছে বিজেপি। তাদের বক্তব্য, ব্যক্তি কাটজু নন, তাঁর অভিযোগটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সে দিকে নজর দেওয়া হোক।

Markandey Katju corruption pci chairman justice appointment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy