Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Indian Railways

কথা না বলেই ট্রেন, মমতার সুরে প্রতিবাদী কেরলও

কেরলের সরকার সরাসরি প্রশ্ন তুলছে, রেল কি ‘করোনা সংক্রমকে’র দায়িত্ব নিয়েছে?

পরিযায়ী শ্রমিকদের একটি ট্রেন জবলপুরে এসে দাঁড়াতেই খাবারের প্যাকেট নিয়ে এগিয়ে এলেন এক স্বেচ্ছাসেবী কর্মী। জানলা দিয়ে বেরিয়ে এল বহু হাত। বুধবার। পিটিআই

পরিযায়ী শ্রমিকদের একটি ট্রেন জবলপুরে এসে দাঁড়াতেই খাবারের প্যাকেট নিয়ে এগিয়ে এলেন এক স্বেচ্ছাসেবী কর্মী। জানলা দিয়ে বেরিয়ে এল বহু হাত। বুধবার। পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২০ ০৪:৪৯
Share: Save:

রাজ্যের সঙ্গে পরামর্শ না করে ভিন্ রাজ্য থেকে যথেচ্ছ ট্রেন পাঠিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরালে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যাবে বলে গোড়া থেকেই এই আপত্তি জানিয়ে আসছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার কার্যত একই সুরে কেন্দ্রের ট্রেন পাঠানোর ধরন নিয়ে আপত্তি তুলল পিনারাই বিজয়নের কেরল সরকার। বাংলার মতো কেরল সরকারেরও অভিযোগ, কেন্দ্রের ট্রেন পাঠানোর ধাক্কায় রাজ্যে করোনা প্রতিরোধের কাঠামো এলোমেলো হয়ে যাবে।

লকডাউনের মধ্যে অন্যান্য রাজ্যে আটকে থাকা রোগী, পড়ুয়া ও শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য দাবি উঠছিল বিভিন্ন মহল থেকেই। সরব ছিল বিরোধীরাও। আবার সরকারি কোনও ব্যবস্থা না পেয়ে দলে দলে পরিযায়ী শ্রমিক পায়ে হেঁটে বাড়ির পথে রওনা দিচ্ছিলেন, দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছিল। এই সার্বিক চাপের মুখে বাংলায় তৃণমূলের সরকার শ্রমিকদের ফেরানোর জন্য রেলের সঙ্গে কথা বলে ট্রেনের ব্যবস্থা করতে শুরু করে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বারেবারেই বলে এসেছেন, রাজ্যকে তার নিজের পরিকাঠামো বুঝে ট্রেন নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দিতে হবে। অথচ রেল তার ইচ্ছামতো ট্রেন পাঠাতে শুরু করে দিচ্ছে, রাজ্য তার খবর পাচ্ছে পরে। এ ভাবে চলতে থাকলে রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাবে। গত কয়েক দিনে শ্রমিকদের নিয়ে ট্রেন ঢুকতে শুরু করার পরে জেলায় জেলায় সংক্রমণের মাত্রা যে ভাবে বেড়েছে, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর আশঙ্কাই সত্য প্রমাণিত হয়েছে বলে সরকারি মহলের বক্তব্য। করোনা মোকাবিলায় দেশের মধ্যে এবং বিদেশেও সমাদৃত হয়েছে যে কেরল, তাদের তরফেও একই রকম সুর শোনা যাওয়া এ বার তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।

কেরলের সরকার সরাসরি প্রশ্ন তুলছে, রেল কি ‘করোনা সংক্রমকে’র দায়িত্ব নিয়েছে? মহারাষ্ট্র থেকে ট্রেন রওনা হয়ে যাওয়ার পরে তারা সেই খবর পেয়েছে, এমনই অভিযোগ কেরলের। বিষয়টি নিয়ে রেল মন্ত্রকের কাছে কড়া আপত্তিও জানিয়েছে রাজ্য সরকার। কেরলের অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাকের বক্তব্য, ‘‘ভিন্ রাজ্য থেকে যাঁরা ফিরবেন, তাঁদের জন্য একটা পদ্ধতি রাজ্য সরকার চালু করেছে। যাঁরা ফিরতে চান, রাজ্যের পোর্টালে নাম লেখালে সরকারি প্রতিনিধি গিয়ে তাঁদের বাড়িতে দেখে আসবেন কোয়রান্টিনের সুযোগ আছে কি না। বাড়িতে তেমন ব্যবস্থা না থাকলে সরকারি কোয়রান্টিনে পাঠানো হবে। ট্রেন থেকে নামলে প্রাথমিক পরীক্ষা করে তার জন্য পাস দেওয়া হবে। কিন্তু রেলের হঠকারিতার জন্য এই ব্যবস্থাটাই কার্যকর করার সুযোগ হারাতে বসেছে। তা হলে করোনার সুষ্ঠু মোকাবিলা হবে কী ভাবে?’’

আরও পড়ুন: উচ্চস্তরীয় বৈঠকে জেনারেল নরবণে, লাদাখে বড় সৈন্য সমাবেশ ভারতের

এই পরিস্থিতিতে এ রাজ্যের বিরোধী সিপিএম ও কংগ্রেস মূলত কাঠগড়ায় তুলছে কেন্দ্রকেই। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের কথায়, ‘‘যাঁরা চিকিৎসা করাতে বা নির্দিষ্ট কোনও কাজে গিয়ে আটকে পড়েছেন, তাঁদের কথা আলাদা। কিন্তু শ্রমিকেরা যে যে রাজ্যে আছেন, সেখানেই থাকতে পারতেন যদি কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে তাঁদের রাখার সুষ্ঠু ব্যবস্থা করত।’’ একই সুরে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘সবই কেন্দ্রের অপরিকল্পিত লকডাউনের ফল। একলপ্তে না ফিরিয়ে দফায় দফায় ভিন্ রাজ্য থেকে ফেরানোর যে কথা মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, আমরা তার বিরোধিতা করিনি। কেন্দ্র দায় নেবে না, রাজ্য কোয়রান্টিনের ব্যবস্থা করবে না— তা হলে শ্রমিকেরা যাবেন কোথায়? ফেরত শ্রমিকদের রাখার জন্য স্কুলবাড়ি বা কমিউনিটি হল কাজে লাগানো যেত। এখন সংক্রমণের দায় আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে সেটা সস্তা রাজনীতি হবে!’’

আরও পড়ুন: দুর্বিপাকের ২০২০: ব্যাপক বিপর্যয়ের চক্রব্যূহে গোটা দেশ

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য রাজ্যকেই পাল্টা আক্রমণ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাজ্য বলেছিল ২৬ মে পর্যন্ত ট্রেন না পাঠাতে। যেই ২৭ তারিখ এল, আবার কান্নাকাটি শুরু হয়ে গেল! উত্তরপ্রদেশ যদি চারশোর বেশি ট্রেন নিয়ে কয়েক লক্ষ লোককে ফিরিয়েও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে, অন্য রাজ্য পারবে না কেন?’’ রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘গোটা রাজ্যটাকেই ‘রেড জ়োন’ করে তুলে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চায় কেন্দ্র! আমরাও চাই, ঘরের ছেলেরা ফিরে আসুক। কিন্তু তার জন্য পরিকল্পনা করতে দিতে হবে রাজ্যকে। আমরা চেষ্টা করব, এর মধ্যেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE