পিনারাই বিজয়ন। ফাইল চিত্র।
মাত্র গত মাসেই পার্টি কংগ্রেসের আসরে উন্নয়নের ‘কেরল মডেল’কে বিকল্প হিসেবে তুলে ধরার কথা বলেছিল সিপিএম। তার পরে উন্নয়নের চিত্র দেখতে গুজরাতে সরকারি প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে সিপিএমের জন্যই বিড়ম্বনার কারণ হল পিনারাই বিজয়নের সরকার! দলীয় সূত্রের খবর, কেরল সরকারের এমন সিদ্ধান্তে অসন্তোষের কথা দলের রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাঁদের মতে, এমন একটি পদক্ষেপ করে বিজেপির হাতে প্রচারের হাতিয়ার তুলে দেওয়ার কোনও প্রয়োজন ছিল না।
কেরলের মুখ্যসচিব ভি পি জয়ের নেতৃত্বে একটি সরকারি প্রতিনিধিদল গুজরাতে গিয়েছিল সে রাজ্যে উন্নয়ন সংক্রান্ত সরকারি ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে। সরকারি ভাবে বলা হয়েছিল, বিভিন্ন রাজ্যেই উন্নয়নের কাজ পরিচালনার ব্যবস্থা দেখার জন্য দল পাঠানো হবে। এর মধ্যে আলাদা কোনও রাজনৈতিক তাৎপর্য নেই। কিন্তু বাম-শাসিত কেরল সরকারের গুজরাতে দল পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে আসরে নেমে পড়তে দেরি করেনি বিজেপি। তারা বলতে শুরু করেছে, যে ‘গুজরাত মডেল’কে উঠতে বসতে তুলোধোনা করে সিপিএম, তারাই এখন মেনে নিচ্ছে যে, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের রাজ্যের উন্নয়নই শেখার মতো! মুখে অন্য কথা বললেও ভিতরে ভিতরে বোধোদয় হয়েছে সিপিএমের!
বিজেপির এমন প্রচার শুরু হতেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে সিপিএমের কেন্দ্রীয় স্তরে। কেরলের কান্নুরে দলের ২৩তম পার্টি কংগ্রেসে গিয়ে সিপিএমের শীর্ষ নেতারা বিজয়ন সরকারের উন্ননের মডেলের কথা গোটা দেশে তুলে ধরার কথা বলে এসেছিলেন। বিজয়নের দ্বিতীয় সরকারের কাজ নিয়ে পার্টি কংগ্রেসের সময়েই ফলাও করে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা হয়েছিল। তার পরে গুজরাতে সরকারি দল পাঠানো বিজেপির কাজের ধারার বিরুদ্ধে তাঁদের প্রতিবাদের ধার কমিয়ে দেওয়ার কারণ হয়েছে বলে মনে করছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি স্বয়ং কেরল সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বকে অসন্তোষ ও বিড়ম্বনার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যে তার প্রভাব সম্পর্কে ভাবনা-চিন্তা করা উচিত ছিল, সে কথা দলের সাধারণ সম্পাদক রাজ্য নেতৃত্বকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন বলেই সিপিএম সূত্রের খবর। রাজ্য নেতৃত্বের তরফে তাঁকে জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বিদেশ থেকে ফিরলে বিষয়টি আলোচনা করা হবে।
বিড়ম্বনা সামাল দিতে আপাতত আসরে নামতে হয়েছে সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা এস রামচন্দ্র পিল্লাইকে। পলিটবুরো থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পরে তিনি এখন তিরুঅনন্তপুরমে দলের রাজ্য কেন্দ্রেই কাজ করছেন। পিল্লাই বলছেন, ‘‘গুজরাতে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন কী পর্যায়ে আছে, তা এক ঝলকে বুঝে নেওয়ার জন্য ড্যাশবোর্ড আছে। ওই ড্যাশবোর্ডের ব্যবস্থা বুঝতেই সরকারি দল পাঠানো হয়েছিল।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘গুজরাতে সাম্প্রদায়িক আক্রোশ বা বুলডোজ়ার ব্যবস্থা বুঝে দেখার কোনও প্রয়োজন আমাদের নেই! তার জন্য দল পাঠানোও হয়নি।’’ বিজেপির কেরল রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রন অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না। তাঁর মন্তব্য, ‘‘মুখে ওঁরা গুজরাতের উন্নয়নের কথা মানতে চান না। কিন্তু গুজরাত যে সত্যিই উন্নয়নে পথ দেখিয়েছে, বিজয়ন তাঁর মুখ্যসচিবকে সেখানে পাঠিয়ে তা মেনে নিয়েছেন!’’
সিপিএমের এক পলিটবুরো সদস্যের কথায়, ‘‘ড্যাশবোর্ড দেখতে দল গিয়েছিল নাকি অন্য কিছু, এই খুঁটিনাটি মানুষকে বোঝানো কঠিন। জনমানসে বার্তা গেল, গুজরাতে উন্নয়নের কাজ দেখতে কেরলের সরকারের লোক গিয়েছে। এই সময়ে যা অনভিপ্রেত ছিল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy