Advertisement
০২ মে ২০২৪
kerala

Kerala: লোকায়ুক্তের ক্ষমতা খর্বের চেষ্টা, বিতর্কে কেরল সরকার

রাজ্যের এলডিএফ সরকার অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) এনে লোকায়ুক্ত আইনে কিছু সংশোধন করতে চাইছে।

অধ্যাদেশ আটকানোর দাবি  নিয়ে রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানের কাছে কংগ্রেস-সহ কেরলের ইউডিএফ নেতৃত্ব।

অধ্যাদেশ আটকানোর দাবি নিয়ে রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানের কাছে কংগ্রেস-সহ কেরলের ইউডিএফ নেতৃত্ব। ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:৩০
Share: Save:

বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না পিনারাই বিজয়নের দ্বিতীয় ইনিংসে! দ্রুতগামী রেল প্রকল্প ‘সিলভার লাইন’ নিয়ে ঘনীভূত বিতর্কের মধ্যেই এ বার নতুন প্রশ্ন উঠেছে কেরলে লোকায়ুক্তের ক্ষমতা কমানোর উদ্যোগকে ঘিরে। রাজ্যের এলডিএফ সরকার অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) এনে লোকায়ুক্ত আইনে কিছু সংশোধন করতে চাইছে। শাসক জোটের শরিক অন্য বাম দল এবং বিরোধী কংগ্রেস, বিজেপি— ঘরে ও বাইরে বিভিন্ন পক্ষ বাম সরকারের এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব। অধ্যাদেশে সই না করার আর্জি জমা পড়েছে রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানের কাছে।

কেরল সরকারের বিতর্কিত ওই অধ্যাদেশে যা বলা হয়েছে, তার অর্থ, দক্ষিণী ওই রাজ্যে লোকায়ুক্তের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া এর পর থেকে আর বাধ্যতামূলক থাকবে না। সরকার তা গ্রহণ করতে পারে, আবার না-ও করতে পারে। লোকায়ুক্তের রায়ের বিরুদ্ধে অভিযুক্ত পক্ষ ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের’ কাছে আবেদন করতে পারবে। তিন মাসের মধ্যে শুনানি করে ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ’কে তাদের মত জানাতে হবে। অন্যথায় ধরে নেওয়া হবে, লোকায়ুক্তের সিদ্ধান্তই মেনে নেওয়া হচ্ছে। এখানে ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ’ বলতে আবেদনের শুনানি করার ক্ষমতা দিতে চাওয়া হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য সরকারকেই। এই নতুন সংস্থান নিয়েই বিতর্ক এখন চরমে।

সরকার ও শাসন যন্ত্রের মধ্যে দুর্নীতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় স্তরে লোকপাল এবং রাজ্য স্তরে লোকায়ুক্তকে কার্যকর রাখার পক্ষে নীতিগত ভাবে বরাবরই সরব সিপিএম। সেই দলেরই পরিচালিত সরকার কেরলে কেন লোকায়ুক্তের ক্ষমতা খর্ব করতে চাইছে, সেই প্রশ্ন তুলেই ময়দানে নেমেছেন বিজেপি এবং কংগ্রেস নেতারা। বিজেপির রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রনের অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর দুর্যোগ মোকাবিলা তহবিল থেকে উপযুক্ত কারণ ছাড়াই কিছু ব্যক্তিকে সহায়তা দেওয়ার যে অভিযোগ রয়েছে, ঠিকমতো তদন্ত হলে ওই ঘটনায় লোকায়ুক্তের রায় সরকারের পক্ষে যাবে না। রাজ্য সরকার তাই নিজেদের মুখরক্ষার জন্য লোকায়ুক্তের ক্ষমতা কাড়তে চাইছে!’’ রাজ্যের আইনমন্ত্রী পি রাজীব অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন, কেরল হাই কোর্টের একটি রায়ে বলা হয়েছিল, লোকায়ুক্ত সুপারিশ করতে পারে, নির্দেশ দিতে পারে না। কেরলে যে আইন ১৯৯৯ সাল থেকে চালু আছে, তাতে লোকায়ুক্তের নির্দেশের বিরুদ্ধে আবেদন করার সুযোগ ছিল না। হাই কোর্টের রায় মাথায় রেখে এখন সেই সংস্থান আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে রাজ্যপাল আরিফের কাছে গিয়েছিলেন ইউডিএফের প্রতিনিধিরা। সেই দলে ছিলেন বিরোধী দলনেতা ভি ডি সতীশন, কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উম্মেন চান্ডি, প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা রমেশ চেন্নিতালা, ফরওয়ার্ড ব্লকের জাতীয় সম্পাদক জি দেবরাজন প্রমুখ। সতীশনের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘লোকায়ুক্তের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হলে তাতে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু সেই আবেদন হাই কোর্টে হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী বা সরকারের কাছে কেন হবে? লোকায়ুক্ত আধা-বিচারবিভাগীয় একটা সংস্থা, যার মাথায় থাকেন প্রাক্তন বিচারপতি। তাঁদের রায়ের উপরে আবার সরকার কী ভাবে রায় দেবে?’’ রাজ্যপাল আরিফ তাঁদের বলেছেন, তিনিও অধ্যাদেশ হাতে পেয়ে আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন।

এমন পদক্ষেপে টানাপড়েন বেধেছে বামেদের ফ্রন্ট এলডিএফের অন্দরেও। নিয়োগে স্বজনপোষণের অভিযোগে বিগত বাম সরকারের উচ্চ শিক্ষা ও সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী কে টি জলিলের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল লোকায়ুক্ত। জলিল তখন ইস্তফা দিয়েছিলেন। এ বারও উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রী আর বিন্দুর বিরুদ্ধে কান্নুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পুনর্নিয়োগের ‘অন্যায় সুপারিশ’ করার অভিযোগ লোকায়ুক্ত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এলডিএফের শরিকদের একাংশেরও প্রশ্ন, সরকারের বিড়ম্বনা সামাল দিতেই কি এমন অধ্যাদেশ? সরকারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক সিপিআইয়ের প্রশ্ন, বিধানসভায় বিল এনে সকলের মত শোনার প্রক্রিয়াকে অধ্যাদেশ এনে এড়ানো হবে কেন? সিপিএমের রাজ্য সম্পাজক কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য মন্ত্রীদের পদে থাকা রাজ্যপালের মতের উপরে নির্ভরশীল। লোকায়ুক্তের এক্তিয়ার এই ক্ষেত্রে সংঘাতের জায়গা তৈরি করেছিল। আদালত ‘ত্রুটি’ নজরে আনার পরে এখন আইন সংশোধনের চেষ্টা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kerala LDF Pinarai Bijayan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE