অপহৃতের দাবি, তিনি অস্থায়ী ইঞ্জিনিয়ার। বাড়ির আর্থিক অবস্থাও স্বচ্ছল নয়। কিন্তু অপহরণকারীদের দাবি, অপহৃতের বাড়িতে অঢেল টাকা। দু’টি ইটভাটার মালিক তিনি। শেষ পর্যন্ত ফের খবর নিয়ে ভুল ভাঙল অপহরণকারীদের। তা বলে এত ঝক্কি সামলে অপহরণকাণ্ড চালানোর পরে খালি হাতে হাতে তো মুক্তি দেওয়া চলে না। তাই ১০ লক্ষ মুক্তিপণ দাবি করেও, দরাদরির পরে চার লক্ষ টাকার বিনিময়ে বদরপুরের ইঞ্জিনিয়ার সন্দীপ পালকে মুক্তি দেওয়া হল।
করিমগঞ্জের বদরপুরের বাসিন্দা সন্দীপবাবু রাষ্ট্রীয় সাক্ষরতা মিশনের স্কুল তৈরি প্রকল্পে ঠিকাভিত্তিতে নিযুক্ত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। বুধবার রাতে শিলচর থেকে বদরপুর ফেরার সময় তিনি নিখোঁজ হন। কাছাড় ও করিমগঞ্জের পুলিশ তাঁর সন্ধানে নামে। এর মধ্যেই সন্দীপবাবুর মোবাইল থেকে তাঁর বাড়িতে ফোন করে অপহরণকারীরা। মুক্তিপণ বাবদ চাওয়া হয় ১০ লক্ষ টাকা। ঘটনা জেনে অসুস্থ হয়ে পড়েন সন্দীপবাবুর বয়স্ক মা। স্ত্রী তিন্নিদেবী ও ১১ বছরের ছেলের দিশেহারা অবস্থা। স্ত্রী অপহরণকারীদের জানান, তাদের কোথাও ভুল হচ্ছে। এত টাকা দেওয়ার মতো অবস্থা তাঁদের নয়। শেষ পর্যন্ত এক আত্মীয়ের হাতে চার লক্ষ টাকা ধলাছড়ায় পাঠানো হয়। সেই টাকা মেলার পরে, গত কাল রাতে সন্দীপবাবুকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা।
বাড়ি ফিরে বিধ্বস্ত ও জখম সন্দীপবাবু তার অভিজ্ঞতার কথা শোনান।
বুধবার রাতে শিলচর থেকে বদরপুর যাওয়ার জন্য সার্কিট হাউস রোডে একটি ছোট গাড়িতে উঠেছিলেন ৪৮ বছর বয়সী সন্দীপবাবু। গাড়িতে ওঠেন আরও চারজন যাত্রী। শিলচর ছাড়াবার পরে রাস্তা দু’ভাগ হয়ে যায়। চালক করিমগঞ্জের দিকে না গিয়ে গাড়ি হাইলাকান্দির দিকে ঘুরিয়ে দেয়। অন্য চার যাত্রী আদতে ছিল অপহরণকারী। তারা গাড়ির মধ্যেই সন্দীপবাবুর হাত বেঁধে নীচে চেপে বসিয়ে রাখে। খানিক দূর গিয়ে তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে অন্য একটি দলের
হাতে তুলে দেওয়া হয়। নতুন দলটির সদস্যরা ছিল রিয়াং উপজাতির মানুষ। তারা হাত বেঁধে সন্দীপবাবুকে প্রায় দেড় ঘণ্টা হাঁটিয়ে একটি পাহাড়ি জায়গায় নিয়ে আসে। ছোট পাহাড়ি নালা পার হয়, একটি চা বাগান ছাড়িয়ে অপহরণকারীরা সন্দীপবাবুকে নিয়ে পাহাড়ে ওঠে। চলার পথে তাঁকে কয়েক বার মারাও হয়। পাহাড়ি ঘাঁটিতে পৌঁছনোর পরে সন্দীপবাবুর ফোন থেকেই অপহরণকারীরা তাঁর বাড়িতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। সন্দীপবাবু বলেন, ‘‘ওদের কথা শুনে মনে হচ্ছিল ওরা রিয়াং জঙ্গি। ওরা দাবি করছিল আমার দু’টি ইটভাটা আছে। বাড়িতে অঢেল টাকা। আমি বলি, কোনও ভুল হচ্ছে। ও সব মিথ্যে। ওরা ফের খবর নিতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত বোঝে কোথাও একটা ভুল হয়েছে।’’
মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়াবার কথা মানলেও এ নিয়ে বেশি মুখ খুলতে চাইছে না পাল পরিবার। অপহরণকারীদের হাতে অস্ত্র থাকলেও সে গুলি নিয়ে বেশি তথ্য দিতে পারেননি সন্দীপবাবু। তিনি জানান, টাকা হাতে আসার পরে, গত কাল রাত দেড়টা নাগাদ ওরা তাঁকে ছেড়ে দেয়। পাহাড়ি নাল পার করিয়ে বলা হয়, কিছুদূর হেঁটে গেলেই একটি স্কুল মিলবে। সেখানে রাতে থাকা যায়। অপহরণকারীদের নির্দেশমতোই স্কুলে রাত কাটান সন্দীপ পাল। আজ সকালে প্রধান সড়কে পৌঁছে অটোয় চেপে লালায় আসেন তিনি। সন্দীপবাবুর পরিবারের লোকও তখন তাঁকে খুঁজতে লালায় হাজির। তাঁদের গাড়িতে চেপে সন্দীপবাবু সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ নিজের বাড়ি পৌঁছান।
স্বামীকে ফিরে পেয়ে স্বস্তিতে তিন্নিদেবী। সন্দীপবাবুর শরীরে একাধিক স্থানে কালশিটে রয়েছে। তিনি জানান, গত দু’দিনে তাঁকে ভাত ও ডাল খেতে দেওয়া হলেও সে খাবার মুখে তোলার মতো ছিল না। চার লক্ষ টাকা গেলেও সন্দীপবাবু অক্ষত অবস্থায় বাড়ি ফেরায় এখন গত দু’দিনের স্মৃতি মন থেকে মুছে ফেলতে চাইছে পাল পরিবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy