জয়পুরের সাওয়াই মান সিংহ (এসএমএস) হাসপাতালে রবিবার রাতের অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয়েছে আট রোগীর। আহত আরও অনেকে। তার মধ্যে কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। সেই আবহেই এ বার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কর্মীদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে সরব হলেন নিহতদের পরিজনেরা। অভিযোগ, আগুন লাগার পর ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বার বার বলা সত্ত্বেও তাঁরা কানে তোলেননি। বরং আগুন ছড়িয়ে পড়তেই তাঁরা রোগীদের ফেলে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ।
ঘটনার পর নিজেদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন নিহত রোগীদের পরিজনেরা। হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটির অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা। নিহতদের এক জনের আত্মীয় ওমপ্রকাশের কথায়, ‘‘রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে হঠাৎ ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে আমি ডাক্তারদের বিষয়টি জানাই। রোগীদের সরানোর অনুরোধও করি। কিন্তু আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই পালিয়ে যান ডাক্তার এবং কম্পাউন্ডারেরা।’’ ওমপ্রকাশের ভাই ওই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। প্রায় সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। মাত্র দু’-তিন দিনের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু রবিবার রাতের অগ্নিকাণ্ডে তাঁর মৃত্যু হয়। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে ওমপ্রকাশ জানিয়েছেন, “মাত্র চার-পাঁচ জন রোগীকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বাকিরা ওখানেই মারা যান।”
আর এক আত্মীয় যোগেন্দ্র সিংহের কথায়, ‘‘আগুনের স্ফুলিঙ্গ দেখেই ডাক্তারদের সতর্ক করা হয়েছিল। আমি নিজেও চার-পাঁচ বার ডাক্তারদের জানাই। কিন্তু তাঁরা এটিকে স্বাভাবিক ঘটনা বলে উড়িয়ে দেন।’’ অবহেলার জন্য হাসপাতালের কর্মীদের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন যোগেন্দ্র। তাঁর মা আইসিইউ-তে ভর্তি ছিলেন। যোগেন্দ্রর দাবি, গভীর রাতে আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর হাসপাতালের সমস্ত কর্মী পালিয়ে যান। তাঁর মাকে সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে আসেননি। রোগীদের পরিজনদের দাবি, ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে বেরোনোর গেটগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে অনেকে পালাতে পারেননি। খবর পেয়ে দ্রুত হাসপাতালে গেলেও প্রথমে রোগীদের পরিজনদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
রবিবার গভীর রাতে আগুন লেগে যায় সাওয়াই মান সিংহ হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে। ওই সময়ে হাসপাতালের নিউরো আইসিইউ বিভাগে মোট ১১ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানকার একটি গুদামে প্রথম আগুন লাগে। ওই গুদামে মূলত কাগজপত্র, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং রক্তের নমুনার টিউব রাখা ছিল। সেখান থেকে ক্রমে আগুন ছড়িয়ে পড়ে আইসিইউ-তে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, কী থেকে আগুন লাগল, তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, শর্ট সার্কিটের জেরেই এই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।