Advertisement
E-Paper

‘জীবন সংশয় হতে পারে জেনেও শবরীমালায় ঢোকার ঝুঁকিটা নিয়েছিলাম’

এক দিকে পরিবারের বাধা, অন্য দিকে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর চোখ রাঙানি, শাসানি। কিন্তু সেই মুহূর্তে এ সব যেন তাঁদের কাছে তুচ্ছই ছিল। ফলে শত বাধা পেরিয়ে শেষমেশ শবরীমালায় ঢুকতে পেরেছিলেন বিন্দু আর কনকদুর্গা। তাই ইতিহাস তৈরি হল।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ১২:৩০
বিন্দু ও কনকদুর্গা (ডান দিকে)। ফাইল চিত্র

বিন্দু ও কনকদুর্গা (ডান দিকে)। ফাইল চিত্র

হুমকিটা বার বারই আসছিল শবরীমালায় ঢুকলে প্রাণ সংশয় হতে পারে। তোয়াক্কা করেননি। প্রবল বিরোধ-বিক্ষোভ তো চলছিলই, পরিবারও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পরিবার চাইছিল না এত বড় একটা ঝুঁকি নিয়ে শবরীমালায় ঢুকুক ওঁরা।

এক দিকে পরিবারের বাধা, অন্য দিকে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর চোখ রাঙানি, শাসানি। কিন্তু সেই মুহূর্তে এ সব যেন তাঁদের কাছে তুচ্ছই ছিল। ফলে শত বাধা পেরিয়ে শেষমেশ শবরীমালায় ঢুকতে পেরেছিলেন বিন্দু আর কনকদুর্গা। তাই ইতিহাস তৈরি হল।

সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে এসেছিলেন এই দুই মহিলা পূজারিনি। কনকদুর্গা সেখানে বলেন, “জানতাম প্রাণ সংশয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সেই সম্ভাবনার কথা জেনেও মন্দিরে ঢোকার ঝুঁকি নিতে চেয়েছিলাম। আজ গর্ববোধ হচ্ছে শবরীমালায় মহিলাদের প্রবেশের রাস্তাটা আমরাই সহজ করে দিলাম।”

দৃষ্টান্ত অবশ্যই তৈরি করেছেন কনকদুর্গা ও বিন্দু। যে শবরীমালায় দশকের পর দশক ধরে কোনও ঋতুমতী মহিলা প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল, সেখানে প্রবেশ করে সেই বেড়াজাল ছিঁড়ে দিতে পেরেছেন কনকদুর্গা ও বিন্দু। তাঁদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে, বলা ভাল সাহসে ভর করে শশীকলা নামে তৃতীয় মহিলাও মন্দিরে ঢোকেন।

আরও পড়ুন: শবরীমালা জয়ের পর কেরলের মহিলাদের চোখ এখন অগস্ত্য মুনির

কনক বলেন, “মন্দিরে গিয়েছিলাম কারণ এটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। আর সেটা কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।” অন্য দিকে, বিন্দু বলেন, “এটা শুধু ভক্তির বিষয় নয়, এটা নারী-পুরুষের সামানাধিকারের ব্যাপারও বটে।” মন্দিরে শুধু পুরুষরাই কেন ঢুকতে পারবেন, নারীরা কেন নয়— এই লিঙ্গবৈষম্যের বিষয়টা কুরে কুরে খাচ্ছিল বিন্দুকে। সেই বেড়াজাল ভাঙতেই জীবনের ঝুঁকি নিতে কোনও দ্বিধাবোধ করেননি তিনি, জানান বিন্দু। পাশাপাশি তাঁরা এটাও জানান, যত গণ্ডগোল সব মন্দিরের বাইরে। মন্দিরের ভিতরে তাঁরা যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, কেউ কোনও প্রতিবাদও করেননি। তাঁদের অভিযোগ, একটা বিশেষ শ্রেণি এই গণ্ডগোলের মূলে দাঁড়িয়ে। রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই শবরীমালাকে নিয়ে ধর্মের রাজনীতি শুরু করেছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তবে রাজ্য সরকার যে সে সব বাধার মধ্যেও তাঁদের মন্দিরে ঢোকাতে সহযোগিতা করেছে সে কথাও জানান বিন্দু ও কনকদুর্গা। বিন্দু বলেন, “মন্দির দর্শনের সুযোগ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে মুখ্যমন্ত্রী নিজে বা রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে সরাসরি ভাবে কোনও যোগাযোগ করেনি।”

শবরীমালার বাইরে শ্যেণ দৃষ্টি ছিল বিক্ষোভকারীদের। কোনও মহিলা যাতে ঢুকতে না পারেন, মন্দিরের চারপাশে ভক্তদের বেড়াজাল তৈরি করা হয়েছিল। ফলে সোজা পথে দুই পূজারিনিকে নিয়ে যাওয়া যে অসম্ভব ছিল সেটা ভাল ভাবেই জানত রাজ্য সরকার। স্থির হয় অন্ধকার থাকতে থাকতেই ওঁদের ঢুকিয়ে দিতে হবে। সাধারণ পোশাকে কয়েক জন পুলিশ সর্বদা কনকদুর্গা ও বিন্দুর নিরাপত্তায় ছিলেন। কনকদুর্গা ও বিন্দু জানান, মন্দিরে যাওয়ার জন্য বেসক্যাম্পে পৌঁছতে একটা তেল ট্যাঙ্কারের সাহায্য নিয়েছিলেন তাঁরা। ট্যাঙ্কারের চালকের আসনের পাশে শুয়ে লুকিয়ে বেসক্যাম্পে পৌঁছেছিলেন তাঁরা। সে এক ভয়ানক অভিজ্ঞতা বলে জানান তাঁরা। আশঙ্কার পাশাপাশি উত্তেজনাও যেন ধমনী দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল! আদৌ কি তাঁরা পৌঁছতে পারবেন, এই আশঙ্কাটাও ঘিরে ধরেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মন্দিরে প্রবেশ করেন কনকদুর্গা ও বিন্দু। আর তার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয় ইতিহাস।

আরও পড়ুন: জোট ঘোষণার মুখেই সিবিআইয়ের খাঁড়া নামল অখিলেশের উপর

বিন্দু ও কনকদুর্গার প্রবেশের খবর চাউর হতেই জ্বলে উঠেছিল গোটা কেরল। দফায় দফায় সংঘর্ষে এক জনের মৃত্যুও হয়। আহত হন বহু মানুষ। গ্রেফতার হন প্রায় সাড়ে ৭০০ বিক্ষোভকারী।মন্দিরে মহিলা প্রবেশ করাতে নাকি তা ‘অশুদ্ধ’ হয়ে গিয়েছিল। বিন্দু ও কনকদুর্গা বেরিয়ে যাওয়ার পরই গোটা মন্দির বন্ধ করে দেওয়া হয় ‘শুদ্ধিকরণের’ জন্য। এ ব্যাপারে বিন্দু বলেন, “এটা মহিলাদের জন্য অপমানজনক।”

(কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদেরদেশবিভাগে ক্লিক করুন।)

Sabarimala Kerala Kanak Durga Bindu শবরীমালা কেরল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy