দেশের মধ্যে সরকার পরিচালিত বিমানবন্দরগুলি কত আয় করছে, লাভের অঙ্ক কী, রাজস্ব আদায় করেছে কত— প্রতি বছর এ হেন নানা হিসাব প্রকাশ করা হয় এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এএআই)-র তরফে। সেই হিসাব থেকেই বোঝা যায়, কোন বিমানবন্দর বছরে সবচেয়ে বেশি লাভ করেছে! ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের তালিকায় লাভের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। পাশাপাশি, রাজস্বের ক্ষেত্রেও শীর্ষে কলকাতা।
দেশে বর্তমানে এএআই (কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত) পরিচালিত ১৩৭টি বিমানবন্দর রয়েছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাভ করেছে কলকাতা বিমানবন্দর। লাভের পরিমাণ ১,৫২৭.৫ কোটি টাকা! তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা চেন্নাই বিমানবন্দরের লাভের পরিমাণের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
অন্য দিকে, গত বছরের তুলনায় রাজস্ব আদায় প্রায় তিন শতাংশ কম হলেও সেই নিরিখে শীর্ষে রয়েছে কলকাতা। মোট রাজস্বের ৭৭ শতাংশই এসেছে অ্যারোনেটিক্যাল চার্জ। অর্থাৎ, বিমানবন্দর, পার্কিং, অবতরণ ইত্যাদি সংক্রান্ত যে টাকা যাত্রীদের থেকে নেওয়া হয়।
পরিসংখ্যান বলছে, গত আর্থিক বছরে কলকাতা বিমানবন্দরে প্রায় দেড় লক্ষ বিমান ওঠানামা করেছে। দু’কোটির বেশি যাত্রী এই বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করেছেন। ২০২৪-২৫ আর্থিকবর্ষে প্রতি বিমানে যাতায়াত করেছেন গড়ে ১৫২ জন যাত্রী। ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরের তুলনায় ছ’জন বেশি। ২০১৯ সালে বিমানপিছু গড়ে যাত্রীসংখ্যা ছিল ১৪৩। তবে ২০২২ এবং ২০২৩ আর্থিক বছরে সেই সংখ্যাটা অনেকটাই কমেছিল। যথাক্রমে গড় যাত্রীসংখ্যা ছিল ১২৩ এবং ১২৯ জন।
আরও পড়ুন:
কলকাতা থেকে ইউরোপ বা আমেরিকার সরাসরি কোনও বিমান পরিষেবা নেই! ওই দুই দেশে যাতায়াত করা যাত্রীসংখ্যা নেহাত কম নয়। ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে উড়ানপথে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাকি দেশের কাছে কলকাতা বিমানবন্দর প্রবেশদ্বার। পাশাপাশি, থাইল্যান্ড-ভিয়েতনামের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে যাতায়াতের ক্ষেত্রেও কলকাতা বিমানবন্দর বিশেষ গুরুত্ব রাখে। দেশের মধ্যে শীর্ষস্থান অর্জন করতে কলকাতা বিমানবন্দরের এমন বিশেষত্বগুলি কাজে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অ্যারোনেটিক্যাল চার্জ থেকে রাজস্ব মিললেও বিমান-বহির্ভূত রাজস্ব আদায় অন্য বিমানবন্দরের তুলনায় কম। চেন্নাই বিমানবন্দরের বিমান-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ যেখানে ৪৬৯.২ কোটি টাকা, সেখানে কলকাতা বিমানবন্দরের ভাঁড়ারে ঢুকেছে ৩০৮ কোটি টাকা।
দমদম বিমানবন্দরের ডিরেক্টর বিক্রম সিংহ বলেন, ‘‘এই সাফল্য কোনও এক জন ব্যক্তির জন্য আসেনি। এটা একটি দলগত প্রচেষ্টার সুফল। সকলের আগে আমরা চেষ্টা করেছিলাম আমেদর অযাচিত খরচগুলি কমাতে। সেই খরচ কমাতে আমরা সফলও হয়েছিলাম। এর পাশাপাশি আয়ের নানা দিকগুলিকে সঠিক ভাবে প্রয়োগ করতেও উদ্যোগী হই। প্রত্যেককে আলাদা আলাদা দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই দায়িত্ব সকলে নিষ্ঠা ভাবে পালন করাতেই এই সাফল্য।’’
কলকাতা বিমানবন্দর ছাড়াও, পশ্চিমবঙ্গে আরও একটি বিমানবন্দর বাগডোগরা থেকে চলতি বছরে ২২,৩৯০টি বিমান পরিচালনা হয়েছে। লাভের অঙ্ক ১২২ কোটি আর রাজস্ব আদায় ১৫৭ কোটি টাকা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাগডোগরায় বছরে ৩৮ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেছেন। অর্থাৎ, বিমানপিছু গড় যাত্রীসংখ্যা ১৫৫ জন।
সরকার পরিচালিত বিমানবন্দর ছাড়াও ভারতে বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিমানবন্দরও রয়েছে। অর্থাৎ, ওই বিমানবন্দরগুলি পরিচালিত হয় পিপিপি (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) মডেলে। বিমানবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকে কোনও না কোনও বেসকারি সংস্থা। তবে সরকারের হাতেও থাকে কিছু নিয়ন্ত্রণ। সেই তালিকায় রয়েছে অমৃতসর, বারাণসী, ভুবনেশ্বর, রায়পুরের বিমানবন্দরগুলি। এ ছাড়াও, কালিকট, কোয়েম্বত্তূর, ভোপাল, হুবলির মতো বিমানবন্দরগুলিও পিপিপি মডেলে পরিচালিত হয়। তবে দেশে বেসরকারি সংস্থা পরিচালিত বিমানবন্দরও বেশ কয়েকটি রয়েছে। আদানি গ্রুপ পরিচালিত বিমানবন্দরগুলির তালিকায় রয়েছে গুয়াহাটি, অহমেদাবাদ, তিরুঅনন্তপুরম, নভি মুম্বই, লখনউ, জয়পুর বিমানবন্দর। বিশাখাপত্তনম, মোপা, নাগপুর, হায়দরাবাদের বিমানবন্দরগুলি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে জিএমআর গ্রুপ। দিল্লি এবং মুম্বই বিমানবন্দরও পুরোপুরি সরকারের হাতে নয়। অর্থাৎ, লাভ এবং রাজস্বের যে হিসাব দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে অহমেদাবাদ, দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদের মতো বিমানবন্দর পড়ে না।