Advertisement
E-Paper

বাবা, তুমি এগিয়ে যাও, আমি আসছি...

তাঁর কথা শুনে তাঁকে ছেড়ে ভিড় ঠেলেঠুলে এগিয়েই গিয়েছিলেন শ্রদ্ধার বাবা। কিন্তু শ্রদ্ধা কথা রাখতে পারেননি।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১৬:২৪
এলফিনস্টোন ও প্যারেল স্টেশনের যোগসূত্র সেই ফুটব্রিজ। শুক্রবার দুর্ঘটনার পর। - ফাইল চিত্র।

এলফিনস্টোন ও প্যারেল স্টেশনের যোগসূত্র সেই ফুটব্রিজ। শুক্রবার দুর্ঘটনার পর। - ফাইল চিত্র।

বাবা, তুমি এগিয়ে যাও। আমি আসছি...

কিন্তু বাবার কাছে আর ফিরে আসা হল না শ্রদ্ধার!

তাঁর কথা শুনে তাঁকে ছেড়ে ভিড় ঠেলেঠুলে এগিয়েই গিয়েছিলেন শ্রদ্ধার বাবা। কিন্তু শ্রদ্ধা কথা রাখতে পারেননি। শুক্রবার সকালে মধ্য মুম্বইয়ের প্যারেল স্টেশনের ফুটব্রিজে ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হয়ে আরও ২১টি মৃতদেহের সঙ্গে ঠাঁই হয়েছিল শ্রদ্ধা ভার্পের।

প্যারেলের কেইএম হাসপাতালে কাঁদতে কাঁদতে শ্রদ্ধার এক আত্মীয় ভিমরাও ধুলাপ বলছিলেন, ‘‘শুক্রবার তখন সকাল সওয়া দশটা কি সাড়ে দশটা হবে। প্যারেল স্টেশন থেকে ফুটব্রিজ ধরে এলফিনস্টোন স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলেন শ্রদ্ধা আর তাঁর বাবা কিশোর ভার্পে। ব্রিজে তখন ভীষণ ভিড়। দেহের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছিল না কারও। সেই ভিড় ঠেলেই কিশোর ওঁর ২৫ বছর বয়সী মেয়েকে (শ্রদ্ধা) নিয়ে এগচ্ছিলেন এলফিনস্টোন স্টেশনের দিকে। ৫৭ বছর বয়সী কিশোর এর আগেও বহু বার ভিড় ঠেলে ওই ব্রিজ পেরিয়েছেন। শ্রদ্ধাও। কিন্তু সে দিন যেন কী হয়েছিল! ভিড় ঠেলে এগতে না পেরে চেঁচিয়ে শ্রদ্ধা বলেছিলেন, ‘‘বাবা, তুমি এগিয়ে যাও। ভিড়টা একটু পাতলা হলে আমি আসছি।’’

আরও পড়ুন- কাঁদছে আকাশ, কাঁদছে মন, আবার এসো মা

আরও পড়ুন- নাফ নদীতে বিসর্জন, কোরিয়ায় মেঘ, হিমালয়ে ভারসাম্য

সেটাই শেষ কথা ছিল শ্রদ্ধা ভার্পের। ফুটব্রিজ পেরিয়ে আসার পর মেয়ের আসার জন্য অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করেছিলেন শ্রদ্ধার বাবা। শেষে ধৈর্য হারিয়ে তিনি আবার ফুটব্রিজ ধরে খুঁজতে শুরু করেন মেয়েকে। খুঁজতে খুঁজতে প্যারেল স্টেশনের দিকে গিয়ে দেখতে পান, আরও ২১টি মৃতদেহের সঙ্গেই পড়ে রয়েছে শ্রদ্ধার নিঃসাড় দেহটি।

হাসপাতালের মর্গের সামনে একটা কোণে দাঁড়িয়ে তখনও কান্নায় ডুকরে উঠছেন শ্রদ্ধার বাবা। গলায় ঝরে পড়ছে আক্ষেপ, ‘‘কেন যে ওই সময় মেয়ের কথা শুনেছিলাম! কেন যে ওর হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকিনি!’’ বলেই আবার আওড়ালেন, ‘‘জানেন, মেয়েটা চেঁচিয়ে বলেছিল, বাবা তুমি এগিয়ে যাও, আমি আসছি...’’

শ্রদ্ধা আর তাঁর বাবা কিশোর দু’জনেই চাকরি করতেন রাজ্য সরকারি শ্রমকল্যাণ দফতরে। তাঁদের অফিসটি ছিল এলফিনস্টোন রোডে। ফুটব্রিজ ধরে এলফিনস্টোন স্টেশনে নেমেই রোজ এনফিনস্টোন রোডে তাঁদের অফিসে যেতেন বাবা ও মেয়ে। পাশের থানে জেলার ভিট্টলবাড়ির বাড়ি থেকে রোজ বাবা, মেয়ে এই ভাবেই যেতেন অফিসে। ফিরতেনও একই সঙ্গে, একই পথে।

কিন্তু সে দিন ফুটব্রিজের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে টানা ১০ মিনিট অপেক্ষা করেও মেয়েকে আর কাছে পাননি শ্রদ্ধার বাবা।

কিশোরের কানে এখনও বাজছে শ্রদ্ধার শেষ কথাগুলি। ‘‘বাবা, তুমি এগিয়ে যাও। ভিড়টা পাতলা হলেই আমি আসছি...’’

Mumbai Parel Station Elphinstone Station Shraddha Varpe শ্রদ্ধা ভার্পে
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy