বাংলাদেশে সেনা এবং মুসলিম কট্টরপন্থীরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চাকমাদের গণহত্যা করছে বলে অভিযোগ তুলল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জনজাতি সংগঠন। অবিলম্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে স্মারকলিপি পাঠিয়েছে তারা। শুক্রবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওই স্মারকলিপি পাঠানো হয়।
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা, খাগড়াছড়ি, বান্দারবন এবং রাঙামাটিতে আদি বাসিন্দা চাকমা এবং অন্যান্য জনজাতি গোষ্ঠীর উপর গত ৭২ ঘণ্টা ঘরে ধারাবাহিক হামলা চলছে। খুন হয়েছেন অন্তত ১০ জন অমুসলিম। পোড়ানো হয়েছে চাকমা, কুকি, ব্রু এবং অন্যান্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের হাজারেরও বেশি বাড়িঘর, ধর্মস্থান, দোকান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সেনা, বিজিপি এবং র্যাব বাহিনীও বিচ্ছিন্নতাবাদী দমনের অছিলায় অমুসলিমদের উপর নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন:
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের দফতর থেকে বিবৃতি দিয়ে পাহাড়ের ঘটনায় সকলকে শান্ত থাকার আবেদন জানানো হয়েছে। তিন জেলায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। তবুও উত্তেজনা কমেনি। এমনকি, চট্টগ্রামের সমতল এলাকাতেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা ঘটছে। কয়েক দশক আগে বাংলাদেশ সেনার অত্যাচারে ত্রিপুরা, মিজ়োরামের মতো রাজ্যে পালিয়ে এসেছিল চাকমা, ব্রু, কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর বহু মানুষ। চলতি পরিস্থিতিতেও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নতুন করে শরণার্থী স্রোত নামতে পারে বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন:
এই আবহে নিরাপত্তা এবং স্বশাসনের দাবি তুলে ‘মার্চ ফর আইডেন্টিটি’ আন্দোলন শুরু করেছে চাকমা-সহ কয়েকটি জনজাতি গোষ্ঠী। তাদের অভিযোগ, হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই বাইরে থেকে এসে বসতি গড়া লোকেরা চাকমাদের উপরে হামলা, জমি দখল এবং দেশছাড়ার জন্য হুমকি দিতে শুরু করেছে। হামলাকারীদের প্রত্যক্ষ মদত দিচ্ছে বাংলাদেশ সেনা। কয়েকশো বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর বাস। ভারত এবং মায়ানমার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের অঞ্চলগুলি নিয়ে কুকি স্বশাসিত অঞ্চলের দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরেই লড়াই চালাচ্ছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)।
আরও পড়ুন:
সম্প্রতি কুকি বিচ্ছিন্নতাবাদীরের দমনের নামে নতুন করে অভিযান শুরু করেছে বাংলাদেশ সেনা এবং র্যাব। জঙ্গি দমন অভিযানের নামে কুকিদের উপর অত্যাচারের অভিযোগও উঠেছে। এর ফলেও উত্তেজনা বাড়ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, আশির দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনবিন্যাস বদলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের আমলে প্রায় ৫০ হাজার সমতলের মানুষকে পাহাড়ে বসতি গড়ে দেওয়া হয়। ‘সেটলার’ নামে পরিচিত সেই জনগোষ্ঠী আজ সংখ্যায় বহু গুণ বেড়ে চাকমা ও অন্য জনজাতিদের অস্তিত্বের সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে। আর সেখান থেকেই সংঘাতের সূত্রপাত। নতুন সরকারের আমলে তাঁদের ‘আদিবাসী’ পরিচয়ও মুছে ফেলার চেষ্টা শুরু হয়েছে বলে চাকমা সংগঠনগুলির অভিযোগ।