নয়া কৃষি আইনের প্রতিবাদে কৃষক মহাপঞ্চায়েতে শামিল মহিলারাও। রবিবার মুজফ্ফরনগরে। পিটিআই।
ঠা ঠা রোদ। মুজফ্ফরনগরের গভর্মেন্ট ইন্টার কলেজের মাঠ জুড়ে ছাউনি একটা আছে বটে। কিন্তু তার ভিতরে যত জন, বাইরে তার বহুগুণ বেশি জনতা। বাংলার কৃষক নেতা হান্নান মোল্লা থেকে ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের রাকেশ টিকায়েত— যে যখন মঞ্চে উঠে বক্তৃতা দিয়েছেন, মাথার উপর গামছা ধরে দেহাত থেকে আসা কৃষক বা ট্রাক্টরে চড়ে আসা সম্পন্ন কৃষক, সকলে পাশাপাশি বসেই তা শুনেছেন।
কৃষক সংগঠনগুলির যুক্তমঞ্চ সংযুক্ত কিসান মোর্চার নেতাদের দাবি, এ দিনের সমাবেশে লোক হয়েছিলেন প্রায় ১০ লক্ষ। তার মধ্যে উত্তর ভারতের নানা প্রান্ত থেকে আসা কৃষকের পাশাপাশি দক্ষিণ ভারত থেকেও বহু কৃষক এসেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশার মতো রাজ্য থেকেও অনেকে এসেছিলেন সমাবেশে যোগ দিতে।
তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন, সারা ভারত কৃষক সভা-সহ একাধিক কৃষক সংগঠনের ডাকা সমাবেশ থেকে কৃষক নেতারা জানিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশে আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচার করবেন তাঁরা।
পাশাপাশি কৃষক নেতারা ২৭ সেপ্টেম্বর দেশ জুড়ে ধর্মঘটের ডাকও দিয়েছেন। জানিয়েছেন, লখনউয়ে আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর কৃষক সংগঠনগুলিকে নিয়ে একটি বড় মাপের বৈঠক হবে। ১৫ সেপ্টেম্বর রাজস্থানের জয়পুরে হবে কিসান সংসদ। উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি উত্তরাখণ্ড এবং পঞ্জাবে আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে কৃষক সম্প্রদায়ের ক্ষোভ যে তাঁরা বিজেপির বিরুদ্ধে কাজে লাগাবেন, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন কৃষক নেতারা। শুধু তা-ই নয়, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগীর চিন্তা বাড়িয়ে এ দিন কৃষক নেতারা ঘোষণা করেছেন, রাজ্যের ১৮টি কমিশনারেটেই তাঁরা মহাপঞ্চায়েতের ডাক দেবেন। রাজ্যের প্রতিটি জেলা থেকে শুরু করে ব্লক স্তর পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদী সরকারের তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে বিজেপি-বিরোধী জনমত তৈরি করবেন।
বৈঠক শেষে এক কৃষক নেতা বলেন, ‘‘কেন্দ্র বলছে, কয়েক জন কৃষক প্রতিবাদ করছেন। আমরা ওদের দেখাতে চাই, আসলে কত কৃষক রয়েছেন। আমরা এমন আওয়াজ তুলব যে, সেটা সংসদে বসে শোনা যাবে।’’ বিকেইউ নেতা রাকেশ টিকায়েত বলেন, ‘‘যদি সরকার আমাদের সমস্যা বোঝে, তা হলে ভাল। না হলে দেশ জুড়ে এই ধরনের বৈঠক হবে।’’ একই সুর শোনা গিয়েছে অন্য কৃষক নেতাদের মুখেও।
এ দিন মুজফ্ফরনগরে অভূতপূর্ব জাঠ-মুসলিম ঐক্যের ছবিও দেখা গেল। এই মুজফ্ফরনগরেই ২০১৩ সালের জাঠ বনাম মুসলিম দাঙ্গা গোটা রাজ্যকে কার্যত দু’ভাগ করে দিয়েছিল। ২০১৪-র লোকসভা এবং ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে যার সুফল পুরোমাত্রায় ঘরে তুলেছিল বিজেপি। সেই মুজফ্ফরনগরে মঞ্চমুখী পথে গত রাত থেকে নানা মোড়ে দাঁড়িয়েছিলেন মুসলিম প্রবীণেরা। সমাবেশে যোগ দিতে আসা কৃষকদের হাতে জল-খাবার এগিয়ে দিয়েছেন তাঁরাই। জাঠ নেতারা বারবার মোদী তথা বিজেপিকে নিশানা করে স্লোগান তুলেছেন, ‘‘আব বাতা হাকিম, হামে ক্যায়সে করোগে জুদা!’’
এ দিন সংযুক্ত কিসান মোর্চার তরফে জানানো হয়েছে, মোদী সরকারের উপর চাপ বাড়াতে ৭ সেপ্টেম্বর হরিয়ানার কারনালে হবে আরও একটি কিসান মহাপঞ্চায়েত। যে কারনালে সম্প্রতি কৃষক বিক্ষোভে পুলিসের লাঠিতে আহত হয়েছিলেন একাধিক কৃষক, তার মধ্যে একজনের মৃত্যুও হয়। সেই কারনাল থেকেই এ দিন এসেছিলেন পুলিশের লাঠিতে জখম কৃষক মহেন্দ্র সিংহ।
এ দিনের সমাবেশের পরে বিজেপির অস্বস্তি বাড়িয়ে দলের সাংসদ বরুণ গাঁধী বলেন, ‘‘এই কৃষকেরাই আমাদের রক্ত-মাংস। সরকারের উচিত এঁদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানসূত্র বের করা।’’ বরুণের এই সুর অবশ্য শোনা যায়নি যোগী আদিত্যনাথ বা মুজফ্ফরনগরের বিজেপি সাংসদ সঞ্জীব বালিয়ানের মুখে। এ দিন এক অনুষ্ঠানে যোগী বলেন, ‘‘গত সাত বছরে কৃষকদের উন্নতির জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ হয়েছে।’’ আর সঞ্জীব বালিয়ানের কটাক্ষ, ‘‘সংযুক্ত কিসান মোর্চা কি রাজনীতিতে নামতে চাইছে? যদি ওরা রাজনীতিতে আসে, তা হলে স্বাগত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy