সাত মাসের মধ্যেই ছবি বদলে গেল। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) ছাত্র সংসদ নির্বাচনে গত এপ্রিলে মাথা তুলেছিল আরএসএসের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। কিন্তু নভেম্বরের নির্বাচনে বাম ছাত্র জোট মূল চারটি পদেই জয়ী হল। সাত মাস আগে বাম ছাত্র সংগঠনগুলি জোট ভেঙে নিজেদের মধ্যে আকচাআকচিতে নেমেছিল। নির্দিষ্ট পদে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে গোঁয়ার্তুমির মনোভাব দেখিয়েছিল তারা। কিন্তু এ বার আইসা, এসএফআই এবং ডিএসএফ জোট করতেই ভোটের খেলা ঘুরে গেল। জিতল বাম ছাত্রজোট।
জেএনইউ ছাত্র সংসদের ভোটে নির্দিষ্ট বিভাগের কাউন্সিলর নির্বাচনের পাশাপাশি ছাত্র সংসদের সভাপতি, সহ-সভপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং যুগ্ম সম্পাদক— এই চারটি পদে ভোট নেওয়া হয়। গত ৪ নভেম্বর সারা দিন ধরে ভোট হয়েছিল ক্যাম্পাসে। বুধবার রাত থেকে ভোটগণনা শুরু হয়। শেষ হয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। গণনা শেষে দেখা গেল, চারটি পদেই জিতলেন বাম প্রার্থীরা। এ বারে সাড়ে ন’হাজারের বেশি ভোটার ছিলেন ছাত্র সংসদ ভোটে। ভোট পড়েছিল ৬৭ শতাংশ।
জয়ের পরে বাম ছাত্রজোটের চার প্রার্থী। ছবি: সংগৃহীত।
সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন আইসার অদিতি মিশ্র, সহ-সভাপতি পদে জিতেছেন এসএফআইয়ের কে গোপিকা, সাধারণ সম্পাদক পদে জিতেছেন ডিএসএফের সুনীল যাদব এবং যুগ্ম সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন আইসার দানিশ আলি। তবে সাধারণ সম্পাদক এবং যুগ্ম সম্পাদক পদে ভাল লড়াই করেছেন এবিভিপির রাজেশ্বর দুবে এবং অনুজ দামারা। একটা সময়ে বেশ কয়েক রাউন্ড ভোট গণনায় দুই পদেই বাম প্রার্থীদের খানিকটা পিছনে ফেলে দিয়েছিল এবিভিপি। তবে শেষ পর্যন্ত চারটি পদেই জয়ী হয়েছে বামেরা। তবে সাধারণ সম্পাদক এবং যুগ্ম সম্পাদক পদে বাম জোটের ব্যবধান বিরাট নয়। সাত মাস আগে বাম ছাত্র সংগঠনগুলি পৃথক ভাবে লড়ায় সুবিধা হয়েছিল এবিভিপি-র। যুগ্ম সম্পাদক পদে জিতেছিলেন এবিভিপি-র বৈভব মীনা। তবে এ বারও বিভিন্ন বিভাগের কাউন্সিলর আসনে বেশ কিছু আসন জিতেছে এবিভিপি।
আরও পড়ুন:
এই জয়কে ‘মতাদর্শের জয়’ বলে অভিহিত করেছেন এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য। গত বার জোট না-হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কয়েক মাস আগে বাম ছাত্র সংগঠনগুলি যে কোনও কারণেই হোক জোটের প্রশ্নে ঐকমত্যে পৌঁছোতে পারেনি, যার সুবিধা পেয়েছিল এবিভিপি। তা থেকে শিক্ষা নিয়েই এ বার ভোটে লড়তে নামা হয়েছিল।’’
গত বার বাম ছাত্রদের জোট না-করা নিয়ে অনেক প্রাক্তনীও সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, ‘‘ইগোর লড়াই করতে গিয়ে এবিভিপি-কে জমি তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল।’’ এ বার আর সেই পথে হাঁটেনি। তবে এই নির্বাচনের সঙ্গে ক্যাম্পাসের বাইরের সাধারণ নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই। থাকার কথাও নয়। জেএনইউ ক্যাম্পাসে বামেদের দাপট থাকলেও পাঁচিলের বাইরে সংসদীয় রাজনীতিতে তাদের কোনও শক্তি নেই। যেমন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাম ছাত্রদের আধিপত্য থাকলেও, বাইরে তারা তৃতীয় শক্তি।