Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ক্ষতি কমিয়ে গতি আনাই চ্যালেঞ্জ

চলতি বাজেটে রেলের সুরক্ষা খাতেই মূলত জোর দেওয়া হয়েছে। কামরা, লাইন, পুরনো সিগন্যালিং ব্যবস্থা বদলে ফেলার জন্য অন্তত কুড়ি হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রক।

প্রস্তুতি সারা: বাজেট পেশের আগের দিন নিজের দফতরে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। —নিজস্ব চিত্র।

প্রস্তুতি সারা: বাজেট পেশের আগের দিন নিজের দফতরে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। —নিজস্ব চিত্র।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৫:২৯
Share: Save:

সুরক্ষা-গতি-পরিষেবা— এই তিন সূত্রেই অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি মূল বাজেটের সঙ্গে রেল বাজেটকে বাঁধতে চাইছেন বলে মনে করছে রেল মন্ত্রক।

চলতি বাজেটে রেলের সুরক্ষা খাতেই মূলত জোর দেওয়া হয়েছে। কামরা, লাইন, পুরনো সিগন্যালিং ব্যবস্থা বদলে ফেলার জন্য অন্তত কুড়ি হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রক। তবে এই বছরে পাঁচ-ছ’টি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার পর বছর গড়ালেই লোকসভা ভোট। তাই সুরক্ষা খাতের টাকা সেসের মাধ্যমে তোলা হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

জোর দেওয়া হচ্ছে গতিতেও। ট্রেনের যাতে গতি বাড়ে সে জন্য সিগন্যালিং খাতে অর্থ বরাদ্দ করার পাশাপাশি দু’টি নতুন ধরনের ‘ট্রেনসেট’ ঘোষণা করতে পারেন জেটলি। ‘ট্রেনসেট ১৮’ ও ‘ট্রেনসেট ২০’ নামে দু’টি ট্রেনের প্রোটোটাইপ প্রস্তুত, যা আগামী দিনে যথাক্রমে শতাব্দী ও রাজধানীর হিসেবে ছুটবে। এই ট্রেনগুলির গড় গতিবেগ হতে চলেছে ঘন্টায় ১৬০ কিলোমিটার।

নোট বাতিল, জিএসটি-র মতো ঘটনায় অর্থনীতি অস্থির। এই পরিস্থিতিতে রেলবাজেটের দায়িত্ব নেওয়ার দ্বিতীয় বছরেও রেলের আর্থিক পরিস্থিতি যে বিশেষ আশাপ্রদ নয়, তা বুঝত পারছেন অর্থমন্ত্রী জেটলি। এই পরিস্থিতিতে একাধিক বড় মাপের বিনিয়োগের পথে না-হেঁটে চালু প্রকল্পগুলি শেষ করার পক্ষপাতী কেন্দ্র। তবে মহারাষ্ট্রের লাটুরে রেল কোচ কারখানা ছাড়াও রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ়ের মতো ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে রেল কারখানা ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পণ্য ও যাত্রী দু’টি খাতেই নিম্নমুখী আয়ের সূচক। পণ্য পরিবহণে ট্রাকের হাতে মার খাচ্ছে রেল। তেমনি যাত্রিভাড়ায় ভর্তুকির কড়ি গুনতে গুনতে কার্যত নিঃস্ব রেলের ভাণ্ডার। রেলের দাবি, ভাড়ায় এখনও প্রায় ৪৫ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে থাকে রেল, ফি বছর যার পরিমাণ ৩৩-৩৫ হাজার কোটি টাকা। এই ভর্তুকি কমাতে যাত্রিভাড়া বাড়ানোর কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ভোটের মুখে আমজনতার স্লিপার শ্রেণিতে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া জেটলির পক্ষে কঠিন। আবার বাতানুকূল শ্রেণিতে গত চার বছর ধরে ভাড়া বাড়ায় যাত্রী কমেছে। টিকিটের চাহিদার অনুযায়ী ভাড়া বাড়ানোর যে ‘ফেক্সি ফেয়ার’ চালু হয়েছে, তারও সমালোচনা শুরু হয়েছে সর্বত্র। এ সবের কারণে যাত্রিভাড়ায় ৭ থেকে ৮ শতাংশ আয় কমেছে রেলের। পরিষেবা কর তুলে দেওয়ায় প্রায় ৪৬৬ কোটি ক্ষতি হয়েছে আইআরসিটিসি-র। সঙ্গে সপ্তম বেতন কমিশনের ধাক্কা। ফলে রেলের অপারেটিং রেশিও এখন এসে দাঁড়িয়েছে ৯৩-৯৪ টাকায়। অর্থ্যাৎ ১০০ টাকা আয় করতে খরচ হচ্ছে এই টাকা

সূত্রের খবর, সুরক্ষার পরেই রেল মন্ত্রকের লক্ষ্য হল যাত্রী পরিষেবা খাতে অর্থ বিনিয়োগ। সেই কারণে ওই খাতে ৩০০০ কোটি টাকার কাছাকাছি খরচ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যে অর্থ দিয়ে গোটা দেশের ৮৫০০ স্টেশনে ৩ হাজার এসক্যালেটর, ১ হাজার লিফ্‌ট লাগানো হবে। রাজধানী, দুরন্ত-সহ প্রায় ১১ হাজার ট্রেনে বসতে চলেছে সিসিটিভি। প্রতিটি ট্রেনে গড়ে ৮টি করে ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE