Advertisement
E-Paper

এখন যা কিছু করতে হবে গরিবদের দিকে তাকিয়েই, পরামর্শ তিন অর্থনীতিবিদের

অমর্ত্য সেন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ও রঘুরাম রাজনের বক্তব্য, যাঁদের সত্যিই প্রয়োজন, তাঁদের ক্ষেত্রে খরচে যেন কার্পণ্য না করে সরকার।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২০ ১৫:২৯
বাঁ দিক থেকে রঘুরাম রাজন, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অমর্ত্য সেন

বাঁ দিক থেকে রঘুরাম রাজন, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অমর্ত্য সেন

লকডাউনে স্তব্ধ অর্থনীতির চাকা। আর তাতেই দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে। অর্থনীতির এই থমকে যাওয়া, দেশের বিরাট সংখ্যক মানুষকে দারিদ্র আর অনাহারের পথে ঠেলে দেবে না তো? করোনার মতো অতিমারির ক্ষত সামলে ওঠার আগে মুখ থুবড়ে পড়বে না তো অর্থনীতি? এমন জোড়া সঙ্কটের মোকাবিলায় কী পদক্ষেপ করা উচিত সরকারের? দুই নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন পরামর্শ দিচ্ছেন, করোনার মতো বিপুল চাপ কাটাতে বুদ্ধিমানের মতো খরচ করা উচিত সরকারের। তবে এ-ও বলছেন, যাঁদের সত্যিই প্রয়োজন তাঁদের ক্ষেত্রে খরচে যেন কার্পণ্য না করা হয়।

করোনার আগে থেকেই ধুঁকছিল ভারতের অর্থনীতি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সমীক্ষায় দেশের জিডিপি-র হার পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। এমন সময়ে করোনার মতো অতিমারির হানা যেন গোদের উপর বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা দুনিয়ায় করোনার তাণ্ডবলীলা দেখেই দেশ জুড়ে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। আর তাতে গতিহীন হয়ে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। এমন পরিস্থিতি থেকে উঠে আসার জন্য কী করণীয়, তা নিয়ে ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ সংবাদপত্রে বিস্তারিত লিখেছেন দুই নোবেল জয়ী অথর্নীতিবিদ অর্মত্য সেন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ও আরবিআইয়ের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। সঙ্কটমোচনে সরকারকে একাধিক দাওয়াইও দিয়েছেন তিন জন।

তাঁরা লিখেছেন, সংক্রমণ রোখার জন্য দেশে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক ভাবে লকডাউন চলবে। কিন্তু এই সময়ে দেশের বিরাট অংশের মানুষ যেন দারিদ্র বা অনাহারের গহ্বরে না প্রবেশ করে, সে ব্যাপারেও সতর্ক করে দিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, এমনটা হলে লকডাউনের বিধিও লঙ্ঘিত হবে, কারণ ওই শ্রেণির মানুষের হারানোর কিছু নেই। তেমন ঘটনা ঘটলে তা হবে ট্র্যাজেডি। তাই সমাজের ওই অংশের মানুষের ন্যূনতম চাহিদা যাতে পূরণ হয় সে ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক থাকতে বলছেন তিন অর্থনীতিবিদই।

আরও পড়ুন: কেন্দ্রের তালিকায় রাজ্যের ‘হটস্পট’ কোনগুলি, দেখে নিন

সমাজের নিচুতলায় বাস করা মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর সামর্থ্য যে সরকারের আছে সে কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। ওই অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশের মজুত করা খাদ্য ভাণ্ডার কম নয়। অর্থনীতিবিদরা দাবি করেছেন, ২০২০ সালের মার্চের মধ্যে ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এফসিআই)-এর মজুত করা খাদ্যশস্যের পরিমাণ ৭.৭ কোটি টন যা এই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এমনকি ওই খাদ্যশস্যের পরিমাণ বাফার স্টক (প্রতি তিন মাস অন্তর যে পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুত রাখা হয়)-এরও তিন গুণ। এর উপর রবিশস্য মজুত হলে তার পরিমাণ আরও বাড়বে। দেশে এমন জরুরি পরিস্থিতিতে মজুত থাকা খাদ্যশস্য থেকে জন সাধারণকে বিলিয়ে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে আগামী তিন মাসের জন্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে মাসে পাঁচ কেজি করে খাদ্যশস্য গণবন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে।

তবে সরকারের রেশন বিলির প্রক্রিয়ার মধ্যেও ফাঁক রয়েছে। ওই অর্থনীতিবিদরা লিখেছেন, এর বাইরেও বহু মানুষ রয়ে গিয়েছেন। কারণ, যাঁদের কার্ড রয়েছে তাঁরাই রেশন পাচ্ছেন। অথচ এর বাইরেই বহু মানুষ রয়েছেন। উদাহরণ স্বরূপ তাঁরা ঝাড়খণ্ডের কথা টেনে এনে বলছেন, ওই ছোট্ট একটি রাজ্যেই এখনও ৭ লক্ষ মানুষ রেশন কার্ড পাননি। এ ছাড়াও বহু মানুষ এখনও ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ার ফাঁসে আটকে রয়েছেন। ওই সব মানুষের হাতে দ্রুত রেশন কার্ড তুলে দেওয়ার পক্ষেও সওয়াল করেছেন তাঁরা।

শুধু রেশন বিলিই নয়, ভিন রাজ্যে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ক্যান্টিন চালানোর পরামর্শও দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। স্কুল পড়ুয়া শিশুদের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়ার কথাও বলেছেন তাঁরা। এ ব্যাপারে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে কাজে লাগাতে হবে বলেও মত তাঁদের।

আরও পড়ুন: করোনায় মৃত্যু-আক্রান্তের শিখর পেরিয়ে এসেছে আমেরিকা, উঠছে লকডাউন, ঘোষণা ট্রাম্পের

তাঁদের মতে, অনাহার হিমশৈলের চূড়ামাত্র। আসল সমস্যা লুকিয়ে রয়েছে অন্যত্র। বহু মানুষের আয় এখন শূন্যে নেমে গিয়েছে। আর এই সঙ্কটের দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন তিন অর্থনীদিবিদই। তাঁরা বলেছেন, এই সময় খাবার নিশ্চিত করা গেলেও, কৃষকদের বীজ কিনতে টাকার দরকার। মুদিখানার দোকানদারের নানা পণ্য কিনতে অর্থের প্রয়োজন। এ ছাড়াও অনেকের মাথায় ঋণ পরিশোধের চিন্তা রয়েছে। এই সব বিষয়গুলিকে কখনও উড়িয়ে দেওয়া যাবে না বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।

এ ক্ষেত্রে সরকারি ভূমিকার কিছুটা সমালোচনা করেছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, খুব কম সংখ্যক মানুষের হাতেই অর্থ পৌঁছে দিতে পেরেছে সরকার। আর তার অঙ্কও কম। শুধু কৃষক নয়, ভূমিহীন কৃষিশ্রমিকদের হাতেও কেন সরকারি অর্থ পৌঁছবে না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, লকডাউনের শুরু থেকেই একশো দিনের কাজ বন্ধ। তাই অনেকের হাতেই টাকা নেই। তাঁরা বলছেন, যদি সাহসী কাজ কিছু করার থাকে বা চ্যালেঞ্জ নেওয়ার থাকে তা হলে এটাই সেরা সময়।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

Amartya Sen Abhijit Banerjee Raghuram Rajan India economy Coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy