Advertisement
E-Paper

শিবিরে দুর্দশায় শ্রমিকেরা, সমাধান হাতড়াচ্ছে কেন্দ্র

কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী অবশ্য জানিয়েছেন, আটকে পড়া ২০ লক্ষ শ্রমিককে ঘরে ফেরানোর বিষয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে কথা চলছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২০ ০৪:২৩
দিল্লির একটি ত্রাণশিবিরে পরিযায়ী শ্রমিকরা। ছবি: এএফপি।

দিল্লির একটি ত্রাণশিবিরে পরিযায়ী শ্রমিকরা। ছবি: এএফপি।

লকডাউন চলাকালীন ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকেরা ঘরে ফিরলে ভারতের সমস্ত প্রান্তে দাবানলের মতো করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আজ হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। কিন্তু কর্মী সংগঠনগুলির মতে, ত্রাণশিবিরে শ্রমিকেরা কী অসহনীয় পরিস্থিতিতে রয়েছেন, শুক্রবার সুরতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, শনিবার দিল্লির কাশ্মীরি গেটের ত্রাণশিবিরে অগ্নিসংযোগ এবং যমুনায় ঝাঁপ দিয়ে এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা তারই প্রতিফলন।

কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী অবশ্য জানিয়েছেন, আটকে পড়া ২০ লক্ষ শ্রমিককে ঘরে ফেরানোর বিষয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে কথা চলছে। তিনি চান, করোনার এই সময়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় জাতীয় সড়ক তৈরির কাজ এগোক। যেখানে অনায়াসে কাজ দেওয়া সম্ভব আটকে পড়া কর্মীদের। এ নিয়েও রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের কাছে তাঁর দাবি।

ভিন্ রাজ্যের আটকে পড়া শ্রমিকরা যে পাহাড়প্রমাণ সমস্যার মুখে পড়েছেন, শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সে প্রসঙ্গ তুলেছেন বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও। আর্জি জানিয়েছেন, তাঁদের জন্য আলাদা করে পরিকল্পনা করা হোক। উল্টো দিকে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মেনে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল যেন আটকে পড়া কর্মীদের ঠিক করে দেখভাল করে, সেই আর্জি জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বহু ট্রেড ইউনিয়নের অভিযোগ, এই কর্মীদের অধিকাংশেরই ভোট অন্য রাজ্যে হওয়ায় তাঁদের দায় নেওয়ার গরজ নেই কর্মস্থলের রাজ্যগুলির। এগিয়ে আসছে না কেন্দ্রও। এই দুয়ের মধ্যে অমানবিক পরিবেশ এবং অসহনীয় কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে তাঁদের।

কাশ্মীরি গেটে অ্যাসবেস্টসের ছাদের যে ত্রাণশিবিরে বহু শ্রমিককে রাখা হয়েছে, সাধারণত সেখানে বর্ষা ও শীতে মাথা গোঁজেন ভবঘুরেরা। অভিযোগ, জায়গার তুলনায় থাকতে হচ্ছে অনেক বেশি জনকে। তার উপরে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ। ফলে অনেকেরই ঠাঁই খোলা আকাশের নীচে। খাবার কোনও ক্রমে জুটলেও ঘাটতি পানীয় জলের জোগানে। মিলছিল না ডাক্তার, ওষুধ, এমনকী শিশুদের খাওয়ানোর দুধও। অভিযোগ, এর জেরে বিক্ষোভ মাথা চাড়া দেওয়ার পরেই লাঠি চালায় পুলিশ। তিন-চার জন ঝাঁপ দেন যমুনার জলে। তাঁদের মধ্যে এক জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে রবিবার। ওই গোলমালের সূত্রেই শনিবার সন্ধ্যায় ত্রাণশিবিরে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছিল বলে দাবি।

আটকে থাকা এই শ্রমিকদের অধিকাংশই ঠিকাকর্মী। কেন্দ্রের নির্দেশিকা অগ্রাহ্য করে লকডাউন শুরু হতেই যাঁদের অনেককে কাজে আসতে বারণ করেছে সংস্থা। ফলে হাতে টাকা নেই। কারখানা ফের কবে খুলবে, জানা নেই। ভাড়া না-পাওয়ার আশঙ্কায় অনেককে আস্তানা ছাড়তে বলেছেন বাড়ির মালিক। তাই নেই ছাদও। এই পরিস্থিতিতে যাতে অন্তত রেশনের চাল-আটা খেয়ে বেঁচে থাকা যায়, খোঁজা যায় ফসল কাটার কাজ, মূলত সেই লক্ষ্যেই কয়েকশো কিলোমিটার হেঁটেও বাড়ি পৌঁছতে মরিয়া ছিলেন তাঁরা। হাজার-হাজারে ভিড় জমিয়েছিলেন দিল্লির বাস টার্মিনাসে।

শনিবার নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অনেক মুখ্যমন্ত্রীই বলেছেন, কেন্দ্র এই সঙ্কটের সময়ে কর্মী কিংবা বেতন ছাঁটাই না-করার কথা বলেছে ঠিকই। কিন্তু ছোট সংস্থা তা কতটা পারবে, সে বিষয়ে সন্দেহ যথেষ্ট। একই কথা প্রযোজ্য বাড়ির মালিকদের ক্ষেত্রে। ফলে সেই ভরসায় না-থেকে, এই শ্রমিকদের জন্য কিছু সুরাহা ঘোষণা করুক কেন্দ্র। সুপারিশ, সামনেই ফসল কাটার মরসুম। অথচ গ্রামে শ্রমিকের অভাব। ফলে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে ও শারীরিক পরীক্ষার পরে সুস্থ শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানো গেলে, তাঁরা মাঠে কাজ পেতে পারেন। সুবিধা হবে চাষেরও। যদিও এখন তাঁদের ফেরানো কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

Coronavirus Migrant Labourers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy