সাইকেলে চড়ে তামিলনাড়ু থেকে কল্যাণীতে অসমের শ্রমিকরা।
টানা সাত দিন সাইকেলে করে দেড় হাজার কিলোমিটারের বেশি পাড়ি দেওয়ার পর, সোমবার তাঁরা গাড়িতে চড়লেন বাড়ি ফিরতে। যদিও গাড়ির অপেক্ষা তাঁরা করেননি। অসমের কার্বিআংলঙের সাত যুবক সাইকেল ভরসা করেই, যা থাকে কপালে বলে, বেরিয়ে পড়েছিলেন।
ট্রেনে জায়গা হয়নি। লকডাউনে কাজ নেই। হাতে টাকা নেই। বাড়ির ভাড়া না দিলে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও পাওয়া যাবে না। মরিয়া হয়েই সাইকেলে করে চেন্নাই থেকে বাড়ি ফেরার রাস্তা ধরেছিলেন অসমের কার্বিআংলঙের এই সাত যুবক। সাত দিন সাইকেলে চেপে তাঁরা পৌঁছন নদিয়ার কল্যাণীতে। পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্য করার জন্য তৈরি একটি মঞ্চের সহায়তায় সোমবার রাতে সেখান থেকেই তাঁরা একটি মিনি ট্রাকে রওনা হয়েছেন বাড়ির দিকে। দীর্ঘ পথের সাথী সাতটি সাইকেলই চলল। ধরম হানসে, রেনসিং ক্রামসা, সেমসন এংটি-রা সবাই কাজ করতেন চেন্নাইয়ের কাছেই তামিলনাড়ুর থিরুভালুর জেলার কোরাত্তুরে। সেখানে রেল ওয়াগন তৈরির কারখানায় ঠিকাদারের অধীনে চাকরি করতেন এঁরা সবাই। বয়স সকলেরই ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।
মাইগ্রান্ট ওয়ার্কার্স সলিডারিটি নেটওয়ার্ক নামে পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্যার্থে তৈরি একটি মঞ্চের সদস্য সৌম্য চট্টেপাধ্যায় বলেন, ‘‘সারা দেশেই আমাদের মঞ্চের সদস্যরা আছেন। অসম থেকে আমরা খবর পাই এই সাতজনের দলের সম্পর্কে। ২৩ তারিখ যখন ওঁরা ওড়িশা পেরিয়ে বাংলায় ঢুকছেন, তখন যোগাযোগ হয় আমাদের সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত কল্যাণীতে এই দলটির সঙ্গে আমাদের দেখা হয়।” সাত জনকে গাড়িতে অসমে পাঠাতে আলাদা ভাবে তত্পরতা নেন কল্যাণীর মহকুমা শাসক ধীমান বরাই।
আরও পড়ুন: আত্মহ্ত্যা নয় খুন, তেলঙ্গানায় কুয়ো থেকে ন’টি দেহ উদ্ধারের ঘটনায় নয়া মোড়
ধরম, রেনসিংদের বাড়ি অসমের পশ্চিম কার্বিআংলঙের প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামে। ১৭ মে তাঁরা রওনা দিয়েছিলেন তামিলনাড়ু থেকে। তাঁদের কথায়, রাতের আশ্রয় ছিল জাতীয় সড়কের পাশে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের তলায়। ভাগ্য ভাল থাকলে ফাঁকা লরির ডালায় রাত কাটাতেন। বাকি দিন সাইকেলে। এ ভাবেই চলতে চলতে তাঁরা পৌঁছে যান বাংলায়।
কখনও কখনও অবশ্য সহৃদয় কোনও ট্রাক চালক সাইকেল শুদ্ধ তাঁদের জায়গা দিয়েছেন লরিতে। খানিকটা পথশ্রম লাঘব হয়েছে। গত বুধবার বাংলা-ওড়িশায় যখন তাণ্ডব চালাচ্ছে, আমপান তাঁরা তখন অন্ধ্র-ওড়িশা সীমানায়। মাইগ্রান্ট ওয়ার্কার্স সলিডারিটি নেটওয়ার্কের পাশাপাশি অবশ্য এই যুবকরা সাহায্য পেয়েছেন কার্বিআংলঙের প্রাক্তন বিধায়ক হোলিরাম তেরাঙের। টেলিফোনে তিনি বলেন, ‘‘এখানকার কয়েক হাজার শ্রমির রয়েছেন বাইরে। আমি নিজে সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট করেছিলাম যে কারওর প্রয়োজন থাকলে আমাকে যোগাযোগ করতে। এর মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখলাম ওই সাত জন যুবক সাইকেলে রওনা দিয়েছেন।” হোলিরাম জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি তিনি কার্বিআংলঙ অটোনমাস বডির প্রশাসককে জানান। তার পর ওই যুবকদের ফোন নম্বর যোগাযোগ করে প্রয়োজন মতো টাকা তাঁদের পাঠানো হয়। যাতে তাঁরা রাস্তায় খাবার, ওযুধ কিনতে পারেন। সেই সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় বিভিন্ন রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে, যাতে ওই সাত যুবক রাজ্যগুলিতে ঢোকা বেরনোর পাস পেয়ে যান।
আরও পড়ুন: গালওয়ানে সেনা তৎপরতা চিনের, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সঙ্ঘাতের পরিস্থিতি
কল্যাণীতে ওঁরা পৌঁছন রবিবার সকালে। সেখান রাতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে সাহায্য করেন মহকুমাশাসক। রাজ্য সীমানা পেরনোর পাস জোগাড় করতে করতে সোমবার হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত সোমবার রাতে একটি মিনিট্রাকে করে রওনা হন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy