দিল্লিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
দুপুরে ছিলেন রুষ্ট, রাতে শরদ পওয়ারের বাড়িতে বৈঠক করার পর প্রশমিত হয়েছিলেন অনেকটা। বুধবার দিনের শেষে অনেকেই ভেবেছিলেন, কংগ্রেসের প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নরম হয়েছেন। বৃহস্পতিবার মমতা বুঝিয়ে দিলেন, মোদী বিরোধিতার প্রশ্নে কংগ্রেসের সঙ্গে জাতীয় স্তরে হাত মিলিয়েই চলবেন তিনি, কিন্তু বাংলায় আসন সমঝোতার কোনও সম্ভাবনা নেই। শুধু বাংলায় নয়, দিল্লি, অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতেও কংগ্রেসের বদলে আঞ্চলিক দলগুলিকে অগ্রাধিকার দিতেই যে তিনি বেশি আগ্রহী, সেটাও এ দিন আরও একবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে দিল্লির প্রেসক্লাবে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন তাঁর খুব বেশি কর্মসূচি ছিল না। সরকারি কাজ, যন্তরমন্তরের ধর্না, বিরোধী দলগুলির বৈঠক— সবই সারা হয়ে গিয়েছে বুধবার। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাউথ অ্যাভিনিউয়ের বাংলোতেই ছিলেন। বিকেল সওয়া ৪টে নাগাদ রাষ্ট্রপতি ভবনে যান তিনি। দেখা করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে। তবে এই সাক্ষাতের সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান। রাষ্ট্রপতি ভবনে ঢোকার সময়ই তিনি জানিয়ে যান যে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নেহাতই সৌজন্য সাক্ষাতে যাচ্ছেন। পরে প্রেসক্লাবে পৌঁছেও একই কথা বলেন।
এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন কোনও বার্তা দিতে পারেন বলে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের আশা ছিল। বুধবার সংসদের সেন্ট্রাল হলে পৌঁছনোর পর থেকেই কংগ্রেসের উপরে মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিল তৃণমূল চেয়ারপার্সনের। যন্তরমন্তরের ধর্না মঞ্চ থেকে দেওয়া ভাষণেও তার আঁচ মিলেছিল।
আরও পড়ুন: পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে হামলা, নিহত ১৮ জওয়ান, দায় নিল জৈশ-ই-মহম্মদ
কিন্তু রাতে শরদ পওয়ারের বাড়িতে বিরোধী দলগুলির বৈঠক হওয়ার পরে পরিস্থিতি বদলেছিল বলে অনেকেই মনে করছিলেন। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীকে পাশে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার রাতে জানিয়েছিলেন, জাতীয় স্তরে বিরোধী দলগুলি পরস্পরের সঙ্গে ঘোষিতভাবেই জোটে থাকবে। এই জোট নির্বাচনের পরে নয়, নির্বাচনের আগেই গঠিত হবে বলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন। আবার মমতার উপস্থিতিতেই শরদ পওয়াররা সেই জোটের অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচির খসড়া তৈরি করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন রাহুল গাঁধীকে। তাতে মমতার সম্মতিও ছিল। এই ঘটনাপ্রবাহে চোখ রেখেই কেউ কেউ ভেবেছিলেন, বৃহস্পতিবার দিল্লির প্রেসক্লাবে মমতা যদি মুখ খোলেন, তাহলে কংগ্রেস সম্পর্কে তাঁর ঈষৎ নরম অবস্থানের আভাস মিলবে। কিন্তু তা হল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, আসন সমঝোতার প্রশ্নে যন্তরমন্তরের মঞ্চ থেকে তিনি যা বলেছিলেন, সেই অবস্থান থেকে তিনি একটুও পিছু হঠেননি।
বিজেপি বিরোধী জোটে সামিল হতে প্রস্তুত যে দলগুলি, বিভিন্ন রাজ্যে তাদের মধ্যে লড়াই থাকতেই পারে, কিন্তু জাতীয় স্তরে তারা ঐক্যবদ্ধই থাকবে— এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম বার্তা ছিল এই। তাতেই প্রশ্ন ওঠে যে, রাজ্যে রাজ্যে যদি পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়তে থাকে এই দলগুলি, তাহলে জাতীয় স্তরে জোট কীভাবে সম্ভব? মমতা বলেন,‘‘রাজ্যে রাজ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে, বিভিন্ন রাজ্যের পরিস্থিতি আলাদা, তাই যেখানে যে শক্তিশালী সেখানে সেই লড়ুক।’’ বাংলায় তৃণমূলেরই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত— খুব স্পষ্ট করে ফের এ কথা বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গেই শক্তিশালী, সে রাজ্যে যদি তৃণমূল না লড়ে, তা হলে আর কোথায় লড়বে? এ দিন এমন প্রশ্নও তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আম আদমি পার্টি (আপ)কে যদি দিল্লিতে লড়তে দেওয়া না হয়, তাহলে তারা অন্য কোথায় লড়বে? প্রশ্ন মমতার। তবে দিল্লিতে আপ যে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে প্রস্তুত, মমতা সে কথাও জানান। তিনি বলেন, ‘‘আমি কাল রাতে শুনেছি আম আদমি পার্টি জোট চায় কংগ্রেসের সঙ্গে। কংগ্রেস কী চায়, সেটা কংগ্রেসকেই জানাতে দিন।’’
নির্বাচনের আগে থেকেই রাহুল গাঁধীকে জোটের নেতা বা জোটের মুখ হিসাবে মেনে নেওয়ার কোনও প্রশ্নই যে উঠছে না, তা-ও এ দিন তৃণমূল চেয়ারপার্সন সাফ বুঝিয়ে দিয়েছেন। জোটের তরফ থেকে অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি তৈরি করার দায়িত্ব কাউকে নিতেই হত, তাই কংগ্রেসকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে— বলেন মমতা। অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচির খসড়া তৈরি করার দায়িত্ব পেয়েছেন বলেই রাহুল গাঁধী জোটের নেতা হয়ে গিয়েছেন, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই—বৃহস্পতিবার বেশ স্পষ্ট ইঙ্গিতেই সে কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: কংগ্রেস-বিজেপি কেউ কারও চেয়ে কম যায় না, বললেন মায়াবতী
জোটের নেতা কে হবেন, তা নির্বাচনের পরেই আলোচনা করে স্থির হবে বলে মমতা এ দিন জানান। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে আবার দিল্লি আসছেন এবং ২৬ অথবা ২৭ ফেব্রুয়ারি বিরোধী দলগুলি আবার বৈঠকে বসছেন বলেও জানান তিনি।
(ভোটের খবর, জোটের খবর, নোটের খবর, লুটের খবর- দেশে যা ঘটছে তার সেরা বাছাই পেতে নজর রাখুন আমাদের দেশ বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy