Advertisement
E-Paper

‘লোকদেখানো’ শাস্তি ৩ নেতা ও সাধ্বী প্রজ্ঞার

স্বভাবতই এই ‘লোকদেখানো ব্যবস্থা’র বিরুদ্ধে সরব হয়েছে কংগ্রেস। তারা বলছে, এই হাস্যকর শাস্তি ঘোষণা প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ আরএসএস-বিজেপি তো নাথুরামের উত্তরাধিকারকেই বয়ে নিয়ে চলেছে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৯ ০২:০৮

চাপে পড়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে জানিয়ে দিলেন, গাঁধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসের পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য সাধ্বী প্রজ্ঞা ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার পরেও তিনি মন থেকে তাঁকে ক্ষমা করতে পারবেন না। বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ বললেন, ‘‘ভোপালে তাঁদের প্রার্থীর মন্তব্যকে দল গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।’’ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। সন্ধ্যায় জানালেন কী সেই ব্যবস্থা। দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটিকে বলা হয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে। ১০ দিন— তার মধ্যে রবিবার শেষ পর্যায়ের ভোট হয়ে যাবে, ২৩ তারিখে ভোটের ফল প্রকাশ হয়ে নতুন সরকারের ছবিও স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা। এবং নজর থেকে সরে যাবে সব বিতর্ক।

স্বভাবতই এই ‘লোকদেখানো ব্যবস্থা’র বিরুদ্ধে সরব হয়েছে কংগ্রেস। তারা বলছে, এই হাস্যকর শাস্তি ঘোষণা প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ আরএসএস-বিজেপি তো নাথুরামের উত্তরাধিকারকেই বয়ে নিয়ে চলেছে। ভোটের মুখে গাঁধীপ্রীতি দেখানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও তাদের হৃদয়ে যে গডসের বাস, সাধ্বী প্রজ্ঞার মন্তব্যের পর বিজেপির একের পর এক পদাধিকারীর সমর্থন-টুইটই প্রমাণ। মন্ত্রী অনন্তকুমার হেগড়ে সাধ্বীকে সমর্থন করে লেখেন, ‘৭০ বছর পরে অবশেষে দেশবাসী গডসের সঠিক মূল্যায়ন করছেন। এ জন্য আমি আনন্দিত।’ সাংসদ নলিনকুমার কাটিল রাজীব গাঁধী ও কসাবের সঙ্গে গডসের তুলনা টেনে টুইটে বলেন, ‘গডসে একটা মানুষকে মেরেছিলেন, জঙ্গি কসাব ৭২ জনকে হত্যা করেছে আর রাজীব গাঁধী ১৭,০০০ খুন করেছেন। আপনারাই ঠিক করুন কে বেশি নিষ্ঠুর?’ দলের প্রচার শাখার নেতা অনিল সৌমিত্র আরও এক ধাপ এগিয়ে লেখেন, ‘গাঁধী আসলে পাকিস্তানের জনক। তাঁর মতো লক্ষ লক্ষ লোক দেশে জন্মায়।’

এর পরে এক দিকে যেমন কংগ্রেস ও অন্য বিরোধী দলগুলি সরব হয়, সমালোচনায় নামেন সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ। মহীন্দ্রা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান আনন্দ মহীন্দ্রা টুইটে লেখেন, ‘গোটা বিশ্ব যখন মূল্যবোধের সঙ্কটে, আমাদের দেশ মহাত্মা গাঁধীর দেশ হিসেবে আলোকবর্তিকা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে আজও অনুপ্রাণিত করেন বাপু। কিছু বিষয় বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে জানতে হয়, না হলে আমরা তালিবান হয়ে উঠব।’

দেশজুড়ে সমালোচনায় মুখে এক মন্ত্রী-সহ তিন পদাধিকারীর বিরুদ্ধে ‘শাস্তি’ ঘোষণা করতে হয় অমিত শাহকে। সেই শাস্তির বহর নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মন্ত্রী হেগড়ে এবং সাংসদ কাটিলকে ১০ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। দলের চাপে মন্তব্যের দেড় ঘণ্টার মধ্যে সাধ্বীকে নিয়মরক্ষার দুঃখপ্রকাশ করতে হওয়ায় মন্ত্রী ও সাংসদ অবশ্য টুইট সরিয়ে নেন। হেগড়ে যুক্তি দেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অনিল সৌমিত্র টুইট না-সরানোয় তাঁকে দল থেকে সাসপেন্ড করেন শাহ। দলের পদ থেকেও সরিয়ে দেন। প্রশ্ন উঠেছে, অনন্ত হেগড়ে মন্ত্রী এবং কাটিল সাংসদ হওয়ার জন্যই কি গুরু পাপে লঘু শাস্তি পেলেন?

কংগ্রেস অবশ্য বলছে, ভোটের মুখে লোকদেখানো দুঃখপ্রকাশ ও লঘু শাস্তির ব্যবস্থা করা হলেও বিজেপি নেতারা এই প্রথম গডসে-প্রেম দেখাচ্ছেন না। উদাহরণ হিসেবে পুরনো একটি টুইট তুলে এনেছে কংগ্রেস। বিজেপির মিডিয়া সেলের নেতা অমিত মালব্য ২০১৫-র ৫ জানুয়ারি টুইটে বলেছিলেন, ‘নাথুরামের গাঁধী হত্যার যুক্তি ছিল। সভ্য সমাজের
উচিত তাঁর কথাও শোনা।’ সঙ্গে আদালতে গডসের সাফাই নিয়ে বই ‘কেন আমি গাঁধীকে হত্যা করেছি’-র প্রচ্ছদের ছবি। কংগ্রেস বলছে, বিজেপির নেতারা নিয়মিত এমন টুইট করে গেলেও কারও বিরুদ্ধে কখনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নিন্দা বা দুঃখপ্রকাশও নয়।

এ দিন অমিতকে প্রশ্ন করা হয়, একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্যের পরে তিনি কি মনে করেন না সাধ্বী প্রজ্ঞাকে ভোপালে প্রার্থী করা ভুল হয়েছে? বিজেপি সভাপতি উল্টে সাংবাদিকদের দোষারোপ করে বলেন, কংগ্রেস ‘হিন্দু সন্ত্রাসবাদ’-এর যে ‘চক্রান্ত’ সাজিয়েছে, সে বিষয়টি এর সঙ্গে গুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওই চক্রান্তের প্রতিবাদ হিসাবেই সাধ্বীকে প্রার্থী করা হয়েছে। তিনি ভোপাল থেকে বিপুল ভোটে জিতবেনও।

Lok Sabha Election 2019 Congress BJP Pragya Thakur Amit Shah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy