Advertisement
E-Paper

প্রচারে নেই বিবেকানন্দ, আবার রয়েছেনও

সত্যিই, একটি পরিবারের কাহিনিই বার বার কাঁপিয়ে দিচ্ছে এই রাজ্যটাকে। তাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের রাজনীতির অনেক কিছু।

অঞ্জন সাহা

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২৫
রাজশেখরের ছোট ভাই ওয়াইএস বিবেকানন্দ রেড্ডি। ছবি: সংগৃহীত।

রাজশেখরের ছোট ভাই ওয়াইএস বিবেকানন্দ রেড্ডি। ছবি: সংগৃহীত।

কাডাপার আরটিসি বাসস্ট্যান্ডের সামনে বসে গল্পটা বলছিলেন পঁয়ষট্টি বছরের বৃদ্ধ শেখ মেহবুব।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধে। প্রচণ্ড গরমে সারাদিন ভোটের প্রচার চলছে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে। এখন গরম কমে আসতেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছেন ভোটপ্রার্থীরা। এ অঞ্চলে জোর জগন্মোহন রেড্ডির, জগনের ছবি লাগিয়ে তারস্বরে মাইক বাজিয়ে চলা প্রচার গাড়ির যাতায়াতই বেশি। প্রতিটিতেই অন্ধ্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত রাজশেখরের উজ্জ্বল মুখ।

বৃদ্ধ মেহবুবের কথায়— অভিশপ্ত পরিবার! একই পরিবারের তিন জন এ ভাবে মারা যেতে পারে, ভাবা যায়? এত নামডাক, অথচ সব শেষ হয়ে গেল! কার যে কখন কী হয়!

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সত্যিই, একটি পরিবারের কাহিনিই বার বার কাঁপিয়ে দিচ্ছে এই রাজ্যটাকে। তাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের রাজনীতির অনেক কিছু।

২০০৯-এর সেপ্টেম্বরে এক দিন আচমকাই হারিয়ে যায় তৎকালীন অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী রাজশেখর রেড্ডির হেলিকপ্টার। পরের দিন কুরনুল থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে নাল্লামোল্লার জঙ্গলে মেলে সেই কপ্টারের ধ্বংসাবশেষ। অন্ধ্র জুড়ে ওয়াইএসআর সমর্থকদের হাহাকার। রোজই আসতে থাকে একের পর এক আত্মহত্যার খবর। মৃতের সংখ্যা ১২০ ছাড়িয়ে যায়! পরে রাজশেখরের পরিবার রাজ্যের মানুষের কাছে আর্জি জানায়, আবেগ ছেড়ে উঠে আসুন। সেখান থেকেই জগনের পদযাত্রা আর কংগ্রেস হাইকমান্ডের সঙ্গে মতভেদের জেরে নতুন দল।

মেহবুব বললেন, তখনও কিন্তু এখানকার মানুষ রাজশেখরের বাবার কথা মনে করেছিল। কারণ, তারও প্রায় বছর দশেক আগে খুন হয়েছিলেন পঁচাত্তরের বৃদ্ধ ওয়াইএস রাজা রেড্ডি। গাড়িতে ফিরছিলেন নিজের বাড়ি পুলিভেনডুলাতে। বোমা মারা হয় তাঁকে। ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল তেলুগু দেশমের বেশ কয়েক জন নেতার। যে দিন দিল্লিতে সে মামলার রায় বের হল, তার কয়েক মাসের মধ্যেই কপ্টার দুর্ঘটনা।

এ বার সেই পরিবারে আবার খুন! মেহবুবের গলায় আতঙ্ক। তিনি বলছেন রাজশেখরের ছোট ভাই ওয়াইএস বিবেকানন্দ রেড্ডির অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা। বিবেকানন্দও অন্ধ্রের নেতা ছিলেন। কাপাডা থেকে সাংসদও হয়েছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন জগনের দলে। সম্প্রতি নিজের বাড়ির চানঘরে তাঁর রক্তাক্ত দেহ মিলেছে। ওই ঘটনার পরেই মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু আর জগন্মোহন রেড্ডির মধ্যে দোষারোপের পালা শুরু। চন্দ্রবাবু তদন্তের জন্য পুলিশের বিশেষ ‘সিট’ দল গড়েছেন। জগন সিবিআই চান। ব্যাপারটা এই পর্যায়েও নেই। বিবেকানন্দ হত্যায় চন্দ্রবাবুর তির জগনের দিকে। ভোটের সভায় বলেছেন— চিনে রাখুন এই লোকটিকে। যে নিজের কাকাকেও ছাড়ে না, সে তো যা খুশি করতে পারে!

আর জগন? তাঁর দাবি, চন্দ্রবাবু তদন্তে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন। ভোটের মুখে পরিবারের লোকেদেরই জড়িয়ে দেওয়া হতে পারে তাঁর কাকার খুনের ঘটনায়।

শেষ পর্যন্ত আদালতে গিয়েছেন বিবেকানন্দের স্ত্রী। তেলুগু দেশম আর ওয়াইএসআর কংগ্রেস দু’দলকেই অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের নির্দেশ, ওই মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করা চলবে না। সিট-ও তদন্তের অগ্রগতির কথা যেন সংবাদমাধ্যমে জানায়।

তাই প্রচারে আপাতত স্থগিত দোষারোপের পালা। উঠে যেতে যেতে মেহবুব বললেন, জানেন, বিবেকানন্দকে খুব ভালবাসতাম। যখন জিতেছিলেন, এ সব জায়গায় কত আসতেন। উনি নেই, কিন্তু আমরা ভুলতে পারিনি।

Y. S. Vivekananda Reddy Lok Sabha Election 2019 Andhra Pradesh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy