Advertisement
E-Paper

ইভিএম-ভিডিয়োই আশঙ্কা বাড়াচ্ছে বিরোধীদের

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে বলা হয়েছে, ইভিএমে কারচুপির কোনও প্রশ্নই নেই। ভোটে ব্যবহৃত সব ইভিএম স্ট্রং রুমে আধা সেনার কড়া পাহারায় সুরক্ষিত রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৯ ০২:৫৩

ভোটগণনার ৪৮ ঘণ্টা আগে সব জল্পনার কেন্দ্রে ইভিএম। বিরোধীদের আশঙ্কা, ইভিএম বদল করে ভোটের ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে শাসক দল। সেই আশঙ্কায় ইন্ধন জুগিয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা একাধিক ভিডিয়ো। যাতে রক্ষীবিহীন অবস্থায় ইভিএম আনা-নেওয়ার ছবি দেখা গিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে বলা হয়েছে, ইভিএমে কারচুপির কোনও প্রশ্নই নেই। ভোটে ব্যবহৃত সব ইভিএম স্ট্রং রুমে আধা সেনার কড়া পাহারায় সুরক্ষিত রয়েছে।

ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চাপে রাখতে ২২টি বিরোধী দলের নেতারা আজ দিল্লিতে নির্বাচন সদনে গিয়েছিলেন। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর, চন্দৌলি, ডোমারিয়াগঞ্জ ও ঝাঁসি-সহ বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিয়ো কমিশন কর্তাদের দেখিয়ে বলেন, নিরাপত্তা রক্ষীদের অনুপস্থিতিতে ইভিএম রাখার ওই ভিডিয়োগুলি মূলত বিজেপিশাসিত রাজ্য থেকেই আসছে। অতএব তাঁদের আশঙ্কা এই সব ইভিএমের মাধ্যমে কারচুপি করতে পারে বিজেপি।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

জবাবে কমিশন বলে, মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োতে যে সব ইভিএম দেখানো হচ্ছে, সেগুলি রিজার্ভে থাকা বা ভোটের কাজে ব্যবহৃত না হওয়া ইভিএম। গাজিপুরে যে বেনিয়ম হয়নি, তা ইতিমধ্যেই মেনে নিয়েছেন ওই কেন্দ্রের প্রার্থী। চন্দৌলির অভিযোগ ভিত্তিহীন। সেখানে ভোটে ব্যবহৃত ইভিএম সুরক্ষিতই রয়েছে। ডোমারিয়াগঞ্জের অভিযোগেরও ভিত্তি নেই বলে কমিশনকে রিপোর্ট দিয়েছেন স্থানীয় জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার। ঝাঁসির ক্ষেত্রেও ভোটে ব্যবহৃত ইভিএম প্রার্থীদের উপস্থিতিতে স্ট্রং রুমে রাখা হয়েছে।

কিন্তু রিজার্ভ ইভিএম-ও নিরাপত্তা রক্ষীর উপস্থিতিতে সুরক্ষিত স্থানে রাখার নির্দেশ কেন কিছু ক্ষেত্রে মানা হয়নি তা নিয়ে নিরুত্তর কমিশন। এ সংক্রান্ত অভিযোগ পরোক্ষে মেনে নিয়ে কমিশন জানিয়েছে, এই সব ক্ষেত্রে তদন্তের পরে সংশ্লিষ্ট অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এই অবস্থায় বিরোধী দলগুলির দাবি, প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের যে পাঁচটি বুথের ভিভিপ্যাট স্লিপ গোনা হবে, সেগুলি মূল গণনার আগেই গুনে ইভিএমের ফলের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হোক। কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ পরে বলেন, ‘‘যদি ইভিএম এবং ভিভিপ্যাটের ফল না-মেলে তা হলে সেই কেন্দ্রের সব ক’টি ভিভিপ্যাটের স্লিপ গুনে ইভিএমের ফলের সঙ্গে মেলানোর দাবি জানিয়েছি।’’ কমিশন অবশ্য সব ইভিএম গোনার পরেই পাঁচটি ভিভিপ্যাটের স্লিপ গুনে মিলিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তবে আজ কমিশনের পক্ষ থেকে বিরোধী প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্ত করে জানানো হয়, ভোট ব্যবহৃত ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট নির্বাচন শেষ হওয়ার পরে কড়া নিরাপত্তায় স্ট্রং রুমে রেখে দেওয়া হয়। তার পর প্রার্থীদের ও কমিশনের পর্যবেক্ষকের উপস্থিতিতে সেই ঘরটি ‘ডাবল লক’ করা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি ভিডিয়োগ্রাফি করে রাখা হয় এবং গণনা শেষ না-হওয়া পর্যন্ত ওই স্ট্রংরুমটি নিরবচ্ছিন্ন ভাবে সিসিটিভির নজরদারিতে থাকে। প্রতিটি স্ট্রং রুম চব্বিশ ঘণ্টা আধা সেনা পাহারা দেয়। এমনকি চাইলে প্রার্থী বা তাঁর এজেন্ট স্ট্রং রুমের সামনে চব্বিশ ঘণ্টা পাহারা দিতে পারেন। গণনার দিন প্রার্থী বা তাঁর এজেন্টের উপস্থিতিতে স্ট্রং রুম খোলা হয়। গণনা শুরু হওয়ার আগে গণনাকেন্দ্রে থাকা প্রার্থীদের এজেন্টের উপস্থিতিতে প্রতিটি যন্ত্রের সিরিয়াল নম্বর পরীক্ষা করা হয় ও সেটি যে সিল বন্ধ রয়েছে তা দেখানো হয়। তার পরেই সেই ইভিএমে গণনা শুরু হয়। কমিশনের দাবি, এর ফলে ভোট ব্যবহৃত ইভিএমে কারচুপি করা অসম্ভব।

বৈঠকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল সব ক’টি ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট মিলিয়ে দেখার অনুরোধ জানান। সূত্র জানিয়েছে, কমিশন কর্তারা জানান, একে সেটি সময়সাপেক্ষ। দ্বিতীয়ত, এই আর্জি জানিয়ে দায়ের করা মামলা সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হয়ে গিয়েছে। কমিশনের ওই জবাবে ক্ষুব্ধ চন্দ্রবাবু বলেন, আদালতকে ঢাল করবেন না। এখানে যে ২২টি দল এসেছে তাঁরা দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করে। কমিশনের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করে তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের কটাক্ষ, ‘‘নির্বাচন কমিশন একটি মহান সংস্থা। গত দু’মাসে আপনারা যা করেছেন তাতে মহানতর হয়ে উঠেছেন।’’

আজ এনডিএর বৈঠকেও ইভিএম প্রসঙ্গ ওঠে। পরে রাজনাথ সিংহ সাংবাদিকদের জানান, ইভিএম নিয়ে সংশয়ের বাতাবরণ তৈরি করে বিরোধীরা অন্যায় করছেন বলে মত প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। তাঁদের অভিযোগ, বিরোধীদের এই অবস্থানের ফলে ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থাকে গোটা বিশ্বের সামনে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরার যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা ব্যাহত হচ্ছে। এর আগে বিরোধীদের কটাক্ষ করে অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘‘আজ কমিশনে উপস্থিতি দলগুলির মধ্যে ১৭টি কিন্তু ইভিএমের মাধ্যমে জিতেই রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে। তখন ইভিএম নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠেনি!’’

Lok Sabha Election 2019 লোকসভা ভোট ২০১৯ EVMs Election Commission
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy