চন্দ্রবাবুর গ্রামের বাড়ির বাইরে ভাই নারা নাগরাজ নায়ডু। —নিজস্ব চিত্র।
দু’পাশে আমের বাগান, ছড়িয়ে ছিটিয়ে নারকেল গাছ আর পাকা ধানের ক্ষেত। চিত্তুর থেকে চন্দ্রগিরি পাহাড়ের বুক চিরে জাতীয় সড়ক গিয়েছে তিরুপতি মন্দিরের দিকে।
মন্দিরের কুড়ি কিলোমিটার আগেই বাঁ দিকে সরু রাস্তা। এঁকেবেঁকে চলেছে একের পর এক টিলাকে পাশ কাটিয়ে। এ ভাবে প্রায় ১০ কিলোমিটার। তার পরেই নারাভারিপল্লি। এ রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নামের আগে জুড়ে দেন এই গ্রামটির কথা। লেখেন, নারা চন্দ্রবাবু নায়ডু।
পাঁচ দশক আগে এই গ্রামেরই কিশোর, চন্দ্রবাবু কখনও হেঁটে কখনও সাইকেল চালিয়ে যেতেন ১১ কিলোমিটার দূরে চন্দ্রগিরি হাইস্কুলে পড়তে। বাবা নারা খারজুরা নায়ড়ু ছিলেন গ্রামের মাঝারি চাষি। পাঁচ একর জমি, সঙ্গে পশুপালন। ভাইবোনেদের সঙ্গে সে কাজেও হাত লাগাতেন যুবক চন্দ্রবাবু। পরে তিরুপতির কলেজে পড়তে গিয়ে রাজনীতি, কংগ্রেসের ছাত্র নেতা। ১৯৭৫-এর জরুরি অবস্থার সময়ে সঞ্জয় গাঁধীর কাছাকাছি এলেন। তিন বছর পরে চন্দ্রগিরি থেকে দলের টিকিটও পেয়ে গেলেন বিধানসভা ভোটে। মাত্র ২৮ বছর বয়সেই মন্ত্রী, সিনেমাটোগ্রাফি দফতরের। নারাভারিপল্লির যুবক কাছাকাছি এলেন দক্ষিণী সিনেমার প্রবাদপুরুষ এন টি রাম রাওয়ের। এক সময়ে বিয়ে করলেন এনটিআরের দ্বিতীয় মেয়ে ভুবনেশ্বরীকে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
নারাভারিপল্লীতে চন্দ্রবাবুর পুরনো একতলা বাড়ির ঠিক পাশের দালানে তাঁর নিজের বাড়িতে বসে এ সব গল্প শোনাচ্ছিলেন নারা নাগরাজ নায়ডু। ৬০ বছর বয়সি মানুষটি সম্পর্কে চন্দ্রবাবুর জেঠতুতো ভাই। যৌথ পরিবারে একসঙ্গেই বড় হয়েছেন। চন্দ্রবাবুর বোন রাজেশ্বরীও কিছু দিন আগে পর্যন্ত এই গ্রামেই থাকতেন। এখন তিরুপতিতে। চন্দ্রবাবু অবশ্য তাঁর উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে পুরনো বাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন। গ্রামের এক প্রান্তে তাঁর নবনির্মিত বাড়ি। সে বাড়িতে থাকেন না কেউ। মুখ্যমন্ত্রী শুধু বছরে কয়েক বার ঘুরে যান। তাই গেটের বাইরে পুলিশি পাহারা। আর এক সময়ে শ্বশুরের সঙ্গে জামাইয়ের সম্পর্ক যতই তিক্ত হোক না কেন, নতুন বাড়ির সামনেই এনটিআরের মূর্তি বানিয়েছেন চন্দ্রবাবু। নির্বাচন কমিশন আপাতত সেটির মুখ ঢেকে রেখেছে।
এই বাড়ির পাশেই দেখা হল চন্দ্রবাবুর আর এক তুতো দাদা নারা বলরাম নায়ডুর সঙ্গে। পেশায় চাষি, খালি পা— হাইটেক মুখ্যমন্ত্রীর ৭৬ বছর বয়সি এই দাদা নিরক্ষর। এখানকার ৪০টির মতো পরিবারের যে জীবন, তাতে কে বলবে এই গ্রামেরই কেউ ‘টেক স্যাভি’ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে গোটা দেশে নিজের পরিচিতি ঘটিয়েছেন! এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ জীবনে কম্পিউটার দেখেননি। জীবনযাপনে নেই আধুনিকতার ছোঁয়া। চিত্তোর লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী চিমালা রঙ্গাপ্পা তাল ঠুকছেন, ‘‘চন্দ্রবাবু কোনও গ্রামেরই উন্নয়ন করেননি। তাঁর নিজের গ্রাম আলাদা কিছু নয়। উনি শুধু হাই-টেক প্রচার করেন। আমরা নারাভারিপল্লিতে গিয়ে এ কথাই বলব।’’ কিন্তু গ্রামের বাসিন্দাদের হাই-টেক নিয়ে বিশেষ হেলদোল রয়েছে বলে মনে হল না। গ্রামের ছেলে মুখ্যমন্ত্রী, এই গর্বেই তাঁরা বিগলিত!
নারাভারিপল্লি যে জেলায়, সেই চিত্তোরের কুপ্পমে এ বারও বিধানসভা ভোটে প্রার্থী চন্দ্রবাবু। পাঁচ বছর আগে জেলার ১৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৮টিই ছিনিয়ে নিয়েছিলেন জগন্মোহন রেড্ডি। লোকসভা আসনটি পেয়েছিল চন্দ্রবাবুর দল— তেলুগু দেশম। এ বারেও এখানে চূড়ান্ত লড়াইয়ে নেমেছে জগনের ওয়াইএসআর কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রীর ভাই নাগরাজ নায়ড়ু অবশ্য বলছেন, ‘‘জগনের বাবা রাজশেখর রেড্ডি বেঁচে থাকলে কী হত জানি না। তবে জগনের সরকার চালানোর অভিজ্ঞতা কোথায়? অন্ধ্র ভাগ হয়ে গিয়ে রাজ্যে এখন সঙ্কট অনেক। দেখবেন, চন্দ্রবাবুকেই আবার ফেরাবে মানুষ।’’
সেই আশাতেই চনমনে মুখ্যমন্ত্রীর গ্রাম। চিত্তোরে তেলুগু দেশমের মেজো নেতা পাটচা ভালি তো সাফ বলেই দেন, ‘‘গ্রামে জলের সমস্যা মিটিয়ে দিয়ে রাস্তা বানিয়ে দিয়েছেন চন্দ্রবাবু। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য নিজের জমি পর্যন্ত দিয়েছেন। হাই-টেক ব্যাপারটা আলাদা। ও সব অন্য জগতের জন্য!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy