Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

গাঁধীরা নিশানা, পরিবারতন্ত্র কম নয় বিজেপিতে 

স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে বেশি সময় দেশ চালিয়েছে কংগ্রেস। বিজেপির নির্বাচনী ইতিহাস শুরু হয়েছে সবে আশির দশকে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৯ ০১:৪৮
Share: Save:

পরিবারতন্ত্র নিয়ে প্রায় নিয়ম করে গাঁধী পরিবার ও কংগ্রেসকে আক্রমণ করে থাকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভোটের মুখে তার ধার বাড়িয়েছেন আরও। কিন্তু লোকসভার তথ্য বলছে, এ ব্যাপারে আদৌ পিছিয়ে নেই বিজেপি। ১৯৫২ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৪৮০৭ জন সাংসদ নির্বাচিত হয়ে লোকসভায় গিয়েছেন। দেখা যাচ্ছে, ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত, কংগ্রেস থেকে ৩৬ জন লোকসভা সদস্য হয়েছেন, যাঁদের সঙ্গে সরাসরি পরিবারতন্ত্রের যোগ রয়েছে। অর্থাৎ তাঁদের বংশের বা বৈবাহিক সম্পর্কিত কেউ বর্তমানে বা অতীতে সাংসদ হয়েছেন। বিজেপির সংখ্যাটাও খুব কম নয়, ৩১।

স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে বেশি সময় দেশ চালিয়েছে কংগ্রেস। বিজেপির নির্বাচনী ইতিহাস শুরু হয়েছে সবে আশির দশকে। ফলে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ তোলার সুযোগ বেশি তাদের। তবে বিগত কয়েক দশকের ইতিহাস বলছে, প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক পরিবারের ছেলেমেয়েদের ভোটের টিকিট দেওয়া বা তাঁদের জয়ের ক্ষেত্রে বিজেপি নিজেদের আলাদা পরিচয় গড়তে পারছে না সে ভাবে। সংগঠিত দল হওয়ায় পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রচারটা তারা করছে দক্ষতার সঙ্গে। এই মুহূর্তে মোদী সেই প্রচারের মুখ।

কিন্তু হিসেব বলছে, ১৯৯৯ সালে ত্রয়োদশ লোকসভার শুরুতে কংগ্রেসের ৮ শতাংশ সাংসদের যোগ ছিল পরিবারতন্ত্রের সঙ্গে। বিজেপির ক্ষেত্রে এই হার ছিল ৬ শতাংশ। এক দশক পরে ২০০৯-এ বিজেপি ছাপিয়ে যায় কংগ্রেসকে। বিজেপির হয় ১২ শতাংশ। কংগ্রেসের ১১ শতাংশ। এর পরে বিজেপি ‘এগিয়েছে’ আরও। ২০১৪ থেকে ২০১৯-এ কংগ্রেসের তুলনায় বিজেপিতে এমন সাংসদের সংখ্যাটা দাঁড়ায় দ্বিগুণেরও বেশি। বিজেপির ২০ জন (দলের সাংসদ সংখ্যার ৭%) এবং কংগ্রেসের ৮ জন (দলের সাংসদ সংখ্যার ১৮%)।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এখানে তা-ও দূরের আত্মীয়দের কথা ধরা হয়নি। বাবা-মা-স্বামী-স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে— এদেরই ধরা হয়েছে। পরিবারতন্ত্রের সামগ্রিক ছবিতে চার ভাগের তিন ভাগই এঁরা। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সিদ্ধার্থ জর্জ ও তাঁর সহযোগীরা এমনই সব তথ্য তুলে এনেছেন পরিসংখ্যান ঘেঁটে।

সিদ্ধার্থ দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন বিশেষ আর একটি দিকে। তা হল, রাজনীতি করা কোনও পরিবারের সব লোক যে একই দলে রয়েছেন, তা নয়। জওহললাল নেহরু, ইন্দিরা গাঁধী, রাজীব গাঁধীকে পরিবারতন্ত্র নিয়ে দুষে থাকেন মোদী। সাংসদ সনিয়া ও রাহুল গাঁধীকেও কম আক্রমণ করেন না। সদ্য রাজনীতিতে আসা প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা এখন তাঁর নয়া নিশানা। কিন্তু যেটা প্রচারে আসে না, গাঁধী পরিবারের বধূ মেনকা ও সঞ্জয়-পুত্র বরুণ কিন্তু তাঁরই দলের সাংসদ। বিজেপির পীযূষ গয়ালও রাজনীতিতে এসেছেন রাজনৈতিক উত্তরাধিকার সূত্রেই। এটা স্পষ্ট পরিবারের গুরুত্বকে উপেক্ষা করতে পারছে না বিজেপিও।

পরিবারতন্ত্রের প্রভাব যথেষ্ট আঞ্চলিক দলগুলিতেও। ত্রয়োদশ লোকসভায় বিজেপি শরিক শিরোমণি অকালি দলে সংখ্যাটা শতকরা ৫০। রাষ্ট্রীয় লোক দলেও তাই। জেডিইউয়ে ২২%। ফারুক আবদুল্লার ন্যাশনাল কনফারেন্সে ২০ ও নবীন পট্টনায়কের বিজু জনতা দলে ১৮%।

সময় যত গড়াচ্ছে, পরিবার- নির্ভরতা বেড়েই চলেছে। লোকসভায় এমন সাংসদ বাড়ছে, যাঁদের বাবা, মা, স্বামী বা স্ত্রী সাংসদ ছিলেন। দ্বিতীয় লোকসভায় সংখ্যাটা ছিল ২। সেটাই পঞ্চদশ লোকসভায় হয়েছে ৫৩। মোট সাংসদের ৯.৫ শতাংশ। কেন এই বৃদ্ধি? সিদ্ধার্থরা বলছেন, পরিচিতি ও ভোটের খরচ এর অন্যমম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। ভোটে নির্বাচনী ব্যয়সীমার বহু গুণ বেশি খরচ হয় প্রার্থী পিছু। রাজনীতিতে থাকা বা অতীতে যাঁরা সাংসদ হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের ছেলেমেয়েরা তা জোগাড় করতে পারলেও অন্যদের পক্ষে তা কঠিন হচ্ছে। নির্দল সাংসদের সংখ্যা এখন তলানিতে। এ ছাড়া, প্রভাব, জাতপাত ও অন্যান্য কারণ তো আছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE