Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

সেনার নামে টাকা ও ফায়দা তোলার পাঁচ কিস্তি, বিতর্ক

আঠারো বছরে পৌঁছে, এ বার যাঁরা প্রথম ভোট দিচ্ছেন, তাঁদের ভোট বালাকোট অভিযানের নায়কদের উদ্দেশে ও পুলওয়ামায় নিহত জওয়ানদের প্রতি উৎসর্গ করার ডাক দিচ্ছেন মোদী।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৯ ০২:৪৬
Share: Save:

ছুটির সফরে রণতরী ব্যবহার করা নিয়ে রাজীব গাঁধীর বিরুদ্ধে আঙুল তুলছেন নরেন্দ্র মোদী, অরুণ জেটলিরা। প্রাক্তন সেনাকর্তারা যে অভিযোগের সত্যতা অস্বীকার করেছেন। এ নিয়ে তুমুল রাজনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যেই অভিযোগ উঠল নরেন্দ্র মোদীর জমানায় অন্তত পাঁচ রকম ভাবে ভারতীয় সামরিক বাহিনীগুলির অপব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সেনার নামে দলের তহবিলে টাকা তোলা, সেনাবাহিনীর শৌর্যকে হাতিয়ার করে ভোট চাওয়ার মতো অভিযোগ।

আঠারো বছরে পৌঁছে, এ বার যাঁরা প্রথম ভোট দিচ্ছেন, তাঁদের ভোট বালাকোট অভিযানের নায়কদেAর উদ্দেশে ও পুলওয়ামায় নিহত জওয়ানদের প্রতি উৎসর্গ করার ডাক দিচ্ছেন মোদী। এই ডাকটা তিনি দিয়েছিলেন ভোট প্রচারের প্রথম পর্বেই। পাঁচ দফার ভোট হয়ে যাওয়ার পরেও বাকি দু’দফার ভোটের জন্য ওই একই আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদী যে তাঁর বা তাঁর দলেরই জন্যই ভোট চাইছেন, সেটা শিশুবোধ্য বিষয়। নির্বাচন কমিশন যদিও বলেছে, মোদী তো তাঁকে বা বিজেপিকে ভোট দিতে বলেননি— তাই এ ক্ষেত্রে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ হয়নি।

তথ্য জানার অধিকার আইনে জানা গিয়েছে, সরকারি নয়, মোদীর এমন সফরে মোদীর পাঁচ বছরে বিজেপি ২৪০টি অন্তর্দেশীয় উড়ানের জন্য বায়ুসেনাকে দিয়েছে মোট ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। বায়ুসেনা জানাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী মূলত তাদের বিবিজে (বোয়িং বিজনেস জেট ও এমআই-১৭ (ভিভিআইপি) হেলিকপ্টারে যাতায়াত করেছেন। কোথা থেকে কোথায় গিয়েছে ওই বিমান ও চপার, সেই তথ্য রয়েছ। কিন্তু ভাড়ার হার বা কী ভাবে ঠিক হল— সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। বাণিজ্যিক উড়ানে চণ্ডীগড় থেকে শিমলা এক পিঠের ভাড়াই হল ২৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা। কিন্তু চণ্ডীগড়-শিমলা-অনাডেল-চণ্ডীগড় রুটে মোদীর সফরের জন্য বায়ুসেনাকে বিমান ভাড়া বাবদ বিজেপি দিয়েছে মাত্র ৮৪৫ টাকা। সরকারি কাজ না-হলেও প্রধানমন্ত্রী বায়ুসেনার বিমান ব্যবহার করতেই পারেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কিন্তু কি দরে বায়ুসেনা এই হিসেব কষেছে, তার উত্তর মেলেনি তথ্য জানার অধিকার আইনে। ইমেল করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে। তার জবাব আসেনি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, দেশের প্রধান সেবক কেন জলের দরে বায়ুসেনার বিমান চেপে বাহিনীর কথা সরকারের বিপুল লোকসান করিয়েছেন?

অভিযোগ রয়েছে আরও। নিজের প্রচারের টাকা তুলতেও সেনাবাহিনীর অপব্যবহার করেছেন মোদী। এক দল সেনার মাঝে ফৌজি উর্দিতে ছবি তুলে তিনি বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, ‘‘ইনি ওদেঁর জন্য কাজ করেন। এঁর পাশে দাঁড়ান। তার নীচে লেখা ২০১৯-এ আবার নমোকে সমর্থন করতে এখনই দান করুন। সেনার জন্য নয়, নমো অ্যাপের মাধ্যমে ওই দান তোলা হয়েছে বিজেপির জন্য।

প্রধানমন্ত্রী, যোগী আদিত্যনাথ-সহ বিজেপি নেতাদের মুখে ‘মোদীর সেনা’ কথাটা শোনা যাচ্ছে উরি সার্জিকাল স্ট্রাইক ও বালাকোট অভিযানের পর থকেই। সেনা দেশের, কোনও ব্যক্তি বিশেষ বা বিশেষ কোনও প্রধানমন্ত্রীর নয়— বিভিন্ন মহল থেকে এই যুক্তি তুলে ধরা সত্ত্বেও নিরস্ত করা য়ায়নি মোদী ও তাঁর বিজেপি বাহিনীকে।

সামরিক অনুষ্ঠানে বলিউডকে টেনেও বিতর্ক তৈরি করেছেন মোদী। বিশাখপত্তনমে ২০১৬ সালে হয়েছিল ‘ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ’। ভারতের সবচেয়ে বড় ও সামরিক মহড়ায় অক্ষয় কুমার, টুইঙ্কল খন্না, কঙ্গনা রানাওয়তের উপস্থিতি নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকরকে বিবৃতি দিতে হয়, অক্ষয় ও কঙ্গনা আদৌ ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর নন। আমন্ত্রিত অতিথি। আমন্ত্রিত কানাডার নাগরিক অক্ষয়কে মোদী কেন সামরিক বাহিনীর প্রধান ও অন্য ভিভিআইপিদের সঙ্গে আইএনএস সুমিত্রায় চড়িয়েছিলেন, প্রশ্ন রয়েছে আজও। প্রশ্ন উঠছে, অক্ষয় ও কঙ্গনাকে কী তাঁদের আনুগত্যেরই পুরস্কার পাচ্ছেন? হালেও মোদীর মুখে উঠে প্রক্ষিপ্ত ভাবে উঠে এসেছে ‘মনিকর্ণিকা’ শব্দটি, যা কি না কঙ্গনার ছবির নাম। আর অক্ষয় পেয়েছেন মোদীর ‘অরাজনৈতিক’ সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE