Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ছবিতে, ভাষণে ছকভাঙা প্রিয়ঙ্কা

প্রিয়ঙ্কার টুইটারের নতুন ছবিটি চোখে পড়েছে অধিকাংশেরই। পরনে জিনস ও মানানসই নীল শার্ট। পায়ে কালো জুতো, স্মার্টফোন ধরা বাঁ হাতে কালো ব্যান্ডের ঘড়ি।

টুইটার প্রোফাইলে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার ছবি।

টুইটার প্রোফাইলে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৯ ০২:৩০
Share: Save:

ভাইয়েরা ও বোনেরা নয়। বোনেরা ও ভাইয়েরা।

গুজরাতে বক্তৃতার শুরুতে প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর এই ছক ভাঙা সম্বোধন হয়তো অনেকের আলাদা করে নজরে পড়েনি। কিন্তু প্রিয়ঙ্কার টুইটারের নতুন ছবিটি চোখে পড়েছে অধিকাংশেরই। পরনে জিনস ও মানানসই নীল শার্ট। পায়ে কালো জুতো, স্মার্টফোন ধরা বাঁ হাতে কালো ব্যান্ডের ঘড়ি।

নেহাত সমাপতন? নাকি ভেবেচিন্তেই কোনও বার্তা দিতে চাইছেন প্রিয়ঙ্কা? রাজনীতিকদের বৈঠকখানা থেকে নেট-দুনিয়ায় জল্পনা, প্রিয়ঙ্কা কি অলিখিত নিয়ম আর প্রথার বেড়া ভাঙতে চাইছেন? যে অলিখিত নিয়ম বলে, বক্তৃতার শুরুতে বোনেদের আগে ভাইদের সম্বোধন করতে হয়? যে প্রথা বলে, রাজনীতির মঞ্চে পুরুষ হলে সাদা কুর্তা-পাজামা আর মহিলা হলে শাড়ি পরাই অমোঘ শর্ত?

প্রিয়ঙ্কা নিজে জানিয়েছেন, গুজরাতে তাঁর প্রথম বক্তৃতায় তিনি ভেবেচিন্তেই ‘বহনোঁ অউর ভাইয়োঁ’ বলে জনতাকে সম্বোধন করেছেন। আজ কংগ্রেস সাংসদ তথা মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী সুস্মিতা দেব টুইটে লেখেন, ‘‘গুজরাতে প্রিয়ঙ্কাজির বক্তৃতা অনেক কারণেই আলাদা। আমার খুব ভাল লেগেছে যে উনি পুরুষদের আগে মহিলাদের সম্বোধন করেছেন, বোনেরা ও ভাইয়েরা। উল্টোটা নয়।’’ এর পরেই এল প্রিয়ঙ্কার জবাবি টুইট, ‘‘আর আমি ভাবছিলাম, কেউ খেয়ালই করেনি!’’ সঙ্গে চোখ টিপে হাসির ‘স্মাইলি’।

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

শিকাগোর ধর্মমহাসভায় স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর বক্তৃতা শুরু করেছিলেন ‘সিস্টার্স অ্যান্ড ব্রাদার্স’ বলেই। প্রবীণ কংগ্রেস নেতারা বলছেন, প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে তাঁর ঠাকুমা ইন্দিরার চেহারা, চলনে-বলনে মিল খুঁজে পাওয়া যায় বটে। কিন্তু ইন্দিরা ‘ভাইয়োঁ অউর বহনোঁ’তেই বেশি স্বচ্ছন্দ ছিলেন। ‘বহনোঁ, ভাইয়োঁ’ সম্বোধন বর‌ং অনেক সময় প্রিয়ঙ্কার বাবা রাজীবের মুখে শোনা গিয়েছে। কখনও কখনও আমজনতাকে ‘দোস্তোঁ’ বলেও সম্বোধন করতেন রাজীব। দোস্তোঁ, মিত্রোঁ নয়!

সম্বোধনে

ইন্দিরা গাঁধী
ভাইয়োঁ, বহনোঁ,
প্যারে বাচ্চোঁ

রাজীব গাঁধী
বহনোঁ, ভাইয়োঁ, দোস্তোঁ

সনিয়া গাঁধী
ভাইয়োঁ, বহনোঁ, বুজুর্গো, বাচ্চোঁ

রাহুল গাঁধী
ভাইয়োঁ অউর বহনোঁ

প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা
বহনোঁ অউর ভাইয়োঁ

নরেন্দ্র মোদী
মিত্রোঁ, ভাইয়োঁ অউর বহনোঁ

কিন্তু টুইটারে জিনস-শার্টের ছবিও এমনই সচেতন ‘বিবৃতি’ কি না, তা অবশ্য প্রিয়ঙ্কা খোলসা করেননি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। কেউ বলেছেন, উনি ভোটের প্রচারে গেলে সাজপোশাক বদলে ফেলে শাড়ি পরেন। কারও আবার কটাক্ষ, প্রিয়ঙ্কা সবরমতী আশ্রমে ঘুরে এই শিক্ষা নিয়ে এলেন? গাঁধীজি কি এই রকম পোশাকের কথা বলেছিলেন!

আরও পড়ুন: আজ-হারেও সব ‘দোষ’ নেহরুর! মাসুদ নিয়ে বিজেপি-কংগ্রেসের নতুন বিতর্কের চিত্রনাট্য

সনিয়া গাঁধীকে মাঝেসাঝে সালোয়ার-কামিজে দেখা গেলেও তিনি বরাবর শাড়িতেই স্বচ্ছন্দ। হালফিলে রাহুল গাঁধীকে অনেক অনুষ্ঠানে, বিশেষত তরুণদের সঙ্গে আলাপচারিতায় টি-শার্টে দেখা গিয়েছে। কিন্তু পূর্ব উত্তরপ্রদেশের ভার পাওয়ার পর প্রিয়ঙ্কার ব্যাপারে বিজেপি নেতা হরিশ দ্বিবেদী কটাক্ষ করে বলেছিলেন, প্রিয়ঙ্কা দিল্লিতে জিনস পরে ঘোরেন।

আরও পড়ুন: মুম্বইয়ে ভেঙে পড়ল ফুটব্রিজ, চাপা পড়ে মৃত্যু অন্তত ৬ জনের

অমেঠী-রায়বরেলীতে গেলে শাড়ি পরেন। টুইটারে প্রিয়ঙ্কার আবির্ভাব হয়েছিল লম্বা হাতার ব্লাউজের সঙ্গে মেরুন শাড়ির ছবিতে। সেখান থেকে আচমকা জিনস-শার্টে ভোল বদলে কি প্রিয়ঙ্কা বোঝাতে চাইছেন, তিনি জিনস-শার্টেও জনতার সামনে আসতে দ্বিধা করবেন না? ও পি জিন্দল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আলবিনা শাকিলের মতে, ‘‘কেউ যদি নিজে অন্য রকম পোশাকে স্বচ্ছন্দ হন, কিন্তু জনতার সামনে কুর্তা-পাজামা বা শাড়ি পরেন, সেটাকে ক্ষেত্রবিশেষে এক ধরনের ভণ্ডামি বলা যায়। আবার কে কোথায় কোন পোশাকে স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন, তাতেও কারও বলার কিছু থাকতে পারে না। আসল কথাটা হল, পোশাক দিয়ে কোনও ব্যক্তিকেই বিচার করা উচিত নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Priyanka Gandhi Lok Sabha Election 2019 Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE