Advertisement
E-Paper

প্রধানমন্ত্রীকে জেতানোর গর্বেই ভাসছে বারাণসী, মন্ত্র এখন ‘নমামি নমো’

বারাণসী আর শুধু তীর্থক্ষেত্র নয়, বারাণসী এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ক্ষেত্র। সমর্থকরা কিছুতেই হারাতে চান না এই নতুন গরিমা।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় ও ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৯ ১৪:২১
নমামি গঙ্গে প্রকল্পে বয়ে গিয়েছে হাজার হাজার কোটি। কিন্তু বারাণসীতে গঙ্গার প্রবাহে এখনও তার ছাপ দেখা যাচ্ছে না। সঙ্কীর্ণ ধারার ওপারেই জেগে রয়েছে বিস্তীর্ণ চর। নিজস্ব চিত্র।

নমামি গঙ্গে প্রকল্পে বয়ে গিয়েছে হাজার হাজার কোটি। কিন্তু বারাণসীতে গঙ্গার প্রবাহে এখনও তার ছাপ দেখা যাচ্ছে না। সঙ্কীর্ণ ধারার ওপারেই জেগে রয়েছে বিস্তীর্ণ চর। নিজস্ব চিত্র।

চক গোদৌলিয়ায় গাড়ি থেকে নেমে যে রাস্তায় পা রাখলাম, তা ঈষৎ সঙ্কীর্ণ হয়ে এসেছে। বাংলা সাইনবোর্ডের হরসুন্দরী ধর্মশালা ডানহাতে রেখে ঘাটের দিকে দ্রুত এগোব ভেবেছিলাম। কিন্তু স্রোতের মতো বইতে থাকা বিচিত্র ভিড়ে সে গুড়ে বালি। ছুটন্ত রিকশা এড়িয়ে, অনিয়ন্ত্রিত পথচারীর ধাক্কা সামলে, ভিড়ের বিসর্পিল ফাঁক খুঁজে খুঁজে, বাঙালি খাবারের ঠিকানা ‘জলযোগ’ পিছনে ফেলে, ছোট্ট বাঙালি ধাম ‘খিচুড়ি বাবার মন্দিরে’র সামনে থেকে আবার একটু ডাইনে বাঁক। খানিক এগোতেই দেখা দিল কাঙ্খিত গন্তব্য— দশাশ্বমেধ ঘাট।

আবহে পড়ন্ত বিকেলের ঝিমুনি। সার সার পাথুরে ধাপ নেমে গিয়েছে অনেকটা নীচে। চণ্ডাল দুপুরের প্রচণ্ড দাবদাহ সয়ে জিভ বার করে জিরিয়ে নিচ্ছে চোখবোজা কুকুর। স্নান সেরে সিঁড়িতে উঠেছেন সন্ন্যাসিনী, মাথা পিছনে এলিয়ে গামছায় ঝাড়ছেন খোলা চুল।

পাথুরে ধাপগুলোর শেষ প্রান্তে যে ধারা বইছে ওটাই পতিতপাবনী গঙ্গা! নমামি গঙ্গে মিশনের হাজার হাজার কোটি, গঙ্গা সেবা নিধির সম্বৎসরের পূজার্চনা আর প্রচারের বিপুল ঢক্কানিনাদের যা বহর, প্রবাহের চেহারা তো তার ঠিক বিপরীত! বিশাল চর জেগেছে গঙ্গার বুকে। দশাশ্বমেধ থেকে নৌকায় চড়ে সেই চড়াতেই পৌঁছচ্ছেন পর্যটকদের কেউ কেউ, সন্ধ্যায় গঙ্গা আরতি দেখবেন ওই চড়ায় দাঁড়িয়েই। কী সাংঘাতিক পরিহাস!

রাতেও আলোকোজ্জ্বল কাশীর ঘাট। ফাইল চিত্র।

গত পাঁচ বছরে বারাণসীর সঙ্গে শুধু পরিহাসই হয়েছে, এমন অবশ্য নয়। বারাণসীর চেহারা বেশ খানিকটা বদলে দিয়েছেন স্থানীয় সাংসদ তথা দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু বারাণসীর জন্য তাঁর সবচেয়ে বড় প্রতিশ্রুতি ছিল যা নিয়ে, সেই গঙ্গার হাল কি আদৌ ফেরাতে পেরেছেন মোদী? প্রশ্নচিহ্ন খুব বড়। কিন্তু বারাণসী নিজে বোধ হয় সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চাইছে না এখন। নমামি গঙ্গের কতটা কী হল, তা নিয়ে যত বড় সংশয়ই থাক, বারাণসী আপাতত ‘নমামি নমো’ রবে বিভোর যেন।

আরও পড়ুন: পিতৃতন্ত্রের চৌকিদার! বদলায়নি রাজ-কাহিনি

‘‘ঘাটগুলোর সাফ-সাফাই হয়েছে। কিন্তু শুধু বারাণসীর ঘাট পরিষ্কার করে তো আর গঙ্গার জল বদলে ফেলা যাবে না। জলে যে বিষ মিশছে, সেটা বন্ধ করতে পেরেছে কোথায়?’’ আক্ষেপ নৌকার পাটাতনে পা ছড়িয়ে বসে থাকা জীবনলালের। রোজ এই দশাশ্বমেধ থেকে নৌকা ভাসিয়েই তাঁর জীবিকা আসে। গঙ্গাই তাঁর অবলম্বন। আক্ষেপটা যে নিখাদ, স্পষ্ট বোঝা যায় কণ্ঠস্বরের ওঠা-নামায়, বোঝা যায় রোদে পোড়া মুখমণ্ডলের রেখায় রেখায়।

এ কিন্তু সেই দশাশ্বমেধই, যেখানে আর কয়েকদিন পরেই মোদী হাজির হবেন মহাআড়ম্বরে, বিপুল জাঁকজমক আর জনসমাগমকে সাক্ষী রেখে গঙ্গা সেবায় অংশ নেবেন, গঙ্গা আরতি করবেন। এ কিন্তু সেই বারাণসী, যেখানে মনোনয়ন জমা দিতে আসা মোদীর রোড শো আর কয়েক দিন পরেই ভেসে যাবে জনপ্লাবনে, পুষ্পবৃষ্টিতে আপ্লুত হয়ে পড়বেন দেশের প্রধানমন্ত্রী।

আরও পড়ুন: নোট বাতিলে কাজ খুইয়ে জোট বেঁধেছে সোনার হাত

গঙ্গাতীরের শহরে এই প্রবল বৈপরীত্য কেন? বারাণসীতে গঙ্গার চেহারা আর তা নিয়ে ক্ষোভের আভাস যখন পরিহাস করছে নমামি গঙ্গের বাগাড়ম্বরকে, তখন সেই মিশনের ভগীরথকে ঘিরে এত উচ্ছ্বাস কিসের? এ বার বারাণসী প্রায় সমস্বরে জানাচ্ছে, মাপকাঠি শুধু নমামি গঙ্গে নয়। রাস্তাঘাট চওড়া করে, রিং রোড বানিয়ে, উড়ালপুল গড়ে, রেলওয়ে স্টেশনের ভোল পাল্টে গত পাঁচ বছরে বারাণসীকে যে চেহারা দিয়েছেন এলাকার সাংসদ, তা পাঁচ বছর আগে প্রায় অভাবনীয় ছিল।

মনোনয়ন পেশের আগের দিন বারাণসীতে নরেন্দ্র মোদীর মেগা রোড শো। ফাইল চিত্র।

কচহরী চৌরাহা (বাংলায় কাছারি মোড়) শহরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জমজমাট এলাকা। সেখানেই মিঠাই-জলখাবারের রমরমা ব্যবসা অমিত সিংহের। কারবার আসলে পারিবারিক, তরুণ উত্তরসূরি অমিত বছর কয়েক ধরে ক্যাশ কাউন্টার সামলানো শুরু করেছেন। ভিনরাজ্য থেকে আসা ‘পত্রকারের’ পরিচয় পাওয়ার পরে নাস্তাপানির টেবিলে বসে দু’দণ্ড রাজনৈতিক চর্চায় তিনি অরুচি দেখান না। উত্তরপ্রদেশ থেকে এ বার আর ৭৩টা আসন মোদী-শাহের ঝুলিতে যাবে না, অমিতের তেমনই মনে হয়। কিন্তু বারাণসীতে নরেন্দ্র মোদী ছাড়া অন্য কাউকে ভোট দেওয়ার কথা তিনি ভাবতেই পারছেন না। নরেন্দ্র মোদী যে আবার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন, তা নিয়েও নিজের মনে অমিত কোনও সংশয় রাখতে চান না।

কেন নরেন্দ্র মোদীকে দেবেন ভোট? ‘‘শুধু আমি নই, সবাই দেবেন। আগের বারের চেয়েও বেশি ভোটে উনি জিতবেন,’’—বলেন তরুণ ব্যবসায়ী। কিন্তু কেন তেমনটা হবে? আগের বারের মতো গেরুয়া ঝড় তো এ বার নেই। তার উপরে এসপি-বিএসপির অভূতপূর্ব জোটও রয়েছে এ বার। অমিত বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে কেউ কখনও হারায় নাকি? প্রধানমন্ত্রী যে এলাকার সাংসদ হন, সে এলাকার উন্নতিটা কী ভাবে হয়, সেটা তো বারাণসী দেখে নিয়েছে।’’

কী উন্নতি হয়েছে বারাণসীর? বেসরকারি চাকুরে ধর্মেন্দ্র গড়গড় করে বলে ওঠেন, ‘‘অনেক কিছু হয়েছে। অনেকগুলো রাস্তাকে চওড়া করে দিয়েছে এই ক’বছরেই। নতুন নতুন ফ্লাইওভার হয়েছে, হচ্ছে। বারাণসী আগের চেয়ে অনেক পরিচ্ছন্ন হয়েছে, সৌন্দর্যায়নে বিপুল টাকা সরকার ঢেলেছে। মোদীজি নিজে বার বার বারাণসী এসেছেন। শুধু নিজে আসেননি, বিদেশি অতিথিদের নিয়ে এসেছেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী এখানে এসে গঙ্গা আরতি দেখে গিয়েছেন। বারাণসী এমনিতেই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ছিল, সে খ্যাতি আরও অনেক বেড়েছে।’’ অতএব, ধর্মেন্দ্রও অমিত সিংহের মতোই মনে করেন, বারাণসী থেকে নরেন্দ্র মোদীর জয়ের ব্যবধান আরও বাড়বে।

দশাশ্বমেধ ঘাটে নরেন্দ্র মোদীর গঙ্গা আরতি। ফাইল চিত্র।

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে বারাণসীর পরিকাঠামো উন্নয়নে খরচ হয়েছে ২১ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। দেশের আর কোনও প্রধানমন্ত্রী পাঁচ বছরে নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্রকে এতটা পাইয়ে দিতে পেরেছেন কি না, সংশয় রয়েছে। রাস্তাঘাটের উন্নতি ছাড়াও বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় এবং টাটা গোষ্ঠীর যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে মহামনা পণ্ডিত মদনমোহন মালবীয় ক্যানসার হাসপাতাল। রেলের পুরনো ক্যানসার হাসপাতালটাও হয়ে উঠেছে অত্যাধুনিক হোমি ভাবা ক্যানসার হাসপাতাল। ফলে চিকিৎসার জন্য অনেকের গন্তব্য হয়ে উঠেছে বারাণসী। পুরস্কারপ্রাপ্ত হস্তশিল্পীদের তৈরি সামগ্রীর বাজার হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে দীনদয়াল হস্তকলা সঙ্কুল। সেখানে বিক্রিবাটা এখনও খুব বেশি নয়। কিন্তু লাগোয়া তিনতলা মিউজিয়ামটাকে ঘিরে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে।

আরও পড়ুন: রাম, ভারতমাতা ও নর্মদা! হিন্দুত্ব অস্ত্র রাজাসাহেবের

সব মিলিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য গত পাঁচ বছরে অনেকখানি বেড়ে গিয়েছে বারাণসীতে। ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে বারাণসী বিমানবন্দরে মোট যাত্রীর সংখ্যা ছিল ৭ লক্ষ ৬০ হাজার। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে তা ২৫ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। হোটেল বুকিংয়ের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে বলে হোটেল ব্যবসায়ী সংগঠনের তরফেই জানানো হচ্ছে। বারাণসীতে শ’দেড়েক নতুন হোটেলও মাথা তুলেছে এই পাঁচ বছরে।

গঙ্গার চেহারা না বদলানো নিয়ে এর পরেও আর অভিযোগ করবেন ক’জন? গঙ্গার ঘাটগুলোয় রাতে আলোর রোশনাই, গলি-তস্য গলিতেও পরিচ্ছন্নতার অভিযান পৌঁছে দেওয়া, স্বচ্ছতা বহাল রাখার তাগিদে শহরবাসীর অভ্যাস বদলে যাওয়া— এ সব নিয়েই চর্চা বেশি এ বারাণসীতে। বিশ্বনাথ মন্দির করিডর প্রকল্পের আওতায় মন্দির চত্বর, তার আশপাশের এলাকা এবং মন্দিরে পৌঁছনোর বেশ কয়েকটা রাস্তার চেহারা যে ভাবে বদলে ফেলা শুরু হয়েছে— শহরজুড়ে চর্চা রয়েছে তা নিয়েও।

মনোনয়ন পেশের আগের দিন দশাশ্বমেধ ঘাটে গঙ্গা আরতি। ফাইল চিত্র।

২০১৪ সালেই বারাণসী থেকে প্রথম বার জিতেছেন মোদী। তার পরে ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে বারাণসী সংসদীয় ক্ষেত্রের সবক’টি বিধানসভা আসনই এনডিএর দখলে গিয়েছে— ৪টি বিজেপি, ১টি জোটসঙ্গী আপনা দল (এস)। এ বারও নরেন্দ্র মোদী ৫টি বিধানসভা কেন্দ্র থেকেই এগিয়ে থাকবেন বলে স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের দৃঢ় বিশ্বাস।

স্বাদ বদল হয় গোপীগঞ্জের রাস্তায়। বারাণসী থেকে প্রয়াগরাজ (ইলাহাবাদ) যাওয়ার পথে জাতীয় সড়কের উপরে জমজমাট জনপদ। চা-সমোসার দোকানে দাঁড়িয়ে বারাণসীর ভোটার ইকবাল সপাটে জানান, নরেন্দ্র মোদীকে ভোট দেবেন না। কেন দেবেন না? ‘‘মিথ্যা কথার সরকার চালাচ্ছেন মোদী। কোনও প্রতিশ্রুতি রেখেছেন কি? কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ টাকা ঢুকেছে? বছরে ২ কোটি করে চাকরি হয়েছে? বলুন আমাকে।’’—চাঁছাছোলা বয়ান ইকবালের। কিন্তু বারাণসীর জন্য তো অনেকটাই করেছেন শুনছি। এ বার আর অস্বীকার করেন না ইকবালও— ‘‘হ্যাঁ, তা করেছেন।’’ তা হলে ভোট দেবেন না কেন? ‘‘উনি কি শুধু বারাণসীর প্রধানমন্ত্রী নাকি? দেশের প্রধানমন্ত্রী তো। দেশটার জন্য কী করতে পেরেছেন?’’ ক্ষোভের আঁচে গনগনে প্রশ্ন ইকবালের। তা হলে কী মনে হচ্ছে? মোদী কি হারতে পারেন? রাজনৈতিক বাস্তববোধের পরিচয়ে আবার চমকে দেন তরুণ— ‘‘হারবেন তো বলিনি। বলেছি আমি ভোট দেব না। কিন্তু বারাণসী থেকে উনিই জিতবেন।’’

ইকবালের এই মন্তব্যেই যেন উপসংহারে পৌঁছে যায় বারাণসীর আখ্যান। সমস্যা মিটেছে কোথাও, কোথাও রয়ে গিয়েছে। শ’ত শ’ত বছরের পুরনো নগরী আজও বেঁচে রয়েছে তার চিরচেনা যোগ-বিয়োগগুলো নিয়েই। একটু যত্ন নিলে যা কিছু বদলে ফেলা যেত, সে সব বদলেও ফেলা হয়েছে, বারাণসীবাসীর জীবন বা পথচলা আগের চেয়ে মসৃণ হয়েছে। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে বিশ্বনাথ ধামের নতুন পরিচয়— বারাণসী আর শুধু তীর্থক্ষেত্র নয়, বারাণসী এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ক্ষেত্র। সমর্থকরা কিছুতেই হারাতে চান না এই নতুন গরিমা। বিরোধীর অবচেতনেও যেন সে গৌরবের রেশ লেগে থাকে। গঙ্গার পশ্চিম কূলে দাঁড়িয়ে নদীর বুকে কথা না রাখতে পারার চর জেগে উঠতে দেখা যায়। কিন্তু বিশ্ব মানচিত্রে আরও সুস্পষ্ট হয়ে ওঠা এক প্রাচীন নগরী ইচ্ছা-অনিচ্ছায় মিলিয়ে আঁকড়ে রাখতে চায় নতুন গৌরবটাকে।

লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ Lok Sabha Election 2019 Varanasi Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy