গর্ভ ‘ভাড়া’ (সারোগেসি) দেওয়ার ক্ষেত্রে বাণিজ্যকরণ চলবে না। শুধুমাত্র নিকটাত্মীয়াই সারোগেসিতে অংশ নিতে পারবেন। সারোগেসি নিয়ন্ত্রণ বিলের মোদ্দা কথা এটাই। বুধবার লোকসভায় গোলমালের মধ্যেই পাশ হল এই বিল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নড্ডা বিল নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। এক ঘণ্টা বিতর্কের পরে বিল পাশ হয়। বিলের নানা বিষয় নিয়ে কংগ্রেস ও এআইডিএমকে-র সরব প্রতিবাদের মধ্যেই পাশ হয় বিল।
এ দিনের বিতর্কে বিরোধীদের একাংশ প্রশ্ন তোলে, নিকট আত্মীয়া বলতে কী বোঝানো হচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়। এই ধরনের জটিলতায় গর্ভ ভাড়া দেওয়ার পদ্ধতি জনপ্রিয়তা হারাবে। তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার বলেন, ‘‘সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান জন্মের সুযোগ দেওয়া উচিত সমকামী দম্পতিদেরও।’’ কংগ্রেসের সুপ্রিয়া সুলের বক্তব্য, ‘‘বিলটি ভাল, কিন্তু যথেষ্ট আধুনিক নয়।’’
নড্ডা অবশ্য জানান, গর্ভ ভাড়ার বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া বন্ধ করাই বিলের মূল উদ্দেশ্য। কারণ ভারত সারোগেসির বাণিজ্যিক কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। গর্ভদাত্রী মা নানা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, আধুনিক বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে বঞ্চিত পরিবারগুলিকেও সন্তানলাভের সুযোগ দেওয়া হবে এই বিলের সাহায্যে। তবে, তাঁর মতে, সারোগেসির অপব্যবহার বন্ধ হওয়া জরুরি। বিবাহিত দম্পতিরাই শুধুমাত্র এর সুযোগ পাবেন। লিভ-ইন করলে সারোগেসির অনুমতি মিলবে না। তিনি জানান, সারোগেসির অপব্যবহারে কী ধরনের শাস্তি হবে, তারও স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে বিলে।
আরও পড়ুন: তিন কিলোমিটার অন্তর মদের ঠেক, মান্ডি কই!
চিকিৎসকেরা জানান, কোনও মহিলার সুস্থ ডিম্বাণু থাকলেও অনেক সময় জরায়ুর নানা সমস্যা থাকে। যার জেরে মা হওয়া মুশকিল হয়ে যায়। ভ্রূণ তখন আর এক মহিলার জরায়ুতে প্রতিস্থাপিত করা হয়। এই পদ্ধতিকেই সারোগেসি বলা হয়। কিন্তু চিকিৎসক দাবি, টাকার বিনিময়ে গর্ভ ‘ভাড়া’ দেওয়ার ঘটনায় নানা জটিলতা তৈরি হয়। প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা ভা়ড়া বাবদ নেওয়া হয়। তার পরেও নানা চাহিদা থাকে। অনেক সময় গর্ভাবস্থায় কোনও জটিলতা তৈরি হলেও চিকিৎসকের পরামর্শমতো চলতে রাজি হন না গর্ভদাত্রী মা। তাঁদের কেউ কেউ আরও টাকা দাবি করেন। এ রাজ্যও তার ব্যতিক্রম নয় বলে মনে করছেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘সারোগেসির বাণিজ্যিকরণে নানা জটিলতা রয়েছে। তবে, এই নিয়ম বাস্তবায়িত করার জন্য নজরদারি প্রক্রিয়া জোরদার প্রয়োজন। রোগী সারোগেসির জন্য আত্মীয়াকে আনছেন কি না সেটা যাচাই করা চিকিৎসকের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই বাণিজ্যিকরণ বন্ধের জন্য পাসপোর্টের ধাঁচে পুলিশের যাচাই পর্ব প্রয়োজন।’’
আরও পড়ুন: আইএনএক্স মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ চিদম্বরমকে
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, ‘‘এ রাজ্যে এখনও গর্ভ ভাড়া দেওয়া নিয়ে বিশেষ নিয়ম নেই। কেন্দ্রের আইন দেখেই রাজ্য পরিকল্পনা স্থির করবে। নিজস্ব বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করে কী ভাবে নজরদারি চালানো যায় ও আইন কার্যকর করা যায়, তা ভাবা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy