E-Paper

লোথাল বন্দর থেকে রফতানি হত তরলও, দাবি

লোথালের বন্দরের উত্তর-পশ্চিমাংশে নৌযান নোঙর করার এবং প্রয়োজনে সংস্কারের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা ছিল— এমনই জানাচ্ছেন শুভ। এই বন্দর মেসোপটেমিয়া ও আফ্রিকার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে সংযুক্ত ছিল এবং সরাসরি বাণিজ্যিক আদানপ্রদান ছিল।

অলখ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৫ ০৯:০৮
ড্রোন দিয়ে তোলা লোথালের চিত্র।

ড্রোন দিয়ে তোলা লোথালের চিত্র। ছবি: ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের সৌজন্যে।

প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে গড়ে ওঠা সিন্ধু সভ্যতার অন্তর্ভুক্ত গুজরাতের সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের লোথালের সঙ্গে পশ্চিম এশিয়ার সমসাময়িক সভ্যতার ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল, যা মূলত একটি বন্দরকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হতো। বাঙালি প্রত্নতত্ত্ববিদ শুভ মজুমদার বর্তমানে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের বরোদা অঞ্চলের অধিকর্তা। তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘‘সেই জাহাজগুলির মাধ্যমে রফতানি করা হত তরল পণ্যও।’’

এই তরল পদার্থ রাখা হত এক বিশেষ ধরনের মৃৎপাত্রে, যার উপর কালো প্রলেপ দেওয়া থাকত, একে ‘ব্ল্যাক স্লিপড জার’ বলা হয়। এর আগে হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো ও ধোলাবিরার মতো বৃহৎ নগরগুলি থেকে এই ধরনের মৃৎপাত্রের সন্ধান মিলেছিল, সম্প্রতি প্রথম বার লোথাল থেকেও তা পাওয়া গেল। তবে এই তরল দ্রব্যের প্রকৃতি নিয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা এখনও সম্ভব নয়।

পুরাতত্ত্ববিদ রূপেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই তরল পদার্থগুলির চরিত্র কী, আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। যেহেতু তরল পদার্থ তাই তা সংরক্ষণে কী পদ্ধতি ব্যবহার করা হত, তা-ও জানা প্রয়োজন। তাতে প্রাচীন ভারতের কারিগরী বিদ্যার ইতিহাসও সমৃদ্ধ হবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এ থেকে বোঝা যায়, সে কালে অর্থনীতি কতটা সমৃদ্ধ ছিল।’’

এখনও বন্দরটির কাঠামো, ব্যবহার-প্রণালী এবং বিস্তৃতির বিষয়ে আরও তথ্য পেতে শুভ-র নেতৃত্বে গবেষণা চলছে। শুভ আগে সর্বেক্ষণের কলকাতা ও মুম্বই অঞ্চলের অধিকর্তার দায়িত্বও পালন করেছেন। হরপ্পা সভ্যতা যে বাঙালি পুরাতাত্ত্বিক আবিষ্কার করেছিলেন, সেই রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বনগাঁর বাড়ির কাছেই ঘটনাচক্রে, চাঁদপাড়ায় বাড়ি শুভর।

সাম্প্রতিক উৎখননে পাওয়া বড় উনুন।

সাম্প্রতিক উৎখননে পাওয়া বড় উনুন। ছবি: ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের সৌজন্যে।

লোথালের বন্দরের উত্তর-পশ্চিমাংশে নৌযান নোঙর করার এবং প্রয়োজনে সংস্কারের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা ছিল— এমনই জানাচ্ছেন শুভ। এই বন্দর মেসোপটেমিয়া ও আফ্রিকার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে সংযুক্ত ছিল এবং সরাসরি বাণিজ্যিক আদানপ্রদান ছিল। তবে এই প্রাচীন জলযানের সঙ্গে পরবর্তী কালের পাল তোলা জাহাজের তুলনা করা ঠিক হবে না।

দাবি, লোথালের ওই বন্দরে অন্তত চার-পাঁচটি সে কালের পালতোলা জাহাজ এক সঙ্গে নোঙর করতে পারত। ‘ন্যাশনাল মেরিটাইম হেরিটেজ কমপ্লেক্স’-এর কিউরেটর স্বরূপ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘‘এই জাহাজগুলি পাল ব্যবহার করে চলত এবং তাতে মাস্তুল থাকত। এমনকি অন্তত একটি ক্ষেত্রে দু’টি মাস্তুল ছিল বলেও ধারণা করা হচ্ছে।’’

সাম্প্রতিক উৎখননে পাওয়া হরপ্পার সিল।

সাম্প্রতিক উৎখননে পাওয়া হরপ্পার সিল। ছবি: ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের সৌজন্যে।

গুজরাতের আমদাবাদ জেলার অন্তর্গত লোথালে পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম উৎখনন শুরু করে সর্বেক্ষণ। পরে ধাপে ধাপে আরও একাধিক বার এখানে উৎখনন কার্য সম্পাদিত হয়েছে। প্রায় পঞ্চাশ বছর পরে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ আবার এখানে গবেষণা শুরু করেছে।

শুভ জানিয়েছেন, সবরমতী নদীর উপনদী ভোগাভো নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল এই পোড়া ইটে নির্মিত বন্দর। এটি প্রাকৃতিক বন্দর নয়। সে কালের মানুষই তা কৃত্রিম ভাবে নির্মাণ করেছিলেন। শুভর নেতৃত্বাধীন পুরাতাত্ত্বিকদের দল কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র-সহ বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোগাভো নদীর তৎকালীন প্রবাহপথ চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। সেই প্রাচীন নদীখাতের কোন পথে হরপ্পা যুগের খাম্বাত উপসাগরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত ছিল, তা-ও নিবিড় ভাবে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তাঁদের ধারণা, এই জলপথ ধরেই সে কালে বাণিজ্য হত।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Indus Valley Civilization History West Asia

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy