পাক গুপ্তচরদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন হরিয়ানার ইউটিউবার জ্যোতি মলহোত্রা। সেই আবহে আবার ফিরে এল মাধুরী গুপ্তের স্মৃতি। মাধুরী ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের সচিব ছিলেন। পাকিস্তানের হয়ে চরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার হন। ২০১৮ সালের মে মাসে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। চার্জশিটে জানা গিয়েছিল, বয়সে ছোট এক পাক গুপ্তচরের প্রণয়ের ফাঁদে পা দিয়েই তথ্য পাচার করেছিলেন বিদেশ মন্ত্রকের এই কূটনীতিক।
মাধুরীকে নিয়ে সাউথ ব্লকের প্রথম সন্দেহ জন্মায় ২০১০ সালে। মুম্বই হামলার বছর দেড়েক পর ইসলামাবাদে ভারতীয় হাই কমিশনের কাছে প্রথম এক ‘চর’-এর খবর আসে। সে সময় ভারতের গোয়েন্দা বিভাগ (আইবি)-র প্রধান ছিলেন রাজীব মাথুর। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে সে খবর দেয় ইসলামাবাদের ভারতীয় হাই কমিশন। তার পরেই কমিশনের আতশকাচের নীচে আসেন ইসলামাবাদের ভারতীয় দূতাবাসে কর্মরত মাধুরী। ২০১০ সালের ২২ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। ২০১২ সালে জামিন পান তিনি। ওই বছরই তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি তথ্য গোপনীয়তা আইনে চার্জ গঠন হয়। ২০১৮ সালে দোষী সাব্যস্ত হন মাধুরী। যদিও সেই পথটা খুব সহজ ছিল না। মাধুরীকে প্রমাণ-সহ জালে ধরতে বেশ বেগ পেতে হয় নয়াদিল্লিকে।
ইসলামাবাদে ভারতীয় হাই কমিশন মাধুরীকে নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার পরে তদন্ত শুরু করেছিল আইবি। প্রাথমিক তদন্তের পরে তারা নিশ্চিত হয় যে, মাধুরী পাকিস্তানের ‘চর’। এর পরেই আইবি প্রধান মাথুর ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর প্রধান কেসি বর্মা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব জিকে পিল্লাইকে বিষয়টি জানান। কিন্তু তদন্তকারীরা কিছুতেই নিশ্চিত হতে পারছিলেন না যে, পাকিস্তানকে ঠিক কী কী তথ্য পাচার করেছেন মাধুরী। তাঁর সঙ্গে হাই কমিশনের আরও কেউ জড়িত রয়েছেন কি না, সেই নিয়েও সন্দেহ তৈরি হয়েছিল তদন্তকারীদের মনে। শেষ পর্যন্ত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি স্থির করে, আরও কিছু দিন মাধুরীর উপর নজর রাখা হোক। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ক্যারাভান’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর পরে মাধুরীকে বেশ কিছু ভুয়ো খবরের টোপ দেওয়া হয়। সেই খবর পাকিস্তানের কাছে পৌঁছোচ্ছে কি না, তাতে নজর রাখতে শুরু করেন তদন্তকারীরা।
সেই টোপ গিলেছিলেন মাধুরী। খবর পৌঁছে গিয়েছিল নির্দিষ্ট লক্ষ্যে। তার পরেই নিশ্চিত হন গোয়েন্দারা। মাধুরীকে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়। ২০১০ সালের শেষে ভুটানে সার্কের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। সেই নিয়ে আলোচনার জন্যই ডেকে পাঠানো হয় মাধুরীকে। ২০১০ সালের ২১ এপ্রিল দিল্লি পৌঁছোন তিনি। ২২ এপ্রিল যান বিদেশ মন্ত্রকের দফতরে। সেখানেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
২০১২ সালে মাধুরীর বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয় দিল্লির কোর্টে। ১৯২৩ সালের ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস’ আইনের দু’টি ধারা ভঙ্গের অভিযোগে চার্জ গঠন হয় তাঁর বিরুদ্ধে। তিহাড় জেলে ২১ মাস থাকার পরে জামিন পান তিনি। নিম্ন আদালতের রায়কে সরিয়ে দিল্লি হাই কোর্ট তাঁর বিরুদ্ধে আরও গুরুতর ধারা এনে চার্জ গঠন করে। তাতে সর্বোচ্চ ১৪ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
তদন্তকারী অফিসার পঙ্কজ সুদ ‘দ্য ক্যারাভান’-কে জানিয়েছিলেন, তদন্তে সহযোগিতা করেছিলেন মাধুরী। পাকিস্তানি গুপ্তচরের হাতে কী তথ্য তুলে দিয়েছিলেন, তা-ও জানিয়েছিলেন তিনি। চার্জশিটে জানানো হয়েছিল যে, পাকিস্তানি হ্যান্ডলারদের মধ্যে এক জনের সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল মাধুরীর। বয়সে ছোট সেই হ্যান্ডলারের নাম জামশেদ ওরফে জিম। প্রণয়ের ফাঁদ পেতে সেই জিমই তথ্য হাতিয়েছিলেন মাধুরীরে থেকে।
অন্য দিকে, ইউটিউবার জ্যোতি নজরে এসেছেন নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান হাই কমিশনের আধিকারিক এহসান-উর-রহিম ওরফে দানিশের সঙ্গে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠতা’-র জন্য। গুপ্তচরবৃত্তি সংক্রান্ত অভিযোগে চলতি সপ্তাহেই দানিশকে ভারতে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়েছে। অভিযোগ, দানিশের মাধ্যমেই পাক গুপ্তচর সংস্থার একাধিক আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল জ্যোতির। আর সেই সূত্রেই তিনি তথ্য পাচার করেছিলেন বলে অভিযোগ।