রাজা রামমোহন রায়কে ‘ব্রিটিশদের দালাল’ বলে মন্তব্য করেন মধ্যপ্রদেশের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী ইন্দর সিংহ পারমার। তাঁর এই মন্তব্য বিতর্ক শুরু হতেই দুঃখপ্রকাশ করলেন তিনি। চাইলেন ক্ষমাও। মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী জানান, ভুলবশত তিনি রামমোহনকে নিয়ে মন্তব্য করে ফেলেছিলেন। এ-ও জানান, সমাজ সংস্কারক রামমোহনকে ‘সম্মান’ করেন তিনি।
বিরসা মুন্ডার সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে বিজেপিশাসিত মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী দাবি করেন, রামমোহন ব্রিটিশদের নির্দেশে কাজ করেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, ইন্দর এ-ও বলেন, ঔপনিবেশিক শাসনকালে ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে জনগণের বিশ্বাস পরিবর্তনের জন্য যাঁরা কাজ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রামমোহন।
মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রীর ভাষণে উঠে এসেছিল রামমোহন-বিরোধী একের পর এক মন্তব্য। তিনি দাবি করেন, বাংলা এবং তার আশপাশে ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে ‘ধর্মান্তরণের চক্র’ চালাতেন রামমোহন। ইন্দরের কথায়, ‘‘ওই চক্র বন্ধ করার সাহস দেখিয়েছিলেন আদিবাসী নেতা বিরসা মুন্ডা।’’ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘ব্রিটিশেরা বেশ কয়েক জন ভারতীয়কে ভুয়ো সমাজ সংস্কারক হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন। রাজা রামমোহন রায় ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন, যিনি ব্রিটিশদের দালাল হিসাবে কাজ করতেন।’’
রামমোহনকে ‘ব্রিটিশদের দালাল’, ‘ভুয়ো সমাজ সংস্কারক’ বলে বিতর্কে জড়ান ইন্দর। সরব হয় বাংলার শাসকদল তৃণমূল। তাদের বক্তব্য, ‘‘বাংলার মনীষীদের প্রতি বিজেপির ঘৃণার সীমা নেই। তবে এটাই প্রথম বার নয়। ওরা বাংলাকে আগেও অপমান করেছে।’’ এমনকি, রামমোহন নিয়ে মন্তব্য করায় মধ্যপ্রদেশের রাজ্য বিজেপিও ‘দূরত্ব’ তৈরি করে ইন্দরের সঙ্গে। সে রাজ্যে দলের মুখপাত্র শিবম শুক্ল বলেন, ‘‘এটা মন্ত্রীর ব্যক্তিগত মন্তব্য। যাঁরা এ দেশের জন্য কাজ করেছেন, তাঁদের সকলকেই সম্মান করে বিজেপি।’’
আরও পড়ুন:
বিতর্কের মধ্যে রবিবার দুপুরে এক ভিডিয়োবার্তায় দুঃখপ্রকাশ করেন ইন্দর। তাঁর কথায়, ‘‘বিরসা মুন্ডার জীবন নিয়ে কথা বলার সময় আমি ভুল করে রাজা রামমোহন রায় সম্পর্কে মুখ ফস্কে ভুল কথা বলে ফেলেছি। এর জন্য গভীর ভাবে দুঃক্ষিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।’’ তাঁর মতে, রাজা রামমোহন রায় একজন ‘বিখ্যাত’ সমাজ সংস্কারক ছিলেন।
সমাজ এবং ধর্মীয় সংস্কারক হিসাবে বিশ্বজোড়া পরিচিতি রামমোহনের। বাঙালির উপর তো বটেই, গোটা দেশেই তাঁর প্রভাব অনস্বীকার্য। আধুনিক ভারতীয় নবজাগরণের জনক হিসাবে পরিচিত রামমোহন। সতীদাহ প্রথা বন্ধের নেপথ্যে কান্ডারি ছিলেন তিনি। তাঁকে ‘ব্রিটিশ দালাল’ বলায় শুধু তৃণমূল নয়, কংগ্রেসও সমালোচনা করে। ইন্দরের মন্তব্যকে ‘লজ্জাজনক’ বলে আক্রমণ শানান কংগ্রেসের মুখপাত্র ভূপেন্দ্র গুপ্ত। বিজেপি নেতা তথা মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রীর ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান নেই। ভূপেন্দ্রের প্রশ্ন, সতীদাহ প্রথা বিলোপ কি ‘ব্রিটিশ দালালি’র রূপ? সেই বিতর্কে ‘ডিগবাজি’ খেলেন মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী।