কমল নাথ।
শিবরাজ সিংহ চৌহানের হয়ে আইনজীবী মুকুল রোহতগি হাজির। হাজির মধ্যপ্রদেশের বিক্ষুব্ধ ১৬ জন কংগ্রেস বিধায়কের আইনজীবী মনিন্দর সিংহও। কিন্তু যাঁদের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ, সেই মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ বা বিধানসভার স্পিকারের কোনও আইনজীবীরই দেখা নেই।
কমল নাথ বা স্পিকারের বক্তব্য না শুনে সুপ্রিম কোর্ট কী ভাবে ফয়সালা করবে! অগত্যা বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় নোটিস জারি করলেন। ঠিক হল, বুধবার সকালে সাড়ে ১০টায় শুনানি হবে। সুকৌশলে আরও ২৪ ঘণ্টা সময় আদায় করে নিলেন কমল নাথ। ক্ষুব্ধ গলায় রোহতগি বলেই দিলেন, ‘‘অন্য পক্ষ ইচ্ছাকৃত ভাবে আদালতে হাজির হয়নি। এটা গণতন্ত্রের প্রহসন।’’
রাজ্যপালের নির্দেশ সত্ত্বেও সোমবার মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় আস্থাভোট না করে স্পিকার নর্মদা প্রসাদ প্রজাপতি ২৬ মার্চ পর্যন্ত বিধানসভা মুলতুবি করে দেন। কারণ হিসেবে বলা হয়, মোদী সরকারই করোনাভাইরাস থেকে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেছে। এর পরেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান দাবি তোলেন, স্পিকারকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে আস্থাভোট করার নির্দেশ দেওয়া হোক। আগামিকাল স্পিকারের হয়ে সওয়াল করতে কংগ্রেস দুঁদে আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে মাঠে নামাচ্ছে। তার আগে আজ শিবরাজের হয়ে রোহতগির অভিযোগ, কংগ্রেস সরকার আরও সময় কিনতে চাইছে।
এ দিকে মধ্যপ্রদেশে বিধানসভার অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যাওয়ায় দিল্লিতে সংসদের অধিবেশনেও ইতি টানতে পারছে না মোদী সরকার। কারণ তা হলে সুপ্রিম কোর্টে কমল নাথ বা স্পিকার বলবেন যে, বিজেপি সংসদ চালাচ্ছে না, কিন্তু ভোপালে বিধানসভার অধিবেশনে জোর দিচ্ছে। আজ কমল নাথ রাজ্যপাল লালজি টন্ডনকে চিঠি লিখে এই যুক্তিই দিয়েছেন। তাঁর প্রশ্ন, করোনাভাইরাস অতিমারি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় কী ভাবে চলবে বিধানসভার অধিবেশন? ১৬ জন কংগ্রেস বিধায়ককে বন্দি রাখার অভিযোগও তুলেছেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টে কংগ্রেস তাদের পিটিশনে জানিয়েছে, ১৬ জন কংগ্রেসের বিধায়ক বিজেপির হাতে বন্দি। কী ভাবে আস্থা ভোট হবে?
সোমবার আস্থা ভোট না হওয়ায় রাজ্যপাল ফের আস্থাভোটের নির্দেশ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী তা স্পিকারকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এর পরে স্পিকারও রাজ্যপালকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেন, কংগ্রেসের ১৬ জন বিধায়কের রাজ্যে ফেরা নিশ্চিত করুন। সুপ্রিম কোর্টেও কংগ্রেসের আর্জি, কেন্দ্র ও কর্নাটক সরকারকে ওই ১৬ জন বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হোক। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বের আশঙ্কা, বেঙ্গালুরু থেকে ফিরলেই তাঁদের কোয়রান্টিন করে রাখা হতে পারে।
জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই কংগ্রেসের ২২ জন মন্ত্রী-বিধায়ক বিজেপি শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁদের বেঙ্গালুরুর রিসর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁরা ইস্তফা দেন। আজ সিন্ধিয়ার অনুগামী ছয় বিধায়ক বেঙ্গালুরুতে সাংবাদিক সম্মেলন করে কমল নাথকে আক্রমণ করেছেন। কেউ কেউ কমল নাথকে ‘ছিন্দওয়াড়ার মুখ্যমন্ত্রী’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, তিনি শুধুই ছিন্দওয়াড়ার উন্নতির কথা ভাবেন। বাকিদের জন্য ১৫ মিনিটও সময় নেই। এই অবস্থায় টলমল গদিতে বসেই কমল নাথ রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের বিভিন্ন সরকারি পদে বসানোর কাজ শুরু করেছেন। কংগ্রেস নেত্রী শোভা ওঝাকে মহিলা কমিশনের প্রধান, জে পি ধানোপিয়াকে অনগ্রসর শ্রেণি কমিশনের প্রধানের পদে বসানো হয়েছে। শিবরাজের অভিযোগ, কমল নাথ জানেন, তাঁর সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। কিন্তু ‘চাপ ও লোভ’ দেখিয়ে সরকার বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করছেন। রাজ্যপালের কাছে এই সব নিয়োগ বাতিল করারও দাবি তুলেছেন তিনি। তাঁর যুক্তি, কমল নাথ সরকারের আয়ু আর কয়েক ঘণ্টা মাত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy