Advertisement
E-Paper

বিহারের ভোটার তালিকা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মহুয়া, বাংলার জন্যেও আর্জি

গত ২৪ জুন নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছিল, বিহারের ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ (এসআইআর) করা হবে। যাঁদের নাম ওই তালিকায় আছে, তাঁদেরও নির্দিষ্ট নথি দেখাতে হবে। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেছেন মহুয়া।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৫ ০৯:২২
সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র।

সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের যে নির্দেশ নির্বাচন কমিশন দিয়েছে, তার বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে গেলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। অবিলম্বে ওই নির্দেশ বাতিলের আবেদন জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে অনুরূপ নির্দেশ যাতে বাংলা বা অন্য কোনও রাজ্যের ক্ষেত্রে না দেওয়া হয়, সেই আবেদনও জানিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা হয়েছে। শনিবারই মামলা করেছে অসরকারি সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস’। এ ছাড়া, বিহারে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি আলাদা করে মামলার তোড়জোড় করছে।

গত ২৪ জুন নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছিল, বিহারের ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ (এসআইআর) করা হবে। যাঁদের নাম ওই তালিকায় আছে, তাঁদেরও নির্দিষ্ট নথি দেখাতে হবে। আধার কার্ড বা রেশন কার্ডের মতো সহজলভ্য নথি এ ক্ষেত্রে গণ্য হবে না। দেখাতে হবে জন্মের শংসাপত্র। চলতি বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এই নির্দেশের সমালোচনা শুরু হয়েছে বিরোধী মহলে। অভিযোগ, এ ভাবে ভোটার তালিকা সংশোধন করা হলে বহু মানুষ ভোটাধিকার হারাবেন, যা গণতন্ত্রের বিরোধী। মহুয়া তাঁর আবেদনে লিখেছেন, ‘‘কমিশনের এই নির্দেশ ভারতীয় সংবিধানের ১৪, ১৯(১), ২১, ৩২৫, ৩২৬ ধারা, জনপ্রতিনিধি আইন এবং ভোটার নিবন্ধনের নিয়ম লঙ্ঘন করছে। এই নির্দেশ যদি বাতিল না করা হয়, এর ফলে বহু মানুষ ভোটাধিকার হারাবেন। এটা গণতন্ত্রের অসম্মান এবং দেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কাঁটা।’’ অন্য কোনও রাজ্যে যাতে অনুরূপ নির্দেশ না দেওয়া হয়, সেই ব্যবস্থা করুক আদালত, আর্জি কৃষ্ণনগরের সাংসদের। মহুয়া আদালতে মামলার এই নথি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের এসআইআর-এর নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে এইমাত্র সুপ্রিম কোর্টে একটা মামলা করলাম। বাংলা-সহ অন্যান্য রাজ্যে যাতে এই পদক্ষেপ না করা হয়, তার জন্য স্থগিতাদেশও চেয়েছি।’’

মহুয়ার বক্তব্য, ‘‘যে সমস্ত ভোটারের নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে, বহু বার যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁদেরই আবার নতুন করে যোগ্যতা প্রমাণ করতে বলা হচ্ছে! নির্বাচন কমিশনের এই ধরনের পদক্ষেপ দেশে প্রথম। কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, ভোটারদের নাম ভোটার তালিকায় তখনই যোগ করা হবে, যখন তাঁরা নাগরিকত্বের নথি জমা দেবেন। তাঁদের বাবা-মায়ের নাগরিকত্বেরও প্রমাণ দিতে হবে। না দিতে পারলে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ে যাবে! এটা সংবিধানের ৩২৬ ধারার বিরোধী।’’

অসরকারি সংস্থার তরফে যে মামলাটি করা হয়েছে, তাতেও অনুরূপ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মামলাকারী। বলা হয়েছে, কমিশনের এই নির্দেশের ফলে বাদ পড়তে পারেন তিন কোটি ভোটার। বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিক, দলিত ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে। সংস্থার আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের অভিযোগ, এত দিন রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল যোগ্য ভোটারদের বেছে তালিকায় নাম তোলা। এখন ভোটার হিসেবে যোগ্যতা প্রমাণের দায় আমজনতার কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে সাধারণ গরিব, প্রান্তিক মানুষ বেশি সমস্যার মুখে পড়বেন। পূর্ণবয়স্ক মানুষ ভোটাধিকার হারাবেন।

বিহারের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, ২০০৩-এর ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম ছিল, তাঁদের সমস্যা নেই। কিন্তু বাকিদের মধ্যে যাঁদের জন্ম ১৯৮৭ সালের আগে, তাঁদের জন্মের প্রমাণপত্র দিতে হবে। তাঁরা গত লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়ে থাকলেও ছাড় নেই। ১৯৮৭ থেকে ২০০৪-এর মধ্যে যাঁরা জন্মেছেন, তাঁদের নিজেদের এবং বাবা-মায়ের মধ্যে যে কোনও এক জনের জন্মের প্রমাণপত্র দিতে হবে। ২০০৪-এর পরে জন্ম হলে নিজের ও বাবা-মায়ের দু’জনেরই জন্মের প্রমাণপত্র দিতে হবে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার বলেছেন, “সকলের সহযোগিতায় ও পুরো দক্ষতার সঙ্গে বিহারের ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে।” কমিশন সূত্রের খবর, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিহারের ভোটার তালিকায় থাকা প্রায় ৭.৯০ কোটি মানুষের মধ্যে ৯৩.৫৭ শতাংশ মানুষের মধ্যে ফর্ম বিলি করা হয়েছে। হিন্দির বদলে শুধু ইংরেজিতে ফর্ম বিলির বিরুদ্ধেও বিরোধীরা সরব হয়েছেন। তবে কমিশনের দাবি, প্রায় ১৩.১৯ শতাংশ ভোটারের ফর্ম জমা পড়েছে।

Mahua Moitra Bihar Assembly Election 2025 Election Commission
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy